যে কারণে ভারত থেকে দেশে ফিরতে পারছেন না বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন

সালাহউদ্দিন আহমেদ
সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

'গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জজ কোর্টের রায়ের পরপরই মার্চের শুরুর দিকে মেঘালয় সরকারের কাছে সব নথিসহ আবেদন করি আমাকে দেশে ফেরত পাঠাতে। আবেদন না করলেও তারা আদালতের রায়ের ওপর ভিত্তি করেই এই কাজটি করতে পারত। অথচ, আবেদন করার পর এতগুলো মাস কেটে গেলেও তাদের কাছ থেকে এখনো কোনো সাড়া পাইনি। তাই দেশে ফিরতেও পারছি না।'

কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ২০১৫ সালের ১১ মে তাকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং থেকে আটক করে পুলিশ। এরপর থেকে গত প্রায় সাড়ে আট বছর যাবত তিনি মেঘালয়েই অবস্থান করছেন।

ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পর জজ কোর্টের রায়েও খালাস পেয়েছেন তিনি। তার পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকায় বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তিনি হাতে পেয়েছিলেন ট্রাভেল পারমিটও

তারপরও দেশে না ফেরার কারণ জানতে চাইলে শিলং থেকে টেলিফোনে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনেক স্ট্রাগল করে ট্রাভেল পারমিট পেয়েছিলাম। এর মেয়াদ ছিল তিন মাস, গত ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।'

তিনি বলেন, 'বিদেশে এসে পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে দূতাবাসে আবেদন করে ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাওয়া যায়। সাধারণ ক্ষেত্রে এর জন্য যে দেশের যে এলাকায় পাসপোর্ট হারিয়েছেন, ওই থানায় জিডি করে নিজ দেশের দূতাবাসে যেতে হয়। দূতাবাসের দেওয়া ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে যেতে হয় ওই দেশের ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসে এবং এক্সিট পাস নিতে হয়। এরপর এই ডকুমেন্টগুলো নিয়ে নিজ দেশে ফেরা যায়।'

'কিন্তু আমার ক্ষেত্র ভিন্ন। আমি আবেদনের সঙ্গে বিচারাদেশ যুক্ত করে লিখেছিলাম, আমি এখানে বন্দি আছি, আমাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিলে সেটা আমাকে সাহায্য করবে। আবেদনের সঙ্গে আমার মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো পাসপোর্টের কপিও দিয়েছিলাম। প্রথমে তো বাংলাদেশ দূতাবাস আমার আবেদন গ্রহণই করতে চায়নি। পরে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি নিয়ে সেটা গ্রহণ করে এবং ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করে।'

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন মনে করেন, তিনি যে পরিস্থিতিতে ভারতে আছেন, তাতে দেশ ফিরতে ট্রাভেল ডকুমেন্টের প্রয়োজন তার নেই।

তার ভাষ্য, 'ভারতীয় কর্তৃপক্ষ চাইলে আদালতের রায় অনুসারে আমাকে দেশে পাঠিয়ে দিতে পারে। আদালত মেঘালয় রাজ্য সরকারকে আদেশ দিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী আমাকে যেন ডিপোর্ট করা হয়। সেই অনুযায়ী রাজ্য সরকার কাগজপত্র ঠিক করে আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেবে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষও আমাকে রিসিভ না করে পারবে না।'

তিনি বলেন, 'আপনারা জানেন, ফেডারেল সরকার ব্যবস্থায় পররাষ্ট্র, অর্থ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থাকে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। মেঘালয় সরকার এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল। যতটুকু জানতে পেরেছি, ওই চিঠিতে মেঘালয় সরকার সম্মান জানিয়েই লিখেছে, উপরল্লেখিত হাই প্রোফাইল বাংলাদেশিকে তার নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ২০১৮ সালে আমি যখন ভারতের বিচারিক আদালত থেকে রায় পেয়েছিলাম, তখনও মেঘালয় সরকার এভাবে চিঠি দিয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জবাব দেয়নি।'

'কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন না পেলে মেঘালয় রাজ্য সরকার কোনো বিদেশিকে এভাবে নিজ দেশে পাঠিয়ে দিতে পারবে না। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আমার বিষয়ে গণমাধ্যমে অনেক কথাই বলেছে। কিন্তু, আমি বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলে আমার দেশে ফেরা সময়ের ব্যাপার মাত্র', যোগ করেন তিনি।

'আমার দেশে ফেরা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে' দাবি করে সালাউদ্দিন বলেন, 'এখানে আমার হাতে কিছুই নেই। আমি যেকোনো সময় দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুত এবং এই কথা আমি বারবার চিঠি দিয়ে তাদের জানিয়েছি।'

ভারতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন সালাহউদ্দিন। এর জন্য মেঘালয়ের বাইরে যেতে পেরেছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'চিকিৎসার জন্য মেঘালয়ের বাইরে যেতে অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েই দিল্লির বিভিন্ন হোটেলে থাকতে পেরেছি। হোটেলগুলো একটু গড়িমসি করলেও শেষ পর্যন্ত সেখানে থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরতে পেরেছি।'

তিনি বলেন, 'এটা আমার জন্য খুবই জরুরি ছিল। কারণ, আমার দুটি বড় অপারেশন এখানেই হয়েছে। তাছাড়া শরীরটাও খুব খারাপ লাগছিল। আর বাংলাদেশে ফিরলে কী পরিস্থিতিতে পড়তে হবে সেটাও জানি না। চিকিৎসা সুবিধা কতটা পাবো সেটাও অনিশ্চিত।'

সালাহউদ্দিন আহমেদের পাসপোর্ট ও ট্রাভেল ডকুমেন্টের মেয়াদ শেষ এবং আদালতের রায়ে তিনি খালাস পেয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমানে ভারতে তার অবস্থান কি অবৈধ?

এ প্রশ্নের উত্তরে সালাউদ্দিন বলেন, 'এখন আমি অবৈধও না, আবার পুরোপুরি বৈধভাবে আছি সেটাও বলতে পারব না। কারণ, আমার কাছে কোনো ডকুমেন্ট নেই, কিন্তু আমি এর জন্য দায়ী না।'

২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন। পরবর্তীতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে 'উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাফেরা' করার সময় ওই বছরের ১১ মে তাকে আটক করে শিলং পুলিশ। তার নামে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা হয়।

তিনি শিলং পুলিশকে জানান, গোয়েন্দা পরিচয়ে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ তাকে তার উত্তরার বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়। একটি প্রাইভেট কারে তাকে শিলং নেওয়া হয়। কিন্তু গাড়িটি কোথা থেকে ছেড়েছিল বা গাড়িতে আর কে বা কারা ছিলেন, তা তিনি বলতে পারেননি।

১৯৯৬ সালে কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সালাহউদ্দিন। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

মেঘালয়ে যখন আটক হন তখন তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ভারতের জেলে থাকাকালে বিএনপি তাকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য করে।

২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা থেকে তাকে খালাস দেন ভারতের একটি আদালত। সে সময় তিনি বলেছিলেন, 'আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। দ্রুত দেশে ফিরে যেতে চাই।'

আদালতের এই রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে সেই রায়েও খালাস পেয়েছেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English
US dollar price rises

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago