কুবি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক ইকবালকে বহিষ্কারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ৩৩ নাগরিকের বিবৃতি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ। ফাইল ছবি

সংবাদপত্রে খবর প্রকাশের জেরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও একটি জাতীয় দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা ইকবাল মনোয়ারকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ৩৩ জন নাগরিক।

আজ রোববার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একাডেমিক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বহিষ্কারের ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা, যেখানে যথাযথ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলে গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি৷'

'আমরা অবিলম্বে ইকবাল মনোয়ারের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া এবং দুর্নীতি বিষয়ক বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি৷'

গত ৩১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীন বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে 'দুর্নীতি হচ্ছে, তাই বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে: কুবি উপাচার্য' শিরোনামে দৈনিক যায় যায় দিনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এরপর কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়েই গত ২ আগস্ট ইকবাল মনোয়ারকে সাময়িক বহিষ্কার করে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ তাদের দাবি, উপাচার্যের বক্তব্য 'বিকৃত করে' প্রচার করে 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ' করা হয়েছে।

৩৩ জন নাগরিক তাদের বিবৃতিতে বলেছেন, 'এ ক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, ছাত্র হিসেবে নয়, বরং একজন সংবাদকর্মী হিসেবে ইকবাল মনোয়ার পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠানটি কাভার করেছিলেন৷ সংবাদে কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে তা জানানোর সুনির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রতিবাদলিপি পাঠাতে পারেন এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগও দায়ের করতে পারেন৷ তা না করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার স্বাধীন সাংবাদিকতার অধিকার হরণের পর্যায়ে পড়ে৷ এর ফলে মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করেন, তাদের মধ্যে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হবে।'

'অন্যদিকে একটি অভিযোগে উক্ত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হলেও যেসব আইন প্রক্রিয়া আবশ্যক, তা মানা হয়নি। সংবাদ প্রকাশের পর প্রক্টরিয়াল বডি ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। পরে উপাচার্যের নেতৃত্বে সব প্রভোস্ট, ডিনসহ পদস্থ সবাইকে নিয়ে এক সভায় ওই সুপারিশ অনুমোদন করা হয়। কোনো শিক্ষার্থীকে যদি গুরুতর অপরাধেও শাস্তি দিতে হয়, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।'

'নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তা উপস্থাপন ও অনুমোদন হওয়ার পর সিন্ডিকেটে তা তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে এসবের কিছুই করা হয়নি৷ এতে প্রতীয়মান হয় যে, উপাচার্য ও তার প্রশাসন নিয়মের ব্যত্যয় করে একজন ছাত্রের প্রতি অবিচার করেছেন এবং স্বাভাবিকভাবে একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি অভিভাবকসুলভ আচরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷'

'আমরা মনে করি, এটি নিছক একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিককে বহিষ্কার নয়, এর সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও নাগরিক মর্যাদার প্রশ্নটি জড়িত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে আইন, বিধি, নিয়ম ও অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তা প্রতিপালনের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই।'

এই বিবৃতিতে সই করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্ল্যাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) আ ম স আ আমিন, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী, পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, পরিবেশ ও জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ক বিশ্লেষক এম জাকির হোসাইন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কামরুন্নেসা খন্দকার, পরিবেশবিজ্ঞানী অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবুল কালাম মানিক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ফজলে রেজা সুমন, বিআইপি সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-ইউএস'র বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কান্ট্রি স্পেশালিষ্ট সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, সায়েন্টিফিক বাংলাদেশের সম্পাদক ড. মুনির উদ্দিন আহমেদ, নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণের (নাবিক) সভাপতি ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, জলবায়ু গবেষক ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ, আইনজীবী অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ব্যারিস্টার মো. জীশান মহসীন, নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুসতাসীম তানজীর, নারী উদ্যোক্তা ও মানবাধিকার কর্মী আশরাফি হাসান, সিভিল রাইটস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (সিআরআই,বি) এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট আহসান হাবীব, লেখক ও গবেষক জাকারিয়া পলাশ, মানবাধিকার কর্মী ইজাজুল ইসলাম, লেখক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সোহেল রানা এবং ইন্টার প্রেস নেটওয়ার্কের (আইপিএন) নির্বাহী পরিচালক এহসানুল হক জসিম।

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

13h ago