‘ছাত্রদল’-বিএনপির সংঘর্ষ: পাল্টাপাল্টি মামলা, জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেপ্তার

নরসিংদীর পলাশে উপজেলায় 'ছাত্রদলের' সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের মামলায় জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর কবির জুয়েলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গত রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার বিএডিসি মোড়ে 'ছাত্রদলের নেতাকর্মী' একটি মিছিল বের করেন। অন্যদিকে জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর কবির জুয়েল শোডাউন করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সে সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে 'ছাত্রদলের' কর্মী ইসমাঈল মিয়া ও পথচারী সোহেল মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া, পুলিশসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।
ওই ঘটনায় পলাশ উপজেলা ছাত্রদল ও জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়।
সংঘর্ষের একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তিন মিনিট ২৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একদল যুবক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে ধাওয়া দিচ্ছে। তাদের বলতে শোনা যায় 'গুলি কর, গুলি কর'। সঙ্গে সঙ্গে গোলাপি রঙের টি-শার্ট পরা এক যুবককে পিস্তল উঁঠিয়ে গুলি করতে দেখা যায়।
ভিডিওটি পলাশ উপজেলা ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান পাপন বলেন, 'ছাত্রদলের শান্তি মিছিলে সন্ত্রাসী জুয়েলের সরাসরি নেতৃত্বে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি করা হয়েছে, ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে।'
'গুলি ছোড়ার যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি আমাদের ওপর গুলি ছোড়ার দৃশ্য,' বলেন তিনি।
পাপন আরও বলেন, 'ছাত্রদল কর্মী ইসমাঈলের বুকে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। একজন পথচারীও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া, বেশ কয়েকজন ছাত্রদল কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।'
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঈসমাইল বর্তমানে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। তবে গুলিবিদ্ধ পথচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা তদন্ত করছি, গুলিবর্ষণ করা ব্যক্তিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।'
জুয়েল পুলিশি হেফাজতে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তার বড় ভাই মনিরুল কবিরের দাবি, জুয়েলকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। তার ভাই হামলায় জড়িত নয়।
কবির আরও দাবি করেন, তার ভাইয়ের ওপর হামলা হয়েছে, গুলি করে আহত করা হয়েছে।
'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাণিত হয়ে শহর বিএনপির সভাপতি আলম মোল্লাসহ স্থানীয় বিএনপির নেতাদের মদদে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দিয়ে এই হামলা চালিয়েছেন,' অভিযোগ করেন তিনি।
তার মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি তার ভাইয়ের কর্মী-সমর্থকদের নয়।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আলম মোল্লা বলেন, 'বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল কবির জুয়েল গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রয়েছে। জুয়েল এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এবং ছাত্রদলের ওপর সে ও তার লোকজন আগে হামলা চালিয়েছে, গুলি করেছে—যার প্রমাণ রয়েছে।'
'আমি তার ওপর হামলা করিনি, তার ওপর হামলায় আমি জড়িত না,' বলেন তিনি।
অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান নাহিদ বলেন, 'জেলা থেকে পলাশ উপজেলা ছাত্রদল কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যাদের ছাত্রদল বলা হচ্ছে, এরা স্বঘোষিত সভাপতি-সেক্রেটারি।'
তিনি বলেন, 'গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, থানা ছাত্রদলের অনুমোদন ও তদারকি জেলা ছাত্রদলের হাতে ন্যস্ত। কিন্তু পলাশের বাস্তবতা ভিন্ন। ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে যারা বিএনপি নেতার ওপর হামলা চালিয়েছে, সেটা অপরাধ ও ঘৃণ্য কাজ। জেলা ছাত্রদল তাদের অপরাধের দায় নেবে না।'
'ঈসমাইল নামে যাকে ছাত্রদল কর্মী বলা হয়েছে, সে আসলে ছাত্রলীগের কর্মী। আমরা তাকে কোনো কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করতে দেখিনি। সামগ্রিক বিষয় আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলকে অবহিত করব,' যোগ করেন তিনি।
Comments