এশিয়া কাপ ২০২৩

বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আফগানদের গুঁড়িয়ে দুর্বার বাংলাদেশের উল্লাস

ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

পা হড়কালেই দেশে ফিরতে হতো অনেকগুলো প্রশ্নের বোঝা কাঁধে চেপে। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে তাই নিজেদের কাজটুকু করে রাখা চাই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে কোণঠাসা পরিস্থিতিতে নেমে আহত বাঘের মতোই ফুঁসে উঠল সাকিব আল হাসানের দল। নাজমুল হোসেন শান্ত আর মেহেদী হাসান মিরাজের দুই সেঞ্চুরিতে বিশাল পুঁজি পাওয়ার পর ব্যাটিং স্বর্গে বোলাররাও থাকলেন নিখুঁত। ফিকে হতে থাকা এশিয়া কাপের সুপার ফোর নিশ্চিত হয়ে গেল সম্মিলিত প্রয়াসে। 

গ্রুপ পর্বের লড়াইয়ে রোববার আফগানিস্তানকে রানে ৮৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ৫ উইকেটে ৩৩৪ রানের জবাবে আফগানরা গুটিয়ে যায় ২৪৫ রানে। বড় ব্যবধানে জেতায় নেট রান রেটে শ্রীলঙ্কার বেশ কাছাকাছি চলে গেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধারা। 

১১২ রান আর ৪১ রানে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন মিরাজ। তবে আগ্রাসী সেঞ্চুরিতে শান্তর ভূমিকাও কম নয় কোনো অংশে।

লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের বাইশ গজ ছিল রানে ভরপুর, বাউন্ডারির আকারও ছিল কিছুটা ছোট। সেখানে আগে ব্যাটিং পাওয়া ছিল জরুরি। টস জিতে সেই কাজটা হলো।

চিন্তা ছিল ওপেনিং জুটি নিয়ে। কারণ নাঈম শেখের সঙ্গে ফাটকা হিসেবে ঠেকার কাজের জন্য পাঠানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। সেই ফাটকা যে এভাবে দুহাত ভরিয়ে দেবে তখন কে জানত! নাঈম আগের ম্যাচের মতই থিতু হয়ে ডুবলেন। তার আগে অবশ্য একটা ভালো শুরু এসে গিয়েছিল। তিনে তাওহিদ হৃদয়কে পাঠানোর চিন্তা কাজে দেয়নি।

তবে এই সমস্যা বুঝতে দেননি মিরাজ-শান্ত। শান্তই ভূমিকা নিলেন মেরে খেলার। আফগান বোলারদের কাউকেই থিতু হতে দেননি তিনি। এক প্রান্ত আগলে তাকে কেবল সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন মিরাজ, রান বাড়ছিল তারও। এক পর্যায়ে গিয়ে তিনিও খানিকটা ডানা মেলা শুরু করেন। মিরাজের পিছু নিয়ে ফিফটির পর সেঞ্চুরিও পেরুন শান্ত। হাতে ক্রাম্পে মিরাজ বেরিয়ে যাওয়ার পর শান্তও রান আউট বিদায় নেন। তার আগে তৃতীয় উইকেটে হয়ে যায় ১৯৪ রানের অবিস্মরণীয় জুটি।

শান্তর ১০৫ বলে ১০৪ রান যদি হয় দলের এক্সলেটর, মিরাজের ১১৯ বলে ১১২ রান সেখানে দিয়েছে পরিকল্পিত নিয়ন্ত্রণ।

শেষ দিকে দলের রান তিনশো ছাড়িয়ে আরও অনেক দূর গেল মুশফিক-সাকিবের কারণে। মুশফিকের ১৫ বলে ২৫ আর সাকিবের ১৮ বলে অপরাজিত ৩২ রানের ক্যামিওতে দেশের বাইরে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ দলীয় পুঁজি পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

লাহোরের পাটা উইকেটেও এই রান টপকে আফগানিস্তানকে জিততে দরকার হতো রাহমানুল্লাহ গুরবাজের ফায়ার পাওয়ার। কিন্তু তার ডানা শুরুতেই ছেঁটে ফেলেন শরিফুল ইসলাম। সাকিব রিভিউ না নেওয়ায় একবার আক্ষেপে পুড়ার পর দমে না গিয়ে গুরবাজকে এলবিডব্লিউতেই কাবু করেন তিনি। ভেতরে ঢোকা বল খানিকটা এগিয়ে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হয়ে ৭ বলে ১ রান করে ফেরেন তিনি।

রহমত শাহকে নিয়ে জুটি পান ইব্রাহিম জাদরান। তবে রান তোলার গতি ছিল বেশ মন্থর। ৭৮ রানের জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। ৫৭ বলে ৩৩ করা রহমতকে বোল্ড করে দেন তিনি।

ইব্রাহিম ছুটছিলেন রানে-বলে তাল রেখে। তার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিলেন হাসমতুল্লাহ শহিদি। এই জুটি বিপদজনক হয়ে দেখা দিচ্ছিল। ইব্রাহিম ক্রমশ ধরাচ্ছিলেন ভয়। তাকে আউট করেন হাসান মাহমুদ। তবে বলা ভালো আসলে ফেরান মুশফিকই। হাসানের বলে আউট সাইড এজ হয়ে অনেকটা দূরে বেরিয়ে যাচ্ছিল বল। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ছোবল মেরে তা হাতে জমান অভিজ্ঞ কিপার।

এরপর ক্রমশ ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় আফগানরা। নাজিবুল্লাহ জাদরান নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি, বোল্ড হন মিরাজের বলে। শহিদি ফিফটি করলেও কাজ অসমাপ্ত রেখে বিদায় নেন। মোহাম্মদ নবি, গুলবদিন নাইবরাও ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। আফগানদের হয়ে দাঁড়ানোর ছিল না কেউ।

Comments

The Daily Star  | English

5 killed as train hits auto-rickshaw in Cumilla

The accident took place when the Chattogram-bound Chattala Express train hit a battery-run auto-rickshaw in Kalikapur area

38m ago