লোকবলের অভাব-দালালের খপ্পর: সংকট কাটছে না পাবনা মানসিক হাসপাতালের

পাবনা মানসিক হাসপাতাল। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

'আমাদের মন আমাদের অধিকার' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ ১০ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।

বিশ্বব্যাপী যখন মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তখন নানা সংকটে ব্যহত হচ্ছে মানসিক রোগের চিকিৎসায় দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল পাবনা মানসিক হাসপাতালের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা।

হাসপাতালটির চিকিৎসকরা জানান, বিশেষায়িত হাসপাতাল হলেও এখানে রোগীদের জন্য নেই বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধা। স্বল্পসংখ্যক ডাক্তার ও অপেক্ষাকৃত কম জনবল দিয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। মানসিক রোগীদের জন্য ওষুধের পাশাপাশি প্রয়োজন সাইকো থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপির মতো আরও নানা কিছু। তবে দক্ষ লোকবলের অভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিলছে না সেসব সুবিধা।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাফকাত ওয়াহিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৫০০ শয্যার বিশেষায়িত এ হাসপাতালে মাত্র ১৪ জন চিকিৎসক রয়েছেন। ৩১টি পদের মধ্যে ১৭টি পদ দীর্ঘদিন ধরেই শুন্য। কর্মরত চিকিৎসকদের মধ্যে ৪ থেকে ৫ জনকে প্রতিদিন বহিঃবিভাগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসা ও ওষুধ দিতে হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিদিন গড়ে ৩ শতাধিক রোগীকে বহিঃবিভাগ থেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক রোগীকে বহিঃবিভাগে নিয়মিত চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।'

'অবশিষ্ট চিকিৎসকদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত থাকতে হয়। এ অবস্থায় স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সব রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিশেষায়িত এ হাসপাতালে', যোগ করেন তিনি।

তবে সংকট থাকলেও কোনো রোগীকে অবহেলা করা হচ্ছে না বলে দাবি করে তিনি বলেন, 'স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়েও স্বাস্থ্যসেবা অব্যহত রাখা হচ্ছে।'

শুধু চিকিৎসক সংকট নয়, পর্যাপ্ত নার্স সংকট, দক্ষ জনবল সংকট থাকার কারণে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ব্যহত হচ্ছে। লোকবলের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের ডেন্টাল ইউনিট, অ্যানেসথেসিয়া, সাইকো থেরাপিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ বন্ধ রয়েছে।

পাবনা মানসিক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ৫০০ শয্যার এ হাসপাতালে সবসময় প্রায় ৪৮০ জনের ওপর রোগী ভর্তি থাকেন। অল্প কয়েকজন চিকিৎসক দিয়ে কোনো রকমে স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে নেওয়া হলেও বিশেষায়িত এ হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে কোনো গবেষণা, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োগ কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।

দক্ষ লোকবল না থাকায় প্রায় দুই দশক ধরে পড়ে রয়েছে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ইইজি মেশিন। ইতোমধ্যে মেশিনটি ব্যবহার না হতে হতে প্রায় নষ্ট হয়ে পড়েছে। ফলে জটিল রোগীদের উন্নত ও আধুনিক সেবা প্রদান ব্যহত হচ্ছে।

হাসপাতাল পরিচালক ডা. সাফকাত ওয়াহিদ বলেন, 'সংকট নিরসনে নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য বিভাগে চিঠি দেওয়া হলেও এখনও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।'

এদিকে রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, নানা সংকটে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার অভাবে অনেক রোগীই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে বাড়ি ফিরে যান। ফলে কিছুদিন পর আবারও তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

পাবনা শহরের রাধানগর এলাকার মধ্যবয়সী এক রোগীকে গত এক দশকে বহুবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তার পরিবারের দাবি, হাসপাতাল থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি না ফেরায় বারবার তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাফকাত ওয়াহিদ বলেন, 'মানসিক রোগীকে শুধু ওষুধ দিয়ে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা সম্ভব নয়, এজন্য প্রয়োজন সুস্থ পরিবেশ। হাসপাতাল থেকে পরিবার ও সমাজ জীবনে ফিরে গেলে মানসিক রোগীরা সেখানে সুস্থ্ পরিবেশ না পেয়ে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন।'

দালালদের খপ্পরে মানসিক হাসপাতাল

পাবনা মানসিক হাসপাতালে দালালদের প্রভাব কোনোভাবেই কমছে না। রোগী ভর্তি, রোগীর চিকিৎসাসেবা নিতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের অনেকেই দালালদের খপ্পরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দালালদের বেশিরভাগই রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির নামে বেনামে গড়ে উঠা নানা ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে রোগীদের হয়রানি করছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝেমাঝেই অভিযান চালিয়ে অনেক দালালকে আটক করে। কিন্তু তারা বেরিয়ে এসে আবারও শুরু করে কাজ। মানসিক হাসপাতালে কর্মরতদের অনেকের সঙ্গেও দালালদের সংযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাফকাত ওয়াহিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দালালদের বিষয়টি হাসপাতালের বাইরের বিষয়। তবে স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সবসময় অবহিত করা হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

8h ago