লঙ্কাধাক্কায় মৃতপ্রায় ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্বপ্ন
ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে মাঠে নেমেছিল জস বাটলারের দল। তবে ব্যর্থ হলো আরও একবার। বেঙ্গালুরুতে লঙ্কানদের দেওয়া ধাক্কায় এখন তাদের উঠে আসার পথ হয়ে গেছে প্রায় বন্ধ। ১৫৬ রানের সম্বল নিয়ে ২৬ ওভারের বেশি লড়াই করতে পারেনি ইংলিশরা। পাথুম নিসাঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমার ফিফটিতে শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৮ উইকেটে।
১৫৬ রানের মামুলি পুঁজি নিয়ে লড়াই করতে নিজের সঙ্গে মানসিক লড়াইটাও চালিয়ে নিতে হয়। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট নিয়ে হয়তো লড়াইয়ের একটু রসদ পেয়েছিল। ডেভিড উইলির বলে লিডিং এজে কুশল পেরেরা আউট হয়ে যান ৪ রান করেই। নড়বড়ে ইনিংসে কুশল মেন্ডিসও আউট হয়ে যান ১১ রানে। ২৩ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে ফেলা শ্রীলঙ্কা এরপর বাড়তি বিপদ তাড়িয়ে দেয় তাদের দুই ইনফর্ম ব্যাটারে। পাথুম নিসাঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমা মিলে নিরাপদে খেলতে থাকেন, সঙ্গে আগ্রাসীও হন সুযোগ বুঝে। পাওয়ারপ্লেতে আর কোন উইকেট না হারিয়ে ৫৬ রান আনে লঙ্কানরা।
আদিল রশিদ ও মার্ক উডকে দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যায় ইংল্যান্ড। আগ্রাসী ফিল্ডসেটে উড বাউন্সার আক্রমণ চালিয়ে গেছেন। কিছুতেই কিছু হয়নি যদিও। ১৭তম ওভারেই শতরান পেরিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। লক্ষ্য পেরিয়ে যাওয়া তখন সময়ের ব্যাপার ছিল শুধু। নিসাঙ্কা ফিফটি পেয়ে যান ৫৪ বলে। যা তার টানা চতুর্থ ফিফটি। সামারাবিক্রমাও পরে তার ফিফটি পূর্ণ করে ফেলেন ৪৪ বলেই। শেষমেশ দুজনেই অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ছেন যখন, ১৪৬ বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত তাদের। ৭ চার ও ২ ছক্কার মারে ৮৩ বলে ৭৭ রানের ইনিংস গড়েন নিসাঙ্কা। আর ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৫৪ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলে থাকেন অপরাজিত।
বেঙ্গালুরুর চিন্নস্বামী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে ইংল্যান্ডের শুরু যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তার ছিটেফোঁটাও ঘটেনি। ৬ ওভারেই ৪৪ রান তুলে ফেলে ইংল্যান্ড। এরপর মাথিশা পাথিরানার চোটে সুযোগ পাওয়া এঞ্জেলো ম্যাথিউজ এসে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন। মালান কিপারে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ৬ চারে ২৫ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলে। বেয়ারস্টো-রুটের ব্যাটে ইংল্যান্ড এগিয়ে যাবে, কিন্তু ধাক্কা খেয়ে যায় ইংলিশরা জো রুট রানআউট হয়ে গেলে। ভুল বোঝাবুঝিতে এক অঙ্কেই ফিরে যান রুট। ৫৭ রানেই দ্বিতীয় উইকেট হারানো ইংল্যান্ড কী তখনও জানত, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে পাহাড়সম ধাক্কা!
বেয়ারস্টো ইনিংসের প্রথম বলেই দিলশান মাদুশাঙ্কার বলে এলবিডাব্লিউ ছিলেন। শ্রীলঙ্কা রিভিউ নেয়নি বলে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইনিংসটা ৩০ রানের বড় করতে পারেননি। ৩১ বলে ৩০ রান করে রাজিথার বলে মিডঅনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বেয়ারস্টো। ৬ বলে ৮ রান এনে জস বাটলার কিপারে ক্যাচ দিয়ে চলে যান কিছুক্ষণ পরই। বাটলার যেতে না যেতেই লিয়াম লিভিংস্টোনেরও একই হাল! একাদশে ফেরা লিভিংস্টোনকে এলবিডাব্লিউ বানিয়ে ১ রানেই ফিরিয়ে দেন লাহিরু কুমারা। ৮৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড।
খাদের কিনারা থেকে তোলার জন্য তাদের ভরসা ও উপযুক্ত যে লোক, বেন স্টোকস তখনও একপাশে দাঁড়িয়ে! মঈন আলীর সঙ্গ পেয়ে কিছুক্ষণ দেখেশুনে খেলে ধাক্কা সামলান তারা। স্টোকস সুযোগ বুঝে নিজের জায়গা মতো বল পেলেই আক্রমণাত্মক হয়েছেন। এভাবে মাদুশাঙ্কা-ধনাঞ্জয়াদের বলে কয়েকটি চার বের করেন। কিন্তু ওদিকে মঈন আলীর সঙ্গ হারিয়ে ফেলেন দলের রান ১২৫ হতে না হতেই!
আবারও ম্যাথিউজের শিকার। পয়েন্টের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে মঈন ফিরে যান ১৫ রান করেই। তার ফেরার কিছুক্ষণ পর ক্রিস ওকসেরও গন্তব্য হয়ে যায় ড্রেসিং রুম। রাজিথার বলে পয়েন্টে নিচু হয়ে আসা ক্যাচ দুর্দান্তভাবে লুফে নেন সামারাবিক্রমা।
স্টোকসেরও ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে যেতে বেশিক্ষণ লাগেনি। ৭৩ বলে ৬ চারে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে যখন ফিরছেন, ইংল্যান্ডের ১৩৭ রানে নেই আট উইকেট। আদিল রশিদ ও মার্ক উডরাও এক অঙ্কেই ফিরে গেছেন। একপাশে অপরাজিত থাকা ডেভিড উইলি করেন ১৪ রান। ১৫৬ রানেই অলআউট হয়ে গেলে ইংল্যান্ডের লড়াইয়ের পুঁজিও হাতে আসেনি।
দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬ তম ওভারেই হেরে গিয়ে ইংল্যান্ড খুইয়েছে দুই পয়েন্ট। ৫ ম্যাচে দুই পয়েন্ট নিয়ে তাদের বিশ্বকাপ স্বপ্নও এখন তাই মৃতপ্রায়। শ্রীলঙ্কা সে দৌড়ে টিকে আছে ৫ ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে।
Comments