বান্দরবান

হাসপাতালের রোগীর জন্য পানি আনতে হয় দোকান থেকে

বান্দরবান সদর হাসপাতাল। ছবি: স্টার

বান্দরবান পার্বত্য জেলার সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বান্দরবান সদর হাসপাতালে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

প্রায় মাসখানেক ধরে চলা এ সংকটের কারণে হাসপাতালে রোগীদের জন্য পানি যেমন নেই, সাধারণ ব্যবহারের পানিও নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না। 

হাসপাতালে দিনের বেশিরভাগ সময় পানি না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী, স্বজনদের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে বাইরের দোকান কিংবা বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডের টয়লেটে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি জায়গায় পানির পাইপ নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। 

একটি টয়লেট হাসপাতালের চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধের বোতল, স্যালাইনের প্যাকেট ও কার্টনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে ঠাসা। 

এ ছাড়াও, রোগীদের জন্য অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলোতে দীর্ঘদিনের অবহেলায় শ্যাওলা জমে থাকতে দেখা গেছে।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের টয়লেট। ছবি: স্টার

শিমুল বড়ুয়া (৫৫) গত ১ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তার সঙ্গে দেখা হয় হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে। 

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে পানি সবসময় থাকে না। টয়লেটেও মাঝে মাঝে পানি থাকে না। প্রতিদিন বাইরে থেকে পানি আনতে হয়। প্রস্রাবে সমস্যার কারণে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে পানির সমস্যার কারণে আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।'

একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বুলেট খিয়াং (১৭) পায়ে ফোড়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন প্রায় ১৫ দিন। তার মা শৈমা খেয়াংয়ের সঙ্গে কথা হলে তিনিও পানির সমস্যার কথা জানান।

শৈমা খেয়াং ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভর্তির দিন থেকে ১৫ দিনে মাত্র ৩ বার গোসল করতে পেরেছি। যখনই হাসপাতালের টয়লেট বা গোসলখানায় যাই, দেখি পানি নেই। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সামনে চা দোকান থেকে পানি নিয়ে ব্যবহার করি। এভাবে চলতে থাকলে আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ব।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী ডেইলি স্টারকে জানান, গত সপ্তাহে সাংবাদিকরা হাসপাতালে এসে পানির খবর নেওয়ার কারণে চলতি সপ্তাহে সংকট কিছুটা কমেছে।

জানতে চাইলে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জিয়াউল হায়দার পানির সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, 'অনেক দিন ধরে হাসপাতালে পানির সমস্যা চলছে। হাসপাতালে নিজস্ব পানির ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত এ সমস্যা দূর হবে না।'

তিনি জানান, এ হাসপাতালে পানি সরবরাহ করে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। 

'জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ঠিকভাবে পানি দেয় না' এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'পানির জন্য যখনই বলি, তখনই তারা কোনো না কোনো সমস্যার কথা বলে। কখনো মোটর নষ্ট, কখনো বিদ্যুৎ সমস্যা ইত্যাদি।'

তবে নিমার্ণাধীন ২৫০ শয্যা ভবনের কাজ শেষ হলে পানির সংকট দূর হবে বলে মনে করেন তিনি।

অক্সিজেন প্ল্যান্টে শ্যাওলা জমে গেছে। ছবি: স্টার

যোগাযোগ করা হলে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী খোরশেদ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে আমরা সবার আগে হাসপাতালকে গুরুত্বের জায়গা রাখি। হাসপাতালে পানি সরবরাহে অবহেলা করার কোনো সুযোগ রাখি না।'

'হাসপাতালে পানি সংকটের দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের' দাবি করে তিনি বলেন, 'আমরা প্রতি রাতে হাসপাতালে পানি দেই। রাতে দিতে না পারলে সকালে সবার আগে হাসপাতালের লাইনে পানি ছাড়ি। এরপরও হাসপাতালে পানি সংকট কেন হচ্ছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।'

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এখানে পানির সমস্যা দীর্ঘদিনের। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের সরবরাহ করা পানি পর্যাপ্ত নয়। হাসপাতালে আগের তুলনায় বেড ও রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ব্যবহারকারী বেশি হওয়ায় পানির সংকট বাড়ছে বলে মনে করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা পানি থাকা অত্যন্ত জরুরি। ডায়রিয়া থেকে শুরু করে ডেলিভারি, সিজারিয়ান, শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিমুহূর্তে পানির প্রয়োজন। তাছাড়া অপারেশন থিয়েটারে তো পানি ছাড়া মোটেও সম্ভব নয়। সবমিলিয়ে হাসপাতালের পানির সমস্যা সমাধান করা খুবই জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ।'

এ সমস্যা সমাধানে এতদিন কেন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'হাসপাতাল এলাকায় একবার ডিপ টিউবওয়েল বসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মাটির গভীরে পাথর থাকায় তা সম্ভব হয়নি।'

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের পরবর্তী উন্নয়ন সমন্বয় সভায় পানি সমস্যার বিষয়টি উত্থাপন করা হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য (জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আহ্বায়ক) ক্য সা প্রু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কিছু অব্যবস্থাপনার কারণে পানি সংকট হয়েছে। তবে ২৫০ শয্যার নতুন ভবন নির্মাণে দুটি ডিপ টিউবওয়েল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ দুটি ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন হলে পানির সংকট আর থাকবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Finance adviser sees no impact on tax collection from NBR dissolution

His remarks came a day after the interim government issued an ordinance abolishing the NBR and creating two separate divisions under the finance ministry

1h ago