হিরো আলমকে পর্যন্ত আ. লীগ সহ্য করতে পারে না: মির্জা ফখরুল

সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: স্টার

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন বন্ধে তরুণ সমাজকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নতুন নির্বাচনের মধ্যে নতুন সরকার গঠন করতে হবে।'

আজ সোমবার বিকেলে খুলনা নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মকেও জাগ্রত করতে 'তরুণ প্রজন্ম দেব ভোট, ভোটের জন্য যুদ্ধ হোক' এ স্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদল এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়েছে। তারা হিরো আলমকে পর্যন্ত সহ্য করতে পারছে না। গণতন্ত্র নিয়ে তারা তামাশা করছে।'

আওয়ামী লীগ সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'একদলীয় বাকশাল করেছিল আওয়ামী লীগ। আজকে যিনি প্রধানমন্ত্রী তার বাবা করেছিল। মাত্র ১১ মিনিটে পার্লামেন্ট চেঞ্জ করে ফেলেছিল। বাংলাদেশের যুদ্ধের সকল চেতনা, আশা, আকাঙ্ক্ষা মুছে ফেলে, সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে একটি মাত্র দল থাকবে বাকশাল। সব পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। এই আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগ। আজকে শুধু পোশাকটা পাল্টেছে। আজকে একটু কায়দা করে নির্বাচন হবে, নির্বাচন হয়, নির্বাচন করছি বলছে। পার্লামেন্ট আছে— এরকম দেখিয়ে তারা একইভাবে একদলীয় সরকার চালাচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'লুটেরাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তির আন্দোলনই হলো তারুণ্যের সমাবেশ। এই সমাবেশ ঢাকায় হবে ২২ জুলাই। ঢাকা-১৭ আসনে হিরো আলমের প্রার্থিতা বাতিল করার পর আবার ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে। এরাই চিৎকার করে বলে গণতন্ত্র নাকি এদের হাতেই নিরাপদ।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি এই বাংলাদেশের জন্য নয়। একটা কঠিন ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা সময় কাটাচ্ছি। এই পরিস্থিতি থেকে দেশ ও দেশবাসীকে রক্ষায় এই তরুণ সমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। খালেদা জিয়া সংগ্রাম করেই ৩ বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি এখনও গৃহবন্দী হয়েও দেশ রক্ষার সংগ্রাম করছেন।'

দেশের মানুষের ওপর সরকার নির্যাতন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমাদের ৬০০ জনের বেশি নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছে। ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা লিটন মণ্ডলের হাতের কবজি ২টা কেটে নিয়েছে। তাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।'

'এ কোন রাষ্ট্র আমরা তৈরি করলাম, যে রাষ্ট্রে কোনো মানুষের নিরাপত্তা থাকবে না, কথা বললে হাত কেটে নেওয়া হবে? মত প্রকাশ করার জন্য তাকে গুম হতে হবে? আমাদের সিলেট বিভাগের এমপি ছিলেন ইলিয়াস আলী, তিনি গুম হয়ে গেছেন। তার ছোট মেয়েটা এখন দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে যে, বাবা আসবে। আমাদের ১ হাজার ৭০০ নেতাকর্মীকে হত্যা, পঙ্গু করা হয়েছে', যোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'শত সহস্র নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছে। আবারও সেই নির্বাচন করতে চায়। সেই নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সব ধরনের অনিয়ম চলছে। একটা ব্যাংকেও কিছু নেই, সব শূন্য।'

তিনি আরও বলেন, 'মানুষকে সংগঠিত করে এ অবৈধ সরকারকে হটাতে হবে। তা না হলে দেশই থাকবে না। সরকারি চাকরি আওয়ামী লীগের লোকেরাই পায়। বিএনপির নামগন্ধ আছে এমন লোক চাকরি পায় না, স্বাস্থ্যসেবা বলতে কিছু নেই, হাসপাতালে হাসপাতালে মানুষ কাতরাচ্ছে। ডেঙ্গুতে লোক মরছে, আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশ সফরে।'

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, 'ঢাকায় একটি নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনে প্রার্থী কয়েকজন। সেখানে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী হচ্ছেন আরাফাত। আরেকজন নিজে নিজে প্রার্থী হয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সবাই তাকে কমবেশি চেনেন, তার নাম হচ্ছে হিরো আলম। তিনি কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। তাকে বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্নভাবে চেনেন। ওই হিরো আলমকে পর্যন্ত তারা (আওয়ামী লীগ) সহ্য করতে পারে না।'

'তিনি আজকে কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগের বিখ্যাত সন্ত্রাসীরা, যারা আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র ভাড়া দেয়, আওয়ামী লীগকে পাহারা দেয়, তারা বেচারা হিরো আলমকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বাইরে রাস্তায় মাটিতে ফেলে তাকে পিটিয়েছে বেধড়ক। সে এখন হাসপাতালে। কিছুক্ষণ আগে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে', যোগ করেন তিনি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, 'আজকের তারুণ্য সেই ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের তারুণ্য। সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার তারুণ্য। এই ৪ কোটি ৭০ লাখ তারুণ্যই আজ ভোটাধিকার বঞ্চিত। এই তারুণ্যও আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।'

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্যে দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, খুলনা জেলার আহ্বায়ক আমির এজাজ খান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

4 years could be maximum one can go before election: Yunus tells Al Jazeera

Says govt's intention is to hold election as early as possible

47m ago