সবচেয়ে সস্তা আলুর দামও ৪০ টাকা কেজি

বগুড়ার রাজাবাজার এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে সবচেয়ে কমদামি আলু হিসেবে পরিচিত কাটিলাল আলুও বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। ছবি: মোস্তফা সবুজ/ স্টার

সরকার হিমাগারে আলুর দাম বেঁধে দিয়েছে ২৭ টাকা কেজি, খোলা বাজারে ৩৫-৩৬ টাকা কেজি কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে না।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত আলুর বাজার এবং হিমাগারে অভিযান চালালেও তার কোনো ফল পাচ্ছে না সাধারণ ক্রেতা।

গতকাল বগুড়ার শিবগঞ্জের একটি আলুর হিমাগারে অভিযান চালান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। সেখানে গিয়ে তিনি তিন মজুদদারকে অতিরিক্ত আলু মজুদের দায়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ আইনে মামলার পর আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ।

অভিযানের সময় ডিজি সাংবাদিকের বলেন, 'প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ ১২-১৩ টাকা। প্রতি কেজি আলুর হিমাগারের খরচ আরও ৫ টাকা। ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়েও সরকার হিমাগারে দাম নির্ধারণ করেছে ২৭ টাকা। কিন্তু অবৈধ মজুদদারদের জন্যই বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলু পাওয়া যাচ্ছে না।'

গতকাল মহাপরিচালকের অভিযান এবং তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা, ব্যবসায়ী এবং হিমাগার মালিকদের সঙ্গে মহাপরিচালকের সভার পর আজকে খোলা বাজারে এর কোনো প্রভাব  দেখা যায়নি।

আজ বগুড়ার রাজাবাজার এবং পার্শ্ববর্তী জেলা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে সবচেয়ে কমদামি আলু হিসেবে পরিচিত কাটিলাল আলুও বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। অন্যান্য আলু বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা এবং পাকড়ী আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। ভর্তার জন্য হাগড়াই আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে।

বগুড়া রাজাবাজারের আলুর দোকানি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'স্টোরেই আলুর দাম বেশি। স্টোরে আমরা আলু কিনছি ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। বাজারে আনতে ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ দিয়ে দাম পড়ছে ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা কেজি। তাহলে আমরা কত করে বিক্রি করব?'

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ বাজারের দোকানদার রাসেল মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হিমাগারে কাটিলাল আলু কিনছি ৩৬ টাকা কেজি। বিক্রি করছি ৪০ টাকায়।'

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে হিমাগার থেকে আলু কেন পাচ্ছেন না জানতে চাইলে রাসেল বলেন, '৩৬ টাকা দরে আলু কিনছি তাও আবার কৃষকের কাছ থেকে। মজুদদাররা আরও বেশি দামে বিক্রি করছে। দাম কম হলে তারা বিক্রি বন্ধ করে দিচ্ছে।'

হিমাগারের যেসব মধ্যস্বত্তভোগী ব্যবসায়ীরা কৃষকের থেকে আগেই আলু কিনে মজুদ করে রেখেছেন তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা অধিক সুদে হিমাগার কিংবা অন্য কারো কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এই মৌসুমি ব্যবসা করছেন। ফলে ২৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করলে তারা লাভ করতে পারবেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়ার শিবগঞ্জের এক মজুদদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার এই মৌসুমে শুধু আলুর ব্যবসা করি। বর্তমানে হিমাগারগুলোতে কৃষকের আলু আছে খুবই কম। সবই মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং হিমাগার মালিকদের আলু এখন মজুদ আছে। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি বস্তা আলুতে আমাদের লাভ হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ২৭ টাকায় আলু বিক্রি করলে লাভ হবে না। কারণ আমরা হিমাগার মালিক কিংবা অন্য জায়গায় শতকরা ১৮ থেকে ২২ শতাংশ সুদে লোন নিয়ে এই ব্যবসা করছি।'

আলু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, গত বছর সেপ্টেম্বরে হিমাগার থেকে আলু বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। গত জুন পর্যন্তও বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। ২০১৬ সালে তারা আলু বিক্রি করেছেন ১৫ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে বগুড়া জেলায় বর্তমানে ৪২টি আলুর হিমাগারে গত ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মজুদ ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৬ টন। এর মধ্যে বীজ আলু আছে ৭৮ হাজার ৪১০ টন।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

4h ago