নির্বাচনের আগে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার হচ্ছে না: গভর্নর

ডলারের দাম

দেশে ডলারের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলার পাশাপাশি কমছে রিজার্ভের পরিমাণ। তবে এই পরিস্থিতি সহসাই কাটছে না। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

গতকাল বুধবার তিনি এ মন্তব্য করেন।

ডলারের দাম কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থা চালু করতে দেরি করা হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আশঙ্কা, স্বাধীন-বাজারভিত্তিক ব্যবস্থা দেশে মূল্যস্ফীতির চাপকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সুতরাং, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলারের প্রবাহকে প্রয়োজনীয় উত্সাহ দেওয়ার মাধ্যমে দেশে রপ্তানি আয় বাড়াতে তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানান।

গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গভর্নরের সভাপতিত্বে সভায় ১৩ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে আর্থিক খাতের অবস্থা, বিদেশি মুদ্রার বাজার, নতুন সুদের হার নির্ধারণের ফর্মুলা, মুদ্রা বিনিময় হার, মূল্যস্ফীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া নীতিগত ব্যবস্থা, পেমেন্টের ভারসাম্য, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও খেলাপি ঋণ (এনপিএল) নিয়ে আলোচনা হয়।

ব্যাংক কর্মকর্তারা গভর্নরকে অনুরোধ করে বলেন যে নির্ধারিত হারের তুলনায় বেশি হারে রেমিট্যান্স আকৃষ্ট করলে তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। কেননা, এটি অর্থনীতির মূল স্তম্ভ রেমিট্যান্স বাড়াতে সহায়তা করবে।

সিইওরা গভর্নরকে আরও জানান যে তারা স্থানীয় ও বিদেশি মুদ্রার ঘাটতিতে পড়ছেন। তারা বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালুর অনুরোধও করেন।

তাদের অনুরোধের জবাবে গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর উদ্যোগ নেবে না। কেননা, এটি মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

গত সেপ্টেম্বরে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছিল নয় দশমিক ৬৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছয় শতাংশের তুলনায় এটি অনেক বেশি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দেওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। গত বছরের জুন থেকে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে চলছে। তাই আমদানি নির্ভর এই দেশের রিজার্ভ কমে গেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নথি অনুসারে, ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

২০২১-২২ সালের শেষে তা কমে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক চার বিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত ১১ অক্টোবর রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন ডলারে।

রিজার্ভ দ্রুত কমে যাওয়ায় গত ১৮ মাসে ডলারের বিপরীতে টাকা দাম হারিয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা অনুযায়ী এবিবি ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেডা) গত বছর থেকে বিনিময় হার নির্ধারণ করে আসছে। এই দুই সংগঠন গত সেপ্টেম্বরে একটি অভিন্ন বিনিময় হার বাস্তবায়ন করে।

সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জানিয়েছে যে মুদ্রা বিনিময় হার এখনো বাজারভিত্তিক হয়নি। এটি এখনো সরকার নিয়ন্ত্রিত রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং ভারত ও সৌদি আরবের মতো দেশ থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

বৈঠক শেষে এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গভর্নর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব রপ্তানি আয় বাড়াতে বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, 'মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে যে সব নিয়ম চালু করেছে, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি।'

ব্যাংকিং খাতে তারল্যের ওপর চাপ থাকলেও ব্র্যাক ব্যাংকের সিইও একে 'স্বাভাবিক' বলে মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, গভর্নর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বাফেডা নির্ধারিত হারে রেমিট্যান্স আনতে বলেছেন।

'ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে বিদেশি ক্রেতারা রপ্তানির বিপরীতে অর্থ না দেওয়ায় রপ্তানি আয়ের একটি অংশ দেশে আসছে না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ব্যাংকগুলো তাৎক্ষণিকভাবে আমদানি বিল পরিশোধ করলেও রপ্তানি আয় আসতে দেরি হচ্ছে। এ কারণে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে।'

তার মতে, এ বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেশি হলেও সেই অনুপাতে আয় হচ্ছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর রপ্তানি পরিসংখ্যান ও প্রকৃত আয়ের মধ্যে ব্যবধান আছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টাকার দাম কমে যাওয়ায় রপ্তানিকারকদের কেউ কেউ তাদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা টাকায় বিনিময় করতে চান না।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য পাঠানো হলেও দেশে এসেছে প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার।

বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে এই ব্যবধান কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

Comments

The Daily Star  | English
probe committee for past elections in Bangladesh

Govt launches probe into last 3 national polls

The government has formed a committee to investigate allegations of corruption, irregularities, and criminal activities in the three national elections held in 2014, 2018, and 2024.

3h ago