নরসিংদী

আবাসিক এলাকায় পোল্ট্রি খামার, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গত সোমবার পর্যন্ত ২০টির বেশি খামারের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে।
পোল্ট্রি খামারের বর্জ্য মাছের খামারের জন্য বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: স্টার

পরিবেশ নীতি উপেক্ষা করে আবাসিক এলাকায় পোল্ট্রি খামার এবং অপরিচ্ছন্নতার অভিযোগে নরসিংদী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

তাদের অভিযোগ, এসব পোল্ট্রি খামারের বর্জ্যের তীব্র দুর্গন্ধে বসতবাড়িগুলোতে বসবাস করতে পারছেন না তারা। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, এনিয়ে লিখিতভাবে জানানো হলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

গত ১২ মার্চ পরিবেশ দূষণের অভিযোগে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরে ও ২৫ জুন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন নরসিংদী পৌর এলাকার ভুক্তভোগীরা। এতে বলা হয়, নরসিংদী পৌর এলাকার বীরপুরে আবাসিক এলাকায় ২০১৮ সালে আরিয়ান পোল্ট্রি ফার্ম স্থাপন করেন ওই এলাকার সালাউদ্দিন ওরফে সেলিম (৪৫)। পরে এটি তিন শেডে সম্প্রসারণ করা হয়। এসব খামারের মুরগির বিষ্ঠা/ বর্জ্য বিভিন্ন মাছের খামারে বিক্রির জন্য জমিয়ে রাখা হয়। যা থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশে। এতে করে পরিবেশ দুষণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

পোল্ট্রি ফার্মের পাশেই বাড়ি শিউলি বেগমের। তিনি বলেন, 'প্রতিদিন দুপুর থেকে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত বিষ্ঠা জমিয়ে রাখায় দুর্গন্ধ প্রকট হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ করায় আমাকে মারধরসহ বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। গত ১০ জুলাই থানায় অভিযোগ করেছি। তীব্র দুর্গন্ধে রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েছি, অন্যত্র চলে যাওয়ার সক্ষমতা না থাকায় অসহায়ের মতো হয়ে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছি।'

আরেক ভুক্তভোগী শাহিদা আক্তার বলেন, 'খামারের তিনটি শেডে বর্তমানে ৮ হাজারের বেশি মুরগি আছে। সেসব মুরগির বর্জ্য জমিয়ে তারা বিক্রি করে। দুর্গন্ধে বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় আমি ও আরেক প্রতিবেশী বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করতে বাধ্য হয়েছি। স্থানীয়ভাবে একাধিক সালিশ হলেও এসব সালিশে কাজ হয়নি।'

সরেজমিনে দেখা যায়, খামারটির আশেপাশে অন্তত ১৫-২০টি বাড়িতে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। তিন জন শ্রমিক ড্রামে করে মুরগির বিষ্ঠা ভ্যানে তুলছেন। খামারটির পাশেই দুটি বাড়ির মালিক ঘর ছেড়েছেন দুই বছর আগে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, 'স্থানীয় মাছের খামারের জন্য প্রতিদিন এখান থেকে ১০-১২ ড্রাম পোল্ট্রির বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতি কেজির দাম ২০ টাকা। আমরা প্রতিদিন ১০টি ড্রামে করে প্রায় ৪৫০ কেজির মতো বর্জ্য নিয়ে যাই।

অভিযুক্ত আরিয়ান পোল্টি ফার্মের মালিক সালাহ উদ্দিন ‌ওরফে সেলিম বলেন, 'ব্যবসা করতে যাদের অনুমোদন দরকার, তাদের অনুমোদন নিয়েই শুরু নিয়েছি। দু-চার জনের সমস্যার জন্য আমি ব্যবসা বন্ধ রাখতে পারব না। আমি দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করে আসছি, আমার কাগজপত্র আছে।'

কথা কাটাকাটি হয়েছে তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন সালাহ উদ্দিন।

নরসিংদী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভুঁইয়া বলেন, 'খামার থেকে আশেপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পেয়েছি। তবে আমাদের হাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত না থাকায় খামারটি তুলে দিতে পারছি না। আর ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।'

এদিকে, গত ১১ মে একই ধরনের অভিযোগে শিবপুর উপজেলার পাড়াতলায় শামিম পোল্ট্রি ফার্মের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন আশরাফুল ইসলাম ও আশেপাশের প্রতিবেশীরা। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর খামারটি সরিয়ে নিতে বললেও খামারের মালিক সরিয়ে নেননি।

এ বিষয়ে জানতে ফার্মের মালিক শামীমকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ দুটি খামারের মতো জেলার আরও খামারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা আছে।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গত সোমবার পর্যন্ত ২০টির বেশি খামারের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে।

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর বলছে, কেবল বায়োগ্যাস প্লান্ট ব্যবহার করলেই খামার স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত  লাভের আশায় যারা মুরগির বিষ্ঠা মাছের খাবারের জন্য জমা করে রাখেন, তাদের খামার থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

নরসিংদী জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মতে, নরসিংদীতে ডিম উৎপাদনকারী পোল্ট্রি খামার আছে ১৩২০টি, যেখানে মুরগির সংখ্যা প্রায় ২১ লাখ ৬৫ হাজার। প্রতি বছর ৪৩ কোটি ডিম উৎপাদিত হয় এসব খামার থেকে।

নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ নাজমুল হুদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আরিয়ান পোল্ট্রি খামারের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে গত ১২ মার্চ লিখিত  অভিযোগ করা হয়। তদন্ত করে খামারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযোগের বিষয়ে খামার মালিক সালাউদ্দিনের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকার ইনফোর্সমেন্ট শাখায় অভিযোগ পাঠানো হয়েছে এবং তার লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ করে দিয়েছি। ঢাকা থেকে সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত আমরা কিছু করতে পারব না। আর শামীম পোল্ট্রি খামারের বিরুদ্ধে ২০ দিনের মধ্যে খামার সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু খামারটি তারা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে নিয়েছে। আমাদেরকে তারা আর কিছু জানায়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'অন্যান্য খামারগুলোর বিষয়ে একই কথা। আমরা পরিবেশ দূষণের অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।'

নরসিংদীর অতিরিক্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, 'নরসিংদীতে ২০টির বেশি খামারের বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ রয়েছে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আমরা শুধু উৎপাদনকে প্রাধান্য দিচ্ছি না, পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দিচ্ছি।'

Comments

The Daily Star  | English
PM Sheikh Hasina

Govt to seek extradition of Hasina

Prosecutors of the International Crimes Tribunal have already been appointed and the authorities have made other visible progress for the trial of the ones accused of crimes against humanity during the July students protest

40m ago