একতরফা প্রেমের বাস্তবতা

ছবি: সংগৃহীত

'একতারফা পেয়ার কি তাকাত হি কুছ অউর হোতি হ্যায়!' আপনি যদি বলিউডের, বিশেষ করে শাহরুখ খানের সিনেমার পোকা হন– তবে 'অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল' মুভির এই সংলাপখানা নিশ্চয়ই চেনা আছে। সাহিত্য-সিনেমায় এমনি করেই আসলে বহুভাবে বহুবার একপাক্ষিক প্রেমকে রোমান্টিকভাবে উপস্থাপন করে এর ভালো দিকটাই বেশিরভাগ দেখানো হয়। 

আবার কখনো কখনো এই প্রেমের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তীব্র অনুভূতিগুলোর চূড়ান্ত মাত্রা দেখাতে গিয়ে করে বসা হয় অতিরঞ্জন। কিন্তু একতরফা প্রেম বাস্তবে কেমন? এর গ্রহণযোগ্যতা কিংবা এই অনুভূতি নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়া কতটা কঠিন? কতদিনই বা ধরে রাখা যায় কোনো ধরনের বিনিময়বিহীন, শুধুই ভালোবেসে যাওয়ার এই আখ্যান? আর এ ধরনের অনুভূতির বদলে মানসিক যে কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়, সেটি মোকাবিলা করারই বা পদ্ধতি কী?

মেনে নিন

কুবলার রস পদ্ধতি অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের শোকের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সবশেষ ধাপ কিন্তু মেনে নেওয়া। একতরফা প্রেমে যখন ব্যর্থতা আসবে, তখন তা মেনে নেওয়াই হবে একজন বিচক্ষণ ব্যক্তির কাজ। শুধু শুধু জেদ আঁকড়ে ধরে বসে থেকে, নিজেকে কষ্ট দিয়ে আর অন্যকে জ্বালাতন করে শেষমেশ ভালো কিছু হয় না। 

যদিও সিনেমার পর্দায় বহুবার প্রস্তাব দেওয়ার পর নায়ক-নায়িকা (বেশিরভাগ সময় নায়িকা) রাজি হয়, সেই জোর-জবরদস্তির রাজি বাস্তব জীবনে খুব কমই আসে। এলেও তা খুব একটা কাজের হয় না। হৃদয়ঘটিত বিষয়ে জোরপূর্বক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা না করাই শ্রেয়। তাই 'সহে না যাতনা' বলে যতই মনে বাজুক চিরবিরহের সুর, যাতনাকে মেনে নিয়েই ভাবতে হবে অন্য কোনো গল্পের কথা। 

অন্যভাবে চাহিদা পূরণ

একবার যখন মনকে বুঝিয়ে ফেলা যাবে যে অপরপক্ষ এ বিষয়ে অসম্মত এবং আপনার আবেগীয় বা অন্য কোনো ধরনের চাহিদা পূরণে সক্ষম নয়, তখন নিজের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে আনার পালা। এবং সেক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলতে হবে যে অপরপক্ষের প্রতি এই তীব্র অনুভূতির উৎস কী, ঠিক কোন চাহিদা বা ইচ্ছাপূরণের উদ্দেশ্যে মনে এ অনুভূতি জন্ম নিয়েছে ইত্যাদি। 
প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেলে সেসব চাহিদা অন্যভাবে, অন্য স্থান, অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে পূরণের চেষ্টা করতে হবে। তবে অবশ্যই কোনোক্ষেত্রে সৌজন্যের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া যাবে না। মনস্তাত্ত্বিক জ্যোতি সামরা বলেন, 'সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে এই একতরফা সম্পর্কের ওপর দায় কমিয়ে আনা সম্ভব।'

নিজেকে সম্মান করা

'দ্য পার্কস অব বিয়িং অ্যা ওয়ালফ্লাওয়ার' সিনেমার একটি সংলাপ আছে, যার অর্থ অনেকটা এমন– 'আমরা সেই ভালোবাসাই গ্রহণ করি, নিজেকে যার যোগ্য বলে মনে করি'। একতরফা প্রেমের ক্ষেত্রেও বিষয়টা এমন। 'এর থেকে ভালো কিছু হওয়া সম্ভব নয়', 'এর থেকে তীব্র অনুভূতি কারও জন্য আসবে না', 'এই প্রেমই শেষ প্রেম' ইত্যাদি বহু ভ্রান্ত ও উদভ্রান্ত ভাবনায় তখন নিজেকে মাকড়সা জালে জড়িয়ে ফেলে ব্যক্তি নিজেই। তা থেকে ছোটা সম্ভব, তবু ছোটার চেষ্টা করতে দেরি হয়ে যায় অনেক সময়। একতরফা প্রেমের প্রতিনিধিত্ব করে দেবদাসরা মরে যায়, সহজাত সুখে থাকে অন্য কেউ। 

কল্পনা নয়, থাকুন বাস্তবতায়

স্বপ্নালু ভাবনায় চোখে স্বপ্ন আঁকতে, প্রতীক্ষায় বুক বাঁধতে কখনো কখনো বেশ লাগে। কিন্তু এই খানিকটা বেশ লাগার বিপরীতে আছে রাতভর হাহাকার, দিনের আলোয় কোনো কাজে মন না বসা এবং ক্রমেই নিজেকে এক অতল গহ্বরে হারিয়ে ফেলার যাত্রা। একপাক্ষিক প্রেম এভাবেই কুরে কুরে নিঃশেষ করে দিতে পারে। তাই কল্পনার সীমারেখা পেরিয়ে এসে বাস্তব চিত্রটা বুঝতে হবে। নিজেকে ঠেলেঠুলে হলেও প্রস্তুত করতে হবে পরবর্তী জীবনের জন্য। 

নতুন শুরু

এগিয়ে যাওয়া ছাড়া জীবনে আর কিছু নেই। স্মৃতি শুধুই জ্বালায়-পোড়ায়, এরচে বরং বর্তমানে বাঁচাই হোক পথচলার মূলমন্ত্র। প্রেমে পড়া, অপরপক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়া এবং মন ভেঙে যাওয়ার এই অতি চেনা চক্রে বহুবার বহু মানুষ পড়েছে। উঠেও এসেছে। এটি জীবনের স্বাভাবিক গতি বৈ আর কিছু নয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর এই শোক কাটিয়ে উঠে নতুনভাবে শুরু করতে হবে।

তাই, কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ বাণীর আশ্রয়ে মনকে শক্ত করুন– 'আঁকড়ে থেকো না কিছু। যে যাবার তাকে যেতে দাও, ফেরার সে তো ফিরবেই।' হলুদাভ হাঁসের মতো একদিন আপনার কলমিলতার ফ্ল্যাটেও কড়া নাড়বে প্রেম। একপাক্ষিক দুঃখের নয়, দ্বিপাক্ষিক সুখ ও স্বস্তির। 

তথ্যসূত্র: সাইকোলজিটুডে, সিএনএন
 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

2h ago