ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনছেন গার্মেন্টস মালিকরা

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি
স্টার ফাইল ফটো

দেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা তাদের বাড়তি অর্থ নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যাওয়া সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এমন উদ্যোগ নিচ্ছেন শিল্পপতিরা।

সফল শিল্পপতিরা বিদ্যুৎ, আবাসন, কৃষি, গবাদি পশুর খামার, হোটেল, ব্যাংকিং, চা বাগান, কম্পিউটার চিপস, বিমা, পুঁজিবাজার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, লিজিং, ই-কমার্স, নির্মাণশিল্প, ওষুধ ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন।

১৯৭০-এর দশকের শেষভাগ থেকে গার্মেন্টস মালিকরা বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। তখন স্থানীয় উদ্যোক্তারা তৎকালীন কোটা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি পোশাককে সফল খাতে পরিণত করেন।

তারা ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় রপ্তানি আয়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ অবদান রাখছেন। বর্তমানে ১০০টিরও বেশি বস্ত্র ও তৈরি পোশাক কারখানার বার্ষিক রপ্তানি ৫০ কোটি ডলার।

দেশের ব্যাংক, বিমা, গণমাধ্যম ও চা বাগানের মতো খাতে বিনিয়োগকারী শীর্ষ গার্মেন্টস মালিকদের মধ্যে হা-মীম গ্রুপ অন্যতম।

হা-মীমের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদিও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ শুরু করেছি, তবুও আমার প্রধান লক্ষ্য টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাত।'

আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর চাহিদা মেটাতে এই প্রতিষ্ঠানটি আরও বেশি ডেনিম ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড় উৎপাদনের মাধ্যমে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ বস্ত্র ও তৈরি পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপ বর্তমানে টাইলস, সিরামিক ও ওষুধ খাতের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্য খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে।

ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এসব খাতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে।'

তিনি জানান, ডিবিএল'র মূল ব্যবসা পোশাকশিল্প। এটি ইতোমধ্যে অনেক প্রসারিত হয়েছে।

আবাসন, ই-কমার্স, হোটেল ও লিজিং কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে অপর শীর্ষ বস্ত্র ও তৈরি পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অনন্ত গ্রুপ।

অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য খাতে বিপুল বিনিয়োগ সত্ত্বেও আমাদের প্রাথমিক ফোকাস টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাত।'

এই টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস উদ্যোক্তা জানান যে তিনি ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উত্পাদন করতে কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন।

১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন এই উদ্যোক্তা।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঝুঁকি কম ও মুনাফা বেশি হওয়ায় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশীয় অর্থনীতির পরিধি বাড়ছে। নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে, রপ্তানিতে ঝুঁকির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার বিষয়টিও আছে।'

গত বছর এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ১৬তম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়।

মো. সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, 'বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি বাড়ছে।'

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী মনে করেন, যখন সম্পদ বেড়ে যায়, তখন উদ্যোক্তারা নতুন উদ্যোগ নেন। দেশে এখন তাই হচ্ছে।

'সুযোগ তৈরি হওয়ায় ব্যবসাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়ার এখনই সময়,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই ব্যবসায়ী নেতা মনে করেন, বাংলাদেশকে টেক্সটাইল যন্ত্রপাতি উত্পাদন করতে হবে, যেহেতু দেশটি এখন এই খাতে খুব শক্তিশালী।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের বৈশ্বিক পোশাকশিল্পে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের অবদান ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। পরের বছর তা বেড়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ হয়।

নতুন নতুন খাতে দেশের শীর্ষ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের মানে এই নয় যে তারা গার্মেন্টস ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বরং, তারা পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির জন্য লাখ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে।

বর্তমানে ২০০টি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (এলইইডি) সার্টিফাইড কারখানা নিয়ে পরিবেশবান্ধব কারখানার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বসেরা। আরও ৫০০ কারখানা এমন স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছে।

এলইইডি বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো দেখভাল করে।

এ ছাড়া, স্থানীয় গার্মেন্টস মালিকরা উচ্চমানের মূল্য সংযোজন পোশাকের উৎপাদন বাড়াচ্ছে। এর ফলে রপ্তানি বাজারে সাধারণ গার্মেন্টস পণ্যের তুলনায় বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে।

আমিন হিলালীর মতে, 'ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ দিতে হবে, যাতে তারা একদিন বড় হতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

US customs will apply a tariff rate only to the non-American portion of a product's value

9h ago