কিছু নিত্যপণ্য আমদানিতে কমছে শুল্ক
রোজায় ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের মতো পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক কমানোর কথা বিবেচনা করছে সরকার।
আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ, বাণিজ্য, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে জরুরি বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্ত নেয়।
গতকাল রোববার এই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
দেশে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সবার নাগালে রাখার বিষয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে গত কয়েক বছরের লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) ডেটা থেকে দেখা যায়, এ বছর অত্যাবশ্যক পণ্যের জন্য খোলা এলসির সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
বৈঠকে গত বছরের ঈদের তিন মাস আগের এলসির সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, এ বছর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য আরও বেশি এলসি খোলা হয়েছে।
এর থেকে আরও জানা যায়, এলসি খুলতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কাজেই অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানিকারকরা জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে এটাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না।
তবে, বন্দর থেকে পণ্য খালাসে কিছু সমস্যা রয়েছে এবং প্রতিটি চালানের জন্য দ্রুত শুল্ক ছাড়পত্র নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
বৈঠকে ভোজ্যতেল, খেজুর, চিনি, ছোলা ও মসুর ডালের মজুদ পর্যালোচনা করে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে অবগত কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কোনো প্রকার কারসাজি বা মজুদের মতো কোনো কারণে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, 'কেউ যদি বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, তাহলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো। কাউকে ছাড় দেবো না।'
তিনি জানান, রমজানের জন্য পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহ রয়েছে।
তিনি বলেন, 'কিছু মহল পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। যেখানেই বাজার অর্থনীতি আছে সেখানেই এই মহল সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে।'
নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখনই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'না, এখনই না।'
বৈঠকে প্রয়োজন মনে করলে ডিম, আলু, চাল ও খেজুর আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হবে যেন যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিত্যপণ্য উৎপাদন করে, সেখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।
বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পণ্যবোঝাই কোনো ট্রাক যেন রাস্তায় কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন না হয় এবং মহাসড়কে চাঁদাবাজির শিকার না হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হবে।
রমজানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ঢাকার ২০টিরও বেশি পয়েন্টে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ বিক্রি করবে। রাজধানীর বাইরেও এই কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল ও খেজুর আমদানির জন্য ন্যূনতম মার্জিনসহ এলসি খোলার বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করেছে।
পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য সাতটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোটা রাখার জন্য প্রতিবেশী দেশকে অনুরোধ করতে ভারত সফরের পরিকল্পনা করছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
এ ছাড়া, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে চাল, চিনি, ভোজ্যতেল ও মসুরের ডাল বিক্রি অব্যাহত রাখবে।
রোজায় ঢাকার ভেতরে ছোলা ও খেজুর বিক্রি করবে টিসিবি।
Comments