মাছের দাম ছোঁয়ার বাইরে, মুরগির গিলা-কলিজায় ভরসা

কারওয়ান বাজারে মুরগির গিলা-কলিজার দোকানে দরদাম করছেন একজন ক্রেতা। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

রাজধানীর মহাখালীর ৭ তলা বস্তিতে থাকেন মোহাম্মদ জুয়েল। দুই সন্তান, স্ত্রী, মা-বাবা নিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার তার। এই পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারের একটি দোকানে মুরগির গিলা কলিজা নিয়ে দরদাম করছিলেন জুয়েল। জানতে চাইলে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'ঘরে ২টা ছোট ছেলেমেয়ে আছে। ওরা মুরগি খেতে খুব পছন্দ করে। ১ কেজি মুরগির মাংস কেনার চেয়ে গিলা-কলিজা কিনলে সাশ্রয় হয়। তাই এটাই কিনছি।'

মাসে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা আয় করেন জুয়েল। বাসা ভাড়া দিতে হয় ৪ হাজার টাকা। ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়ান। সেখানেও ৪ হাজার টাকার মতো খরচ হয় বলে জানান তিনি।

'বর্তমানে সবকিছুরই দাম বেশি। আগে সপ্তাহে ১/২ দিন ছেলেমেয়েদের মুরগি খাওয়াতাম। ইলিশের সিজনে ইলিশ খাওয়ানোর চেষ্টা করতাম। এ বছর পারি নাই। কয়দিন আগে ৫০০ টাকা কেজির ছোট একটা ইলিশ কিনতে পারলাম। সবকিছুর বাড়তি দাম।

'মায়ের অসুখ, ডাক্তার-হাসপাতালে খরচ আছে। তাকে ৬ মাস আগে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। সেজন্য অনেক টাকা ঋণও নিয়েছিলাম। সেটা শোধ করতে হচ্ছে। ছেলের পড়ার খরচ, মেয়ের খরচ এসবে খরচ কমানো সম্ভব না। তাই খাওয়া দাওয়ায় খরচ কমাতে হচ্ছে,' বলেন তিনি।

৩ মাস আগেও কারওয়ান বাজারে গিলা কলিজার দাম ছিল কেজিপ্রতি ১২০ টাকা, এখন দাম বেড়ে প্রতিকেজি ১৬০ টাকা হয়েছে।

বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা, সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায়।

মুরগি না কিনে কেন গিলা-কলিজা কিনছেন জানতে চাইলে আরেক ক্রেতা বলেন, '১ কেজি মুরগি ১৮০ টাকায় কিনলে কাটাকুটির পর থাকে ৬০০ গ্রাম। তার চেয়ে ১ কেজি গিলা কলিজা ১৬০ টাকায় পাওয়া যায়। কিনলে পুরাটাই পাওয়া যায়। কোনোকিছু ফেলতে হয় না। সেজন্য গিলা-কলিজা কিনলেই লাভ বেশি।'

কারওয়ান বাজারে ২২০ টাকা কেজির নিচে কোনো মাছ নেই। পাঙ্গাস, তেলপিয়া—যা আগে দেড়শ টাকা কেজি ছিল তা এখন ২২০ টাকার বেশিতে বিক্রি হচ্ছে।  ছোট মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায়।

আমিষের চাহিদা মেটাতে মুরগির গিলা-কলিজাতেই এখন ভরসা জানিয়ে ওই ক্রেতা বলেন, 'মুরগি তাও যেমন তেমন, মাছ তো ছোঁয়ার বাইরে। অন্যান্য জিনিসের দামও বেশি। বাচ্চারা মাছ-মুরগি খেতে চায় কী করব? মুরগির গিলা কলিজা রান্না করলে সেটা তাও খাওয়া যায়। এটা সাশ্রয়ীও।'

কারওয়ান বাজারে ১২ বছর ধরে গিলা কলিজা ব্যবসা করেন মো. ঝন্টু। চাহিদা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, 'গিলা কলিজার দাম এখন আগের চেয়ে বেড়েছে। কারণ এখন চাহিদা বেশি। মুরগির পা আগে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। অনেকে বিড়ালের খাবার হিসেবে নেয়, অনেকে নিজেরা খাওয়ার জন্য নেয়। এখন মুরগির পায়ের কেজি ১০০ টাকা। চাহিদা বেড়েছে সেজন্য দামও বাড়তি।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Adani reduces power supply to Bangladesh by half over payment backlog

Since July, Adani has been charging more than in the previous months, Bangladesh says

1h ago