হিরো আলমকে পেটানোর শুরুটা পুলিশের সামনে থেকেই

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমকে বনানীতে ভোটকেন্দ্রের বাইরে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছে। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাতের ব্যাজ পরিহিত ছিলেন। তাকে পেটানোর পুরো ঘটনাটি দ্য ডেইলি স্টারের ফটো সাংবাদিক প্রবীর দাশের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।

বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রের নিচতলার বারান্দায় হিরো আলমকে ঘিরে ধরে নৌকার সমর্থকরা উত্তেজনা সৃষ্টি করলে এগিয়ে আসে পুলিশ। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

আজ বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে যান হিরো আলম। তিনি ভোটকেন্দ্রের ফটকে পৌঁছানোর পর পরই একদল যুবক 'ভুয়া ভুয়া' বলে টিপন্নি কাটতে থাকেন। হিরো আলম তাদের উপেক্ষা করে তার কয়েকজন সমর্থককে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে ঢুকে পড়েন।

ভোটকেন্দ্রের বারান্দা থেকে হিরো আলমকে মাঠে আনেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় হিরো আলমকে পেছন থেকে ধাক্কা দেন নৌকার সমর্থকরা। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

ভোটকেন্দ্রের নিচতলায় একটি কক্ষের সামনে নৌকার ব্যাজধারীদের প্রথম বাধার মুখে পড়েন হিরো আলম। তাদের বলতে শোনা যায়, 'এটা কি টিকটক করার জায়গা।' এ সময় সেখানে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমের সামনে দাঁড়িয়ে যান। তারা তাকে বারান্দা থেকে মাঠের দিকে আনার উদ্যোগ নেন। কিছুদূর আসার পরই পেছন থেকে কেউ একজন হিরো আলমকে ধাক্কা দেন। পুলিশের উপস্থিতিতেই ধাক্কা দিতে দিতে তাকে ভোটকেন্দ্রের মাঠে আনা হয়। হিরো আলম নৌকার ব্যাজধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে অনুরোধ জানান। তাৎক্ষণিক পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

হিরো আলমকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে নিয়ে আসে পুলিশ। পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ায় পুলিশকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন হিরো আলম। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

এর পরই নৌকার ব্যাজধারীরা হিরো আলমকে ধাক্কা দিতে দিতে ভোটকেন্দ্রের ফটকের বাইরে বের করে আনেন। তখন তাকে দফায় দফায় পেটানো হয়। এ সময় হিরো আলমের সঙ্গে থাকা সমর্থকদেরকেও ব্যাপক মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে হিরো আলমকের লাথি মারেন একজন। পেটে লাথি খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান তিনি।

বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রের প্রধান ফটকের বাইরে নৌকা সমর্থকরা ঘিরে ফেলেন হিরো আলমকে। এ সময় নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায় পুলিশকে। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

এ সময় হিরো আলমকে ঘিরে নিয়ে আরও এক দফা পেটান নৌকার সমর্থকরা। তাকে কিল-ঘুষি-লাথি মারতে মারতে ভোটকেন্দ্র থেকে গুলশানের দিকে প্রয় ২০০ মিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। হামলাকারীদের দিক থেকে পরে বলতে শোনা যায়, আলম পালা…. আলম পালা….। এক পর্যায়ে হামলা থেকে বাঁচতে দৌড় দেন তিনি। হামলাকারীরাও পিছু নেন তার। হিরো আলম পরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে হাসপাতালে যান।

ভোটকেন্দ্রের বাইরে হিরো আলমের ওপর নৌকার ব্যাজধারীদের হামলা। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

এর আগে সকালে হিরো আলম তার এজেন্টদের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন। বনানী মডেল স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন গিয়ে একতারা প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, 'যখনই বলতেছে একতারার লোক, হিরো আলমের লোক, তখনই কিন্তু বের করে দিতেছে। এই রকম করে এজেন্ট বের করে দেওয়ার মানে হইল, তারা একতরফা তাদের এজেন্ট দিয়ে সিল মারার চেষ্টা করতেছে।'

হিরো আলমের সঙ্গে থাকা সমর্থকদের ব্যাপক মারধর করেন নৌকার ব্যাজধারীরা। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

চিত্রনায়ক ফারুকের (আকবর খান পাঠান) মৃত্যুতে শূন্য হয় ঢাকা-১৭ আসন। উপনির্বাচনে বিজয়ী মাত্র কয়েক মাসের জন্য সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন। কারণ আগামী বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।

হিরো আলমের পেটে হামলাকারী একজনের লাথি। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ৮ জন প্রার্থী। স্বতন্ত্র হিরো আলম (একতারা) ছাড়াও উপনির্বাচনের অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের মোহম্মদ আলী আরাফাত (নৌকা), জাতীয় পার্টির সিকদার আনিসুর রহমান (লাঙ্গল), জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান (গোলাপ ফুল), তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. রেজাউল ইসলাম স্বপন (ডাব) এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মো. আকবর হোসেন (ছড়ি)।

হিরো আলম পেটে লাথি খেয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে শুরু হয় আরেক দফা মারধর। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

আরেক স্বতন্ত্র মো. তারেকুল ইসলাম ভূঞা (ট্রাক) দুপুরের দিকে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Public admin reforms: Cluster system may be proposed for ministries

The Public Administration Reform Commission is likely to recommend reducing the number of ministries and divisions to 30 from 55 to improve coordination and slash the government’s operational cost.

8h ago