‘চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বরাদ্দ ১১ হাজার কোটি টাকা, নগরবাসী এখনো সুফল পাওয়া শুরু করেনি’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছেন অন্য কেউ তা করেননি উল্লেখ করে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনসহ সব উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল যেন জনগণ পায় সেজন্য সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, 'আশাতীতভাবে অনেক কিছু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ চট্টগ্রামের জন্য করেছে। কিন্তু এটির সুফল জনগণকে পেতে হবে। সুফল পেতে হলে যেকোনো কাজ সুচারুভাবে করতে হয় এবং জনগণের বিরক্তির উদ্রেক যাতে না হয় সেভাবে সময়মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেটির বাস্তবায়ন করতে হয়। সেটি না হলে অর্থ ও সময়ের অপচয় হয় এবং জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।'
শুক্রবার রাত ৮টায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সমন্বয় সভায় এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে ও জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামানের সঞ্চালনায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
হাছান মাহমুদ বলেন, 'গত সপ্তাহের প্রচণ্ড বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল এবং মানুষের ব্যাপক দুর্ভোগ হয়েছে। সেটি নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে বদানুবাদও হয়েছে। এটি আসলে আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য যখন এই প্রকল্প নেওয়া হয় এবং টাকাগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়, তখন ডলারের মূল্যমানে সেটির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এখনো ১১ হাজার কোটি টাকা, ওয়ান বিলিয়ন ডলারের সমান। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য এত বড় অর্থ বরাদ্দ ঢাকা শহরের জন্যও দেওয়া হয়নি, যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের জন্য দিয়েছেন। কিন্তু নগরবাসী এখনো সেটির সুফল পাওয়া শুরু করেনি। গতবারের বর্ষা এবং এবারের বর্ষায় যে পরিমাণ জলাবদ্ধতা হয়েছে, এতে নগরবাসীর মধ্যে কিছুটা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'বিভিন্ন সংস্থা যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে, সেখানে সমন্বয় করার জন্য আমরা ইতিপূর্বেও বেশ কয়েকবার বসেছি। বসার পর কিছুটা সমন্বয় হয়েছে, কিন্তু আরও সমন্বয়ের প্রয়োজন। সে কারণেই আজ আমরা বসেছি। এ ছাড়া, জঙ্গল সলিমপুরসহ আরও কিছু বিষয়াদি আছে।'
তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও প্রকল্প আছে। এত বড় প্রকল্প, এত মূল্যমানের প্রকল্প, এটির জন্য ভবিষ্যতে তো আবার এই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে না। কেন আমরা সুফল পাচ্ছি না, কোথায় সমস্যা, কোথায় সমন্বয়ের অভাব সেগুলো আলোচনা করার জন্যই আমরা সবাই মিলে এখানে বসেছি।'
তিনি বলেন, 'শিগগির বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে সড়ক টানেল। একইসঙ্গে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল স্থাপন করার জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হচ্ছে, একটি নতুন নগর নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে দশ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে ভবিষ্যতে। চট্টগ্রামের মানুষ এত উন্নয়ন কখনো দেখেনি এবং এত উন্নয়ন আশাও করেনি।'
সভায় চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ চন্দ্র দাশ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, পুলিশ সুপার এ কে এম শফিউল্লাহ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী শেখ তৌহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ চট্টগ্রাম ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং চট্টগ্রাম বন্দরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
Comments