টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

শঙ্কা উড়িয়ে, নেপালকে গুঁড়িয়ে সুপার এইটে বাংলাদেশ

ভোরের আলো ফুটার আগেই শুরু হওয়া ম্যাচে অন্ধকার দেখতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। নেপালের বিপক্ষে ব্যাটারদের একের পর এক আউটে সমর্থকদের মনে ধরে গিয়েছিল কাঁপন। ঈদের দিনের আনন্দ নষ্ট হয়ে যায় কিনা সেই শঙ্কা করছিলেন কেউ কেউ। তবে সেন্ট ভিনসেন্টে খেলা হয়েছে এমন এক উইকেটে যেখানে মামুলি পুঁজিও আসলে বিশাল। তানজিম হাসান সাকিব, মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ে মিলেছে সেই প্রমাণ। নেপালকে অনায়াসে হারিয়ে তাই সুপার এইট রাউন্ড নিশ্চিত করেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

সোমবার আর্নোস ভেল মাঠে নেপালকে ২১ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচের তিনটা জিতে নিশ্চিত করেছে সেরা আট। সুপার এইটে গ্রুপ ওয়ানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তান। 

আগে বোলিং বেছে উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে ১০৬ রানে আটকায় নেপালিরা। তবে নিজেরা ব্যাট করতে নেমে  করতে পেরেছে স্রেফ ৮৫ রান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম রান ডিফেন্ড করার রেকর্ডও এটি। মাত্র ৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে বাংলাদেশের সফল বোলার তানজিম। মোস্তাফিজ এক উইকেট কম পেলেও দারুণ বল করে দেন স্রেফ ৭ রান। 

রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভার পার করে দিয়ে তৃতীয় ওভারে উইকেট হারায় নেপাল। কুশাল ভুর্টাল তানজিমের ফুলটস বলে হয়ে যান বোল্ড। এক বল পরই আরেক উইকেট। এবার অনিল শাহ অহেতুক তুলে মারতে গিয়ে দেন সহজ ক্যাচ। ৯ রানে ২ উইকেট ফেলে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। 

তানজিম তার পরের ওভারে ধরেন আরেক শিকার। প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটার অধিনায়ক রোহিত পাউডেল তানজিমের বলে স্কয়ার কাট করে দেন পয়েন্টে ক্যাচ। ২০ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় নেপাল। এই অবস্থা থেকে ক্রমাগত কোণঠাসা হতে থাকে তারা। 

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে এসে মোস্তাফিজ আউট করেন আসিফ শেখকে। ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট কাভারে সাকিবের হাতে ধরা দেন ১৭ রান করা ব্যাটার। তানজিম তার শেষ ওভারে ধরেন আরেক শিকার। সন্দীপ জোরা তানজিমকে আলগা শট মারতে গিয়ে দেন সহজ ক্যাচ। ২৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে চলে যায় হিমালয়ের দেশ। 

মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেটে স্পিনাররা বল করতে আসার আগেই নেপাল ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়। স্পিনাররা এসেও চাপ জারি রাখেন। উইকেটে লেন্থে বড়ে বেশ কিছু বল নেয় আচমকা বাউন্স, আবার কিছু বল হয়ে যায় নিচু। ছিলো অনেক টার্ন। ব্যাটারদের জন্য প্রায় নরক পরিস্থিতিতে বোলারদের রাজত্ব থাকাই ছিলো স্বাভাবিক। 

২৬ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর  চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় জুটি গড়েন দীপেন্দ্র আইরি ও কুশল মাল্লা। শুরুতে থিতু হতে অনেক সময় নেন তারা, তাতে রানের চাপ বাড়ে। এই দুজনের ৫৮ বলে ৫২ রানের জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজ। নিজের তৃতীয় ওভারে স্লোয়ার বলে কাবু করে করেন উড়িয়ে মারতে যাওয়া মাল্লাকে। দীপেন্দ্র কিছুটা সম্ভাবনা জাগালেও বাকিরা আর পারেননি। গুলশান ঝা ক্রিজে এসেই ক্যাচ দেন তাসকিনের বলে। 

দীপেন্দ্র পারেননি মোস্তাফিজকে সামলাতে। ১৯তম ওভারে উইকেট মেডেন নেন বাংলাদেশের সেরা পেসার। শেষ ওভারে ২২ রানের সমীকরণ মেলানোর কাছেও যেতে পারেনি নেপাল। ওই ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে সাকিব বিশ্বকাপে এবার উইকেটের খাতা খুলেন। 

এর আগে টস হেরে চরম বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলেই তানজিদ হাসান তামিম ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে উড়াতে গিয়ে বোলার সোমপাল কামির হাতেই দেন সহজ ক্যাচ।

অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আগের দুই ম্যাচে ওপেন করলেও এদিন নেমে যান তিনে। কিন্তু রানের দেখা এবারও মেলেনি। দীপেন্দ্র আইরির অফ স্পিনে কাবু তিনি। ভেতরে ঢোকা বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হন ৫ বলে ৪ রান করে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেললেও লিটন দাস এদিন আবার ব্যর্থ। দুই অঙ্কে গিয়েই সোমপালের বলে পুল করে দেন সহজ ক্যাচ। শুরুর দুই ম্যাচের ব্যাটিং হিরো তাওহিদ হৃদয় গত ম্যাচের পর এদিনও রান পাননি। রোহিত পাউডালের নিরীহ স্পিন তুলে মারতে গিয়ে আউট হন ৯ রান করে।

উইকেটের ভাব বুঝে মাহমুদউল্লাহ খেলছিলেন ভালোই, থিতুও হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়ে থামেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।

অভিজ্ঞ সাকিব নিজেও থিতু হয়ে টিকতে পারেননি। পাউডালের বলে পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে হন এলবিডব্লিউ।  রিশাদ হোসেনের আগে পাঠানো হয় তানজিম সাকিবকে। তিনি এসে পারেননি। সন্দীপ লামিচানের গুগলিতে হন বোল্ড। ৬৯ রানে বাংলাদেশ হারায় ৭ উইকেট।

জাকের আলি অনিক ছিলেন শেষ স্বীকৃত ব্যাটার। টার্ন ও নিচু বাউন্সের বিপক্ষে তিনি চেষ্টা চালাচ্ছিলেন প্রবল। কিন্তু তাকেও ফেরান লামিচানে। গুগলিতে পরাস্ত করে বোল্ড করেন ডানহাতি ব্যাটারকে। ২৬ বলে ১২ রান করেন এই ব্যাটার। ৭৫ রানে বাংলাদেশ হারায় ৮ উইকেট।

এরপর রিশাদ হোসেন ছক্কা-চারে দেখান ঝাঁজ। কিন্তু ঠিকমতো ঝড় তুলতে পারেননি তিনি। ১৮তম ওভারে লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ব্যাটার। তাসকিন আহমেদ ১৫ বলে যোগ করেন ১২। শেষ দুই উইকেটে মহা মূল্যবান ৩১ রান ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বাংলাদেশ একশো পার হওয়ার পরই নেপালের জন্য আসলে কাজটা কঠিন হয়ে গিয়েছিলো। বাংলাদেশের বোলাররা কোন ভুল না করায় সেই বাস্তবতাই দেখেছে আইসিসির সহযোগি সদস্য দেশ। 

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

3h ago