দেশে দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে

যেসব নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভালো সেগুলোকে ‘গ্রিন’, মাঝারি অবস্থায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ইয়েলো’ ও দুর্বল অবস্থায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘রেড জোনে’ ভাগ করা হয়েছে।
দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠান
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্ট্রেস টেস্ট রিপোর্ট অনুসারে, গত বছর মোট ৩৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) 'রেড জোন' বা দুর্বল অবস্থানে ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০২২-এ বলা হয়, ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ১২।

গত বছর ৭ নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান 'ইয়েলো জোন' ও ১৪টি 'গ্রিন জোনে' ছিল।

যেসব নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা ভালো সেগুলোকে 'গ্রিন', মাঝারি অবস্থায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে 'ইয়েলো' ও দুর্বল অবস্থায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে 'রেড জোনে' ভাগ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২১টি নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান চাপে থাকলেও তারা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে। তবে ১৪টি প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে সেগুলো ঝুঁকিতে আছে।

প্রতিবেদনে নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়নি।

২০২০ সাল থেকে, ভালো অবস্থানে থাকা নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমাগত কমছে এবং খারাপ অবস্থায় থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েই চলছে।

২০২০ সালে ভালো অবস্থায় থাকা নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৮টি। ২০২১ সালে ১৬ ও ২০২২ সালে তা ১৪-য় নেমে আসে।

অন্যদিকে, ২০২০ সালে দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৩ এবং ২০২১ সালে তা কমে হয় ১২টি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার জন্য বেশি সংখ্যক ঋণগ্রহীতার অর্থ পরিশোধ না করাকে দায়ী করা হয়েছে।

নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ও লিজের সর্বোচ্চ ১৯ শতাংশ বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও স্যানিটারি সেবা, ১৪ শতাংশ তৈরি পোশাক ও ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ বস্ত্র খাতে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে জানা যায়, মার্চে নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ ছিল ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এটি আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। মোট ঋণের প্রায় এক চতুর্থাংশ খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ১৪ নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের দুর্বল অবস্থার মূল কারণ খেলাপি ঋণ।

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ঋণগ্রহীতারা ঋণ দেরিতে পরিশোধের সুবিধা পেয়েছিলেন। গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া জানান, গত বছর এই সুবিধা তুলে নেওয়ায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।

গত মার্চ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খেলাপি ছিল ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের। এর পরিমাণ ৩ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য জানাচ্ছে, এর মধ্যে এফএএস ফাইন্যান্সের ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা, উত্তরা ফাইন্যান্সের ১ হাজার ১৩ কোটি টাকা, পিপলস লিজিংয়ের ৯০৭ কোটি টাকা, ফিনিক্স ফাইন্যান্সের ৯৬৭ কোটি টাকা, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৮৮৬ কোটি টাকা, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ৮৪৮ কোটি টাকা, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ৮৩৫ কোটি টাকা, আভিভা ফাইন্যান্সের ৭৯৮ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির ৭৫৫ কোটি টাকা রয়েছে।

২০২০ সালে পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং, উত্তরা ফাইন্যান্স ও ফার্স্ট ফাইন্যান্সসহ এক ডজন নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অনিয়ম ও আর্থিক কেলেঙ্কারির খোঁজ পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নন-ব্যাংকিংগুলোয় খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া বলেন, 'কর্পোরেট গভর্নেন্সের অভাবে নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।'

বাংলাদেশে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ দেওয়ায় অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির কারণে নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইমেজ সংকটে আছে।

আমানতকারীদের আস্থা কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিল সংকট পড়েছে, যা সেগুলোর খারাপ অবস্থার আরেকটি কারণ।

'নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে,' উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক মুঈনুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারা এই খাতের প্রকৃত চিত্র লুকিয়ে রেখেছেন। এটি প্রকাশ পেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কিন্তু, তারা এটি বেশিদিন লুকিয়ে রাখতে পারবেন না।'

'কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এ খাতের ভঙ্গুর অবস্থার উন্নতি হবে না' বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Former planning minister MA Mannan arrested in Sunamganj

Police arrested former Planning Minister MA Mannan from his home in Sunamganj's Shatiganj upazila yesterday evening

26m ago