ডলারের গরম বাজার আরও উত্তপ্ত

ডলারের দাম
রয়টার্স ফাইল ফটো

দেশের খোলা বাজারে ডলারের দাম আবারও বেড়েছে। ব্যাংক ও খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় হারের পার্থক্য গত কয়েক মাস কম থাকার পর তা আবারও বাড়তে শুরু করেছে। এটি রেমিট্যান্স প্রবাহে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ব্যাংকগুলোয় ডলার ১০৯ টাকা থেকে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১১৬ টাকা ৯৫ পয়সা থেকে ১১৭ টাকায়।

গত কয়েক মাস ব্যাংক ও খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় হারের মধ্যে ব্যবধান কম ছিল।

ব্যাংকে ডলারের মজুত কম, এর দাম নির্ধারণ ও বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ব্যাংকও ভ্রমণকারীদের কাছে ডলার বিক্রি করছে না। ফলে ডলার কিনতে তারা খোলা বাজারে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

রাজধানীর মতিঝিলে বেশ কয়েকটি মানি চেঞ্জার গতকাল সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা ১১৬ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে ১১৭ টাকায় ডলার বিক্রি করছেন।

মানি চেঞ্জারদের একজন বলেন, 'চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া ব্যক্তি বা ভ্রমণকারীরা ডলার কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।'

মানি চেঞ্জাররা বিদেশি মুদ্রার যে মূল্য তালিকা করেছেন সেখানে ডলার বিক্রির দাম ১১২ টাকা ও কেনার দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই হার খুব একটা মানা হয় না।

মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি হেলাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘোষিত বিনিময় হার না মানলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেডা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) নির্ধারিত হারে লেনদেনে রাজি হলেও ডলারের খোলা বাজারে নতুন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা মেনে প্রতি মাসে ডলারের দাম নির্ধারণ করে।

গত ১ আগস্ট তারা রেমিট্যান্সের বিনিময় হার ১০৯ টাকা নির্ধারণ করে। আমদানিকারকদের জন্য প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা ও রপ্তানিকারকদের জন্য ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংক নির্ধারিত ডলারের দাম খোলা বাজারে বাড়তি চাহিদা তৈরিতে সহায়তা করেছে।'

তার মতে, 'খোলা বাজারে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যখন ডলারপ্রতি ১১৭ টাকা পাবেন, তখন তারা ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো থেকে বিরত থাকবেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তন করা উচিত।'

বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনের সময় বৈশ্বিক সংস্থাটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলারের দাম বেঁধে দেওয়ার পরিবর্তে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর পরামর্শ দেয়।

চলতি আগস্টে রেমিট্যান্স প্রবাহের ধীর গতির কারণেও এই ডলারের বাজার অস্থির হয়েছে।

গত ১ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্টের মধ্যে প্রবাসীরা ১৩২ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত মাসের একই সময়ের তুলনায় কম।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের ভাষ্য, শিক্ষার্থী ও ভ্রমণকারীরা ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলার পাচ্ছেন না। তারা মানি চেঞ্জার ও অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল থেকে ডলার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

ব্যাংকগুলো সাধারণত শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য ফাইল খোলার অনুমতি দিলেও বেশির ভাগ ব্যাংকই ডলার ঘাটতির জন্য ফাইল খুলছে না।

বাফেডার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মানি চেঞ্জাররা ঘোষিত হারের তুলনায় বেশি অর্থ নিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।'

প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে হুন্ডির দিকে ঝুঁকে পড়ায় ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে, যা রেমিট্যান্স প্রবাহকে প্রভাবিত করতে পারে।

গত মে মাসে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক এক্সচেঞ্জ রেটের পার্থক্য ১ শতাংশ বাড়লে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ রেমিট্যান্স আনুষ্ঠানিক থেকে অনানুষ্ঠানিক খাতে চলে যায়।

প্রবাসী শ্রমিকরা গত জুলাইয়ে ১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ কম। যদিও সম্প্রতি রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশি কাজের জন্য বিদেশে গেছেন।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যে জানা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯৩ কর্মীকে বিদেশে পাঠিয়েছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বাংলাদেশের আমদানি বিলের কারণে রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বিদেশি মুদ্রার বাজার গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২৩ আগস্ট দেশের রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। এটি ইউক্রেন যুদ্ধের আগের সময়ের তুলনায় অনেক কম।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

3h ago