‘স্বামী বিএনপি করে, তার লিগা তারে ডিভোর্স দিলাম’—যা জানা গেল

Savar_DS_Map.jpg
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় এবং নির্যাতনের অভিযোগে সাভারে এক নারী তার স্বামীকে 'ডিভোর্স' দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

তবে ওই নারীর পরিবার, প্রতিবেশী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলছেন এ অভিযোগের সত্যতা নেই।

পারিবারিক সূ্ত্রে জানা যায়, ৩০ বছর আগে ফরহাদ-রহিমার বিয়ে হয়। তাদের দুই মেয়ে আছে। বড় মেয়ে দেশের বাইরে থাকে। ছোট মেয়ে বিয়ের পর মানিকগঞ্জে থাকেন।  

গত ২৪ আগস্ট রহিমা বেগম সাভার মডেল থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। থানা থেকে রহিমা গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন স্বামী বিএনপি করে বিধায় তিনি স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন।

গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রহিমাকে বলতে শোনা যায়, 'আমার স্বামী বিএনপির মিছিলে যায়। তার লিগা আমি তারে ডিভোর্স দিলাম। আমি একজন আওয়ামী লীগের সন্তান। আমার বাবা আওয়ামী লীগ করত। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিল। আমি এই কারণে তারে ডিভোর্স দিয়ে দিলাম। তার সাথে আমি সংসার করব না। যেহেতু সে বিএনপির সাথে থাকে।'

জানা যায়, ফরহাদ-রহিমা দম্পতি গত দুই বছর ধরে খাসেরচর এলাকায় থাকেন।

রহিমার ছোট মেয়ে রিয়া বলেন, 'পারিবারিক কলহের কারণে বাবা-মা দুজনে বিভিন্ন সময় আলাদা বসবাস করেছেন। মা কোর্টে উকিলের সাথে কাজ করতেন। সম্প্রতি বাবা অন্যত্র বিয়ে করেছেন। মাও বাবাকে তালাক দিয়েছেন। বাবাকে বিএনপির তকমা দিয়ে তালাক দিয়ে গণমাধ্যমে মায়ের সাক্ষাৎকার দেখে আমরা বিব্রত। বাবাতো বিএনপি করে না এছাড়া দুজনে আবার মিলে যাবে। গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদ প্রকাশের আগে বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত ছিল আসলে আমার বাবা বিএনপি করে কিনা।'

তিনি বলেন, বাবা মিটিং মিছিল তো দূরের কথা নিজের জীবন সম্পর্কেই উদাসীন। 

খাসেরচর এলাকায় রহিমা-ফরহাদ দম্পতির একাধিক প্রতিবেশী ডেইলি স্টারকে বলেন, দুই বছর রহিমা ও ফরহাদ ওই এলাকায় বসবাস করতেন। পারিবারিক কলহ হলেই রহিমা পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিতেন। আবার নিজেই ছাড়িয়ে আনতেন। 

ধরলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এবং সিংগাইর থানার খাসিরচর এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আলীম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রহিমাকে তিনি চেনেন। তিনি সাভারে বসবাস করেন। খাসিরচর এলাকাতেও তিনি ছিলেন। আমি যতদূর জানি তার স্বামী ফরহাদ নেশা করত কিন্তু কোনো দল কিংবা কোনো দলের সমর্থনে মিটিং মিছিলে যায়নি। তার নামে বিএনপির কোনো মামলাও নাই। পারিবারিক ঝামেলা হলেই তিনি স্বামীকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিতেন। তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে বিএনপি করার অভিযোগ এনেছেন এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে।

ধরলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন জানান, ফরহাদ কোনো মিটিং এ ছিল আমরা দেখি নাই। আমরা তাকে ভালোভাবে চিনিও না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে তিনি আমাদের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিনা।

সাভার মডেল থানায় দায়ের করা  সাধারণ ডায়েরিতে রহিমা অভিযোগ এনেছেন, রহিমা বেগমকে তার স্বামী বিগত ১০ বছর ধরে নির্যাতন করে আসছেন। দুই মেয়েসহ তাকে কোনো ধরনের ভরণপোষণ দেন না। এসব কারণে স্বামীকে তালাকের উকিল নোটিশ পাঠালে রহিমা বেগমকে তার স্বামী প্রাণনাশের হুমকি দেন। 

সাভার মডেল থানার পরিদর্শক দীপক চন্দ্র সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রহিমা বেগম তার স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। 

স্বামী বিএনপি করার কারণে তাকে ডিভোর্স দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, বিষয়টি আমরা জানি না। তিনি নির্যাতনের জন্য সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে গণমাধ্যমে রহিমার এরকম সাক্ষাৎকার দেখেছি।

রহিমার স্বামী ফরহাদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমি যদি বিএনপি করি আমার এলাকার লোকজন জানবে৷ সেটা তো জানে না। রহিমা মিথ্যা বলেছে।

এনিয়ে রহিমার বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

3h ago