৮০টি বিড়াল দত্তক দিতে চান জাহানারা, মানতে হবে যে সব শর্ত

প্রথম ছবিটি নাদিয়া দ্য ক্যাট কমিউনিটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে সংগৃহীত। দ্বিতীয় ছবিটি তুলেছেন সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

শিশু বয়সেই বিড়ালপ্রেম তৈরি হয় জাহানারা খানম মুক্তার। বাড়িতে সব সময় বিড়ালের ছোটাছুটি দেখেছেন। তবে, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের আপত্তি থাকায় বিড়াল পোষা বন্ধ রাখেন তিনি। 

কয়েক বছর আগে ছোট মেয়ের আবদারে আবারও বিড়াল পালতে শুরু করেন মুক্তা। রাস্তায় আহত বিড়াল দেখলেই মন কাঁদে তার। নিয়ে আসেন বাড়িতে। এভাবেই তার বাড়িতে বিড়ালের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০।

গত ১৭ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিড়ালপ্রেমীদের একটি গ্রুপে 'এক নারী ৮০টি বিড়াল দত্তক দিতে চান' উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দেন নাদিয়া নামে বিড়ালপ্রেমী আরেক নারী। স্ট্যাটাসটি রীতিমতো ভাইরাল হয়। খোঁজ করতে গিয়ে মেলে ৮০ বিড়ালের মায়ের ঠিকানা।

নারায়ণগঞ্জ নগরীর পশ্চিম মাসদাইর এলাকায় বহুতল একটি ভবনের সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন জাহানারা খানম মুক্তা। এলাকায় 'বিড়ালের মা' বলে পরিচিত এই বিড়ালপ্রেমী। মুখোমুখি তিন কক্ষের আরেকটি ফ্ল্যাটের পুরোটাই রেখেছেন বিড়ালদের জন্য। পুরো ফ্ল্যাটজুড়ে নিজমনে ঘুরে বেড়ায় বিড়ালগুলো। বিশ্রাম ও খাবারের তদারকি নিজ হাতে করেন বলে জানান মুক্তা।

ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

বিড়ালপ্রেমী এই নারী বলেন, 'আমাদের পুরো পরিবার ছিল এনিমেল লাভার। তাই ছোটবেলা থেকেই কুকুর-বিড়ালের প্রতি আলাদা টান ছিল। বাড়িতে ৮-১০টা বিড়াল ছিল। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তেমন পছন্দ না করায় বিয়ের পর এই বাড়িতে আর বিড়াল পুষিনি। একদিন ছোট মেয়ে বায়না ধরে বিড়াল পোষার। পরে রাস্তা দুর্ঘটনায় আহত একটি বিড়াল বাড়িতে এনে সারিয়ে তুলে পোষা শুরু করি। এভাবেই একে একে বাড়তে থাকে বিড়ালের সংখ্যা।'

তিনি যে এলাকায় থাকেন ওই এলাকার অন্তত পাঁচটি স্থানে ভবঘুরে বিড়ালদের জন্য নিজ খরচে খাবার দেন বলে জানান। আশেপাশের অন্তত ৩৫টি বিড়াল নিয়মিত তার হাতের খাবার খায়।

'আমার কাছে শ্রেষ্ঠ মিউজিক বিড়ালের বাচ্চার মিঁউ শব্দটা। আমি কখনই ওদের খাবার না দিয়ে নিজে খাবার খাই না। ওদের কেউ অসুস্থ হলে নিজ হাতে সেবা করি। নিজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি প্রয়োজনে চিকিৎসকেরও নিয়মিত পরামর্শ নেই', বলেন মুক্তা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন জাহানারা বেগম মুক্তা। এক সময় শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন তিনি। স্বামী থাকতেন প্রবাসে, একা হাতে সংসার সামলাতে গিয়ে ওই পেশা ছাড়েন।

গত আগস্টে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যান মুক্তার ইতালি প্রবাসী স্বামী আমজাদ তালুকদার। মুক্তার দুই মেয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মিফতি মাইক্রোসফটে চাকরি করেন এবং ছোট মেয়ে আফিয়া জাহিন মাহিয়া কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর কন্যাদের সঙ্গে আমেরিকায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুক্তা। তবে বিদেশে যাওয়ার আগে সন্তান সমতুল্য বিড়ালগুলোর একটা ব্যবস্থা করে যেতে চান। বিড়ালপ্রেমীদের কাছে দত্তক দিতে চান তিনি।

শিশু বয়স থেকেই বিড়াল ভালোবাসেন জাহানারা খানম মুক্তা। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

দত্তক দেওয়ার পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে কয়েক শ ফোন রিসিভ করতে হয়েছে মুক্তাকে। দ্য ডেইলি স্টার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময়ও কয়েকটি ফোন রিসিভ করতে দেখা যায় তাকে।

অনেকেই বিড়াল দত্তক নিতে চান বলে ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। তবে বিড়াল দত্তক দেওয়ার ক্ষেত্রে যিনি পালন করবেন তার এবং তার বাড়ির ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তারপর বিড়াল দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তার ৮০টি বিড়ালের মধ্যে ৪০টি বিড়াল বিভিন্ন জন এসে নিয়ে গেছেন বলে জানান মুক্তা। তবে বিড়ালগুলো সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর নেবেন বলেও জানান তিনি। 

মুক্তা বলেন, 'আমার পরিচিত একজন ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টটি ভাইরাল হলে বহু মানুষ আমাকে ফোন দিয়ে বিড়াল অ্যাডপ্ট করতে চান বলে জানান। তবে সকলকে আমি দিচ্ছি না। বিড়ালগুলো যাতে ভালো থাকে, ওদের যত্ন যারা নেবেন তাদের বাছাই করে আমি বিড়ালগুলো দিচ্ছি। কেন না আমার অতীত অভিজ্ঞতা ভালো না। একবার একজনকে ৫টা বিড়াল দিয়েছিলাম কিন্তু কয়েকদিন পরই জানান বিড়ালগুলো তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। এরপর থেকে আর কাউকে দেইনি।'

তিনি বলেন, 'আমি তো আর অভাবে দিচ্ছি না। আমার অবর্তমানে কেয়ারটেকাররা যদি ওদের ঠিকভাবে যত্ন না নেয় সেই কারণে যারা আসলেই বিড়ালপ্রেমী এবং নিয়মিত যত্ন নেবেন এমন মানুষকেই দিচ্ছি। কেউ যদি সেভাবে যত্ন না নেন তাহলে আমি পুনরায় ফিরিয়ে আনব।'

বিড়াল পোষার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে মুক্তা বলেন, 'বিড়াল পোষার কারণে মানুষের প্রশংসা যেমন পেয়েছি, তেমনি অনেকের কটু কথাও শুনতে হয়েছে। তবুও দমে যাইনি।' এ ক্ষেত্রে স্বামী যেমন তাকে সাহস দিয়েছেন, সহযোগিতা করেছেন বাড়ির মালিকও।

'নানা জন নানা কথা বলেছেন। সেসব নিয়ে মন খারাপ হয়ে কিন্তু আমি তো কারও ক্ষতি করছি না। এমনকি আমার বিড়ালগুলোও বাইরে গিয়ে কারও ক্ষতি করে না। কারণ আমি ঘরে ওদের জন্য চারদিকে প্রটেকশনের ব্যবস্থা রেখেছি।'

বিড়ালপ্রেমীদের উদ্দেশ্যে মুক্তা বলেন, 'যারা বিড়াল পুষতে চান কিন্তু নানা কারণে পারেন না তাদের বলব, যারা বিড়াল পোষেন তাদের সহযোগিতা করতে। রাস্তাঘাটে বিড়াল-কুকুর খাবারের অভাবে কষ্ট পেলে অন্তত তাদের খেতে দেওয়া উচিত।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

3h ago