চীনের ঋণে প্রকল্প: একটি শেষ, ৮টি চলছে ‘পুরোদমে’
চীনের ঋণে শুরু করা উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে একটি শেষ হয়েছে এবং ৮টি প্রকল্প 'পুরোদমে' চলছে বলে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে ২০ বিলিয়ন ডলার খরচে ২৭টি প্রকল্প নিয়ে 'বিনিয়োগ ও উৎপাদন সক্ষমতা সহযোগিতা জোরদারকরণ' সমঝোতা স্মারক সই হয়।
৯ প্রকল্পের জন্য ৮ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণের চুক্তি হয়। এর মধ্যে চীন গত জুন পর্যন্ত ৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
ইআরডির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই মুহূর্তে ৮টি প্রকল্প 'পুরোদমে' চলছে ও তহবিল বিতরণও 'সন্তোষজনক'।
তিনি বলেন, 'প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা, চীনা দূতাবাস ও চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বসে ইআরডি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করছে।'
'ডেভেলপমেন্ট অব আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেজ থ্রি' প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। এর আওতায় ২ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষকে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে সংযুক্ত করতে কারিগরি জ্ঞানের আদান-প্রদান বাড়ানো ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এতে খরচ হয়েছে ১৫৬ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলার। এই অর্থ পুরোটাই পাওয়া গেছে।
চলমান ৮ প্রকল্পের মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল'র নির্মাণ কাজ শেষের পথে।
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশে টানেলটির ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
২৮ অক্টোবর টানেলটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারিখটি শতভাগ নিশ্চিত।'
প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে ৭০৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার। গত জুন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৬০ দশমিক ৫১ মিলিয়ন ডলার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, 'ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল লাইন' প্রকল্পের প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড প্রকল্পটির সময় একনেকের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে চতুর্থবারের মতো বাড়িয়েছে। এটি আরও ১ বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন করা হয়েছে।
বিদেশি ঠিকাদার ও পরামর্শকদের অর্থ দেওয়ার সময় ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে ৪৬৫ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন ডলার। গত জুন পর্যন্ত ৫৫০ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে।
এর পরেই আছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ। গত জুন পর্যন্ত এর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্যয় সংশোধন এড়াতে ঋণ পাওয়ার মেয়াদ ১ বছর বাড়ানোর আবেদন করেছিল।
প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন আশা করছেন, আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হবে।
রেল লাইনটির খরচ ২ হাজার ৬৬৭ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলার। গত জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৯৯১ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে।
ঢাকা থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি ১৫ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণসহ কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল।'
এর খরচ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ধরা হয়েছে। এর মধ্যে জুন পর্যন্ত ১৭০ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে। এটি শেষ হতে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া, ৩ প্রকল্পের মূল্যায়ন করার পাশাপাশি ৭ প্রকল্পের জন্য ঋণের আবেদন করা হয়েছে।
Comments