পদ্মা সেতুতে রেল উপহার দিলাম, নৌকায় ভোট দিয়ে আবার সেবার সুযোগ দেবেন: প্রধানমন্ত্রী
নৌকাই এদেশের মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আনে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ মঙ্গলবার পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধন শেষে ট্রেনে ভাঙ্গা পৌঁছে সেখানে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশে এক ইঞ্চি জমি যে অনাবাদি না থাকে। আপনারা যা পারেন কিছু ফসল ফলান। যা পারেন উৎপাদন করেন। নিজের খাবার নিজে উৎপাদন করতে হবে। আমি কিন্তু আমার যত অনাবাদি জমি, চাষ করা শুরু করে দিয়েছি। শুধু তাই না, গণভবনও এখন একটা খামার হয়ে গেছে। সেখানেও ধান, হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ—যা যা পারি সব উৎপাদন করি। তরি-তরকারি, ফলমূল... কাজেই সবার উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়িয়ে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিজেদেরকে ঠিক করতে হবে। বরং আমরা অনেক দেশকে সাহায্য করতে পারব। এটাই আপনাদের কাছে আমার আহ্বান থাকবে।
সেই সঙ্গে সঙ্গে আমরা যে বিদ্যুৎ দিয়েছি, এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে অনেক টাকা খরচ হয়। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবেন। পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবেন। সেই সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষের সব ধরনের উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজকে আমাদের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার্থী, তাদের বলব, আমরা বিনা পয়সায় বই দেই, আমরা বৃত্তি দেই, সবাইকে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। প্রত্যেক এলাকায় এলাকায় স্কুল আমরা উন্নত করে দিচ্ছি। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় আমরা একটা করে কলেজ, একটা করে স্কুল সরকারিকরণ করে দিয়েছি। কাজেই আমাদের লক্ষ্য শিক্ষায়-দীক্ষায়, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে আমাদের দেশের ছেলে-মেয়ে উন্নত মানের হবে, যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে—সেইভাবে আমরা তৈরি করতে চাই। কাজেই সেইভাবে সবাইকে মনোযোগ দিতে হবে।'
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা আজকে বয়স্ক ভাতা দিচ্ছি, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তাদের ভাতা দিচ্ছি, মাতৃত্বকালীন ভাতা দিচ্ছি... যে মা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায়, কর্মজীবী মহিলা, তাদের ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিচ্ছি। আমরা সবার জন্য যারা ভূমিহীন, তাদের বিনা পয়সায় ঘর করে দিচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, ঠিকানাহীন থাকবে না। ইতোমধ্যে আট লাখ ৪০ হাজার পরিবারকে আমরা বিনা পয়সায় ঘর দিয়েছি। আর একটি মানুষও বাদ থাকলে তাকেও আমরা করে দেবো। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, যারা একটু দুস্থ, বীর নিবাস তৈরি করে দিচ্ছি। আমাদের দেশের হিজড়া, বেদে, কুষ্ঠ রোগী, চা-শ্রমিক—কেউ বাদ যাচ্ছে। না। সবার জন্য করে দিচ্ছি নির্বিশেষে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একটাই লক্ষ্য সামনে, সেটা হচ্ছে, ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি, ২০২৬ সাল থেকে সেটা কার্যকর হবে। সেই কারণেই আপনাদের কাছে আমার আবেদন। এত দিনরাত পরিশ্রম করে এই দেশের যে উন্নতি করেছি, হাজার হাজার মাইল রাস্তাঘাট, গ্রামে গ্রামে কাঁচা রাস্তাঘাট খুব কমই আছে। যা আছে আগামীতে তাও (পাকা) করে দেবো। রেল সম্প্রসারণ করে দিচ্ছি, নৌপথ ড্রেজিং করে চালু করে দিচ্ছি। বিমান পথ চালু করেছি। বাংলাদেশে সার্বিকভাবে উন্নয়ন করে আজকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। এটা করতে পেরেছি কেন? তার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। আজকে নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, নৌকা পদ্মা সেতু, রেল সেতু দিয়েছে, রাস্তাঘাটের উন্নতি করেছে, নৌকা আপনাদেরকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুল দিচ্ছে, নৌকাই এদেশের মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আনে। তাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যাতে আপনাদের সেবা করতে পারে, আপনাদের কাছে আমার সেই আবেদন থাকল।'
'তার কারণ ওই লুটেরা বিএনপি, যে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে, দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যে পলাতক আসামি, মুচলেকা দিয়ে দেশে ছেড়ে ভেগেছে, অর্থ আত্মসাৎ করেছে, অস্ত্র চোরাকারবারি—এই হলো বিএনপির নেতা। আর জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে যুদ্ধ অপরাধী। যুদ্ধে অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছি। এরা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকায় মার্কাই আপনাদের সব রকম সহযোগিতা দেবে। তাই আপনাদের কাছে আমার এই আহ্বান।'
তিনি আরও বলেন, 'তা ছাড়া আমি জানি এবারে বৃষ্টি হচ্ছে, বন্যা হচ্ছে, নদীভাঙন। নদীভাঙন আমারে জন্য একটা সমস্যা। এই নদীভাঙ্গন থেকে ফরিদপুর ও শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন এলাকা রক্ষা করার জন্য ইতোমধ্যে আমরা নদীভাঙন রোধে প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং তার কিছু কিছু বাস্তবায়নও শুরু করেছি। কাজেই সারাদেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেই কারণেই আমি আপনাদের এইটুকুই বলব, আজকে পদ্মা সেতুতে রেল আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম। আপনারা ফরিদপুরবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।'
Comments