কলারোয়ায় চিনিগুঁড়া ধানে তৈরি দুর্গাপ্রতিমায় মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

দুর্গাপূজা শুরু হবে আগামীকাল শুক্রবার থেকে। তার আগেই ধান দিয়ে তৈরি শৈল্পিক কারুকাজে নির্মিত প্রতিমা দেখতে ভিড় করছে অনেকে। 
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একশ কেজি চিনিগুঁড়া ধান ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে তৈরি ব্যক্তিক্রমী দুর্গাপ্রতিমা নজর কেড়েছে এলাকাবাসীর। ছবি: স্টার

একশ কেজি চিনিগুঁড়া ধান ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে তৈরি ব্যক্তিক্রমী দুর্গাপ্রতিমা নজর কেড়েছে এলাকাবাসীর। দৃষ্টিনন্দন এই প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে সাতক্ষীরায় কলারোয়ায়।  

দুর্গাপূজা শুরু হবে আগামীকাল ২০ অক্টোবর থেকে। তার আগেই ধান দিয়ে তৈরি শৈল্পিক কারুকাজে নির্মিত প্রতিমা দেখতে ভিড় করছে অনেকে। 

কলারোয়া উপজেলার পৌর সদরের মুরারিকাটি উত্তর পালপাড়ায় পূজা মণ্ডপটি অবস্থিত। আয়োজকদের ধারণা লাখখানেক মানুষ এবার তাদের প্রতিমা দেখতে যাবেন।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাতটি উপজেলার এবার ৬৬৫টি প্রতিমা নির্মিত হয়েছে। এরমধ্যে কলারোয়া উপজেলায় নির্মিত হয়েছে ৪৮টি প্রতিমা। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য জেনারেটর রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কলারোয়া উপজেলা পৌর সদরের মুরারিকাঠি উত্তর পালপাড়া শারদীয় দুর্গা মণ্ডপে মঙ্গলবার প্রতিমা তৈরি কাজ শেষ করে রং দেওয়া হয়েছে। সোনালি রঙের চিনিগুঁড়া ধানের শৈল্পিক কারুকাজে নির্মাণ করা প্রতিমাগুলো দেখে মনে হচ্ছে, সোনা দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। পুঁথির মতো একটা করে ধান দিয়ে গেঁথে তৈরি করা হয়েছে। যা অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। প্রতিমার শৈল্পিক অপরূপ সৌন্দর্য না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। 

প্রতিমা তৈরির কারিগর শিল্পী প্রহ্লাদ বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '১৮টি প্রতিমা পূর্ণাঙ্গভাবে তৈরি করতে সম্পূর্ণ একমাস সময় লেগেছে। শুরু করেছিলেন সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখে। মোটামুটি শেষ হয়েছে অক্টোবরের মাসের ১ তারিখে। তবে রং তুলির কাজ চলবে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত। এই মণ্ডপে দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, জয়া, বিজয়া, অসুর, মহিষাসুরসহ ১৮টি প্রতিমা তৈরির জন্য প্রথমে কাঠ, বাঁশ, পাট, মাটি দিয়ে কাঠামো করা হয়েছে। নকশী পাড় বসানোর পর কাঠামোর ওপর একটি একটি করে বসানো হয়েছে চিনিগুঁড়া ধান। কিছু কিছু অংশে সোনালি রং স্প্রে করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিমাগুলোর সৌন্দর্য মানুষকে আকর্ষণ করছে।'
 
মুরারিকাটি পালপাড়া পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জীবন কুমার ঘোষ জানান, ১৯৮৩ সাল থেকে তারা মুরারীকাটি পালপাড়া দুর্গাপূজা করে আসছেন। এবার প্রতিমাগুলো অন্যবারের চেয়ে ব্যতিক্রম ও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করেছেন। শুরু থেকে চিরাচরিত নিয়মের বাইরে একটি ভিন্ন আঙ্গিকে তারা প্রতিমা নির্মাণ করার চেষ্টা করেন। যেত প্রতিমা উপভোগ্য ও আকর্ষণীয় হয় ভক্ত ও দর্শনার্থীদের কাছে। প্রতিদিন এ প্রতিমা দেখতে অনেকেই আসছেন। 

তিনি বলেন, 'শিল্পীর সঙ্গে প্রতিমা তৈরির জন্য এক লাখ টাকা চুক্তি ছিল। কিন্তু খরচ হয়েছে লাখ টাকারও বেশি। এ ছাড়া পূজা ও উৎসব বাবদ ব্যয় হবে আরও এক লাখ ২০ হাজার টাকা।' 

পালপাড়ার কাজল পাল জানান, তারা এবার প্রতিমা তৈরি করছেন চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে। প্রতিমা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন। একটু খরচ বেশি হলেও প্রতিমা যে কাউকে আকর্ষণ করবে। 

শিক্ষক ঝর্ণা রাণী পাল বলেন, 'মনে হচ্ছে যেন জীবিত প্রতিমা। অপূর্ব এসব প্রতিমা যে কারও ভালো লাগবে, মুগ্ধ করবে।' 

গতকাল সকালে পালপাড়া পূজামণ্ডপে কলারোয়া গালর্স পাইলট হাইস্কুলের ফারিয়া সিদ্দিক, কলারোয়া আমানুল্লাহ ডিগ্রি কলেজের আজমল হোসন ও দেবাশীষ দাসের সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের। তারা সবাই জানান ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমা দেখতে এসেছেন। প্রতিমা দেখে বিস্মিত, বিমোহিত বলেও জানান তারা।

সাতক্ষীরা জেলা পূজা উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক  বিশ্বনাথ ঘোষ জানান, কলারোয়ার মুরারীকাটি পালপাড়ার চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে তৈরি  প্রতিমাটির ভিন্নতা রয়েছে। প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাঁস, বেত, সোলাসহ নানা জাতীয় জিনিস দিয়ে আকর্ষীয় প্রতিমা করা হয়। জেলায় ৬৬৫টি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। 

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, 'শারদীয় দুর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠুভাবে উদযাপিত হয় এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  মণ্ডপগুলোতে আনসার, গ্রামপুলিশসহ পুলিশের একাধিক দল টহলে থাকবে।'
 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

6h ago