ময়েশ্চারাইজার কি সারা বছর প্রয়োজন, তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে কী করবেন

ছবি: সংগৃহীত

সুস্থ ত্বকের জন্য ক্লিনজিং যেমন জরুরি, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারও সমানভাবে জরুরি। কেউ ত্বকের যত্নে বাড়তি কিছু যদি নাও করেন, তবু শুধু ক্লিনজিং, ময়েশ্চারাইজিং আর সানস্ক্রিনের ব্যবহারেই ত্বক সুস্থ রাখা সম্ভব। এর কোনোটিই তাই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার কেন জরুরি

আবহাওয়া যেমনই হোক, ঘরে-বাইরে যেখানেই থাকি না কেন বিভিন্ন কারণে ত্বকের আর্দ্রতা কমে ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক, নিষ্প্রাণ। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের এই হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে খুবই সহায়ক। আর্দ্রতার অভাবে ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক হয়ে অকালে বুড়িয়ে যায়। ত্বকের কোমলতা ধরে রাখতে, মুখের খড়খড়ে ভাব দূর করতে এবং অকালে বয়সের ছাপ রোধ করতে ময়েশ্চারাইজারের কোনো বিকল্প নেই।

কোন ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন

ত্বকের ধরন অনুযায়ী নানা ধরনের ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়। আপনার ত্বকের ধরন বুঝে উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। শুষ্ক ত্বকের জন্য অয়েল বেসড ময়েশ্চারাইজার ভালো। কারণ শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ওয়াটার বেজড বা জেলজাতীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। এগুলোতে তেলের পরিমাণ কম, তাই তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুবই মানানসই। মিশ্র বা স্বাভাবিক ত্বকে যেকোনো ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।

তৈলাক্ত ত্বকে কি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার আবশ্যক

অনেকেই মনে করেন, তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করলেও চলবে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। যেকোনো ধরনের ত্বকের জন্যই ময়েশ্চারাইজার জরুরি। একজন শুষ্ক ত্বকের ব্যক্তি যতবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন, ঠিক ততবারই তৈলাক্ত ত্বকের ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারবেন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যে ধরনের ময়েশ্চারাইজার মানানসই হয়, তা বেছে নিলে মুখে অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব থাকবে না। 

 কখন ব্যবহার করবেন

সকালে মুখ ধোয়ার পর বা গোসলের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পরপরই ময়েশ্চারাইজিং করে নেওয়া ভালো। এতে ত্বকে রুক্ষ ভাব থাকবে না।

যারা এসিতে থাকেন বা লম্বা সময় ধরে এসিতে থাকতে হয়, তাদের একদিনও ত্বক ময়েশ্চারাইজ করা বাদ দেওয়া ঠিক হবে না। বাইরে বের হওয়ার সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে সে ক্ষেত্রে আর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করলেও চলবে। তবে যাদের ত্বক শুষ্ক, তারা চাইলে দুটোই ব্যবহার করতে পারেন। অনেকে রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করেন না। কিন্তু ঘুমানোর আগে হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে সারাদিন ত্বক কোমলতা বজায় থাকে, ত্বক কোমল ও প্রাণবন্ত হয়।

শুধু কি শীতকালেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন

ময়েশ্চারাইজার শুধু শীতকাল নয়, ব্যবহার করতে হবে প্রতিদিন মুখ ধোয়ার পর। শীতকালে বাতাসে জলীয়বাষ্প কম থাকার কারণে সহজেই শুষ্ক হয়ে ত্বক টানতে শুরু করে। যে কারণে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বেশি অনুভূত হয়। কিন্তু শীত হোক বা গ্রীষ্ম, সারাবছরই ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি। ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক না থাকলে আপনি যতই যত্ন করুন না কেন, লাভ নেই।

সতর্কতা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রূপচর্চার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে বেড়ে গেছে বিভিন্ন কসমেটিকস জাতীয় পণ্য বিক্রির অনলাইন শপও। অনেক শপই বিজ্ঞাপন বা ইনফ্লুয়েন্সারের মাধ্যমে পণ্য কিনতে আগ্রহী করে তোলে। এসব শপে ভালো পণ্যের পাশাপাশি অথেনটিক প্রোডাক্টের দামে নকল পণ্যের সরবরাহও রয়েছে। তাই কোনো ইনফ্লুয়েন্সার বা সোশাল মিডিয়ার বিজ্ঞাপন দেখে প্রভাবিত হয়ে যেকোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার শুরু করবেন না।

অনেক সময় পণ্যটি অথেনটিক হলেও আপনার ত্বকের ধরনের সঙ্গে মানানসই হয় না বলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখায়। তাই ময়েশ্চারাইজার কেনার আগে নিজের ত্বককে ভালোভাবে চিনুন, তারপর ওই পণ্য ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।

তথ্যসূত্র: সিম্পল স্কিনকেয়ার, কমপ্লিট ফ্যামিলি ডার্মাটোলজি, হার্ভার্ড হেলথ

 

Comments