সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন: প্রগতির গাড়ি বিক্রি কমেছে ৭৫ শতাংশ

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কৃচ্ছ্রসাধন, মিতসুবিশি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনা মহামারি,

রাষ্ট্রায়ত্ত গাড়ি সংযোগকারী প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গাড়ি বিক্রি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৫ শতাংশ কমেছে।

প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ১৭৭টি গাড়ি বিক্রি করে। এর আগের বছর তা ছিল ৭১১টি।

২০২২ সালের ৩ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে গাড়ি কেনা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে দেশে কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সরকারি বরাদ্দের ৫০ শতাংশের বেশি বিনোদন, কম্পিউটার ও সংশ্লিষ্ট কাজে খরচ করা যাবে না।

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবুল কালাম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের গাড়ির প্রধান ক্রেতা সরকার। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গাড়ি কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় বিক্রি অনেক কমে গেছে।'

'এমন পরিস্থিতিতে গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে তা ছিল ৩৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।'

'বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলেও আমরা মুনাফা করেছি,' যোগ করেন তিনি।

প্রতিষ্ঠানটি জাপানের মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের পাজেরো স্পোর্টস ও ডাবল কেবিন পিকআপ এবং ভারতীয় টাটা বাসগুলো সংযোজন করে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ গ্রাহকরাও প্রগতি থেকে গাড়ি কিনতে পারেন।

আবুল কালাম আজাদের দাবি, সংযোজন ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি নতুন গাড়ি সরবরাহ করে। তাদের আমদানি করা গাড়ির দাম তুলনামূলকভাবে কম।

তিনি বলেন, ডলারের বাড়তি দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদন খরচ বাড়লেও সরকারের অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি হঠাৎ করে দাম বাড়াতে পারে না।

১৯৬৬ সালে গাড়ি উৎপাদনের জন্য চট্টগ্রামের বারাবকুণ্ডে গান্ধার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয় এবং বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) অধীনে রাখা হয়।

ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড কোম্পানির বাস ও ট্রাক সংযোজনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশে গাড়ি সংযোজনের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি।

তৎকালীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পরিবহন খাতে সংকটের মধ্যেও জরুরি ভিত্তিতে ইংল্যান্ড থেকে উন্নতমানের বাস ও বেডফোর্ড ট্রাক আমদানি করে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে প্রগতি।

পরে ভারত, চীন, কোরিয়া ও জাপান থেকে বেশকিছু ব্র্যান্ডের গাড়ি বাজারজাতের পাশাপাশি কমপ্লিটলি নকড ডাউন (সিকেডি) ইউনিটের সঙ্গে কাজের সুবিধা যোগ করা হয়।

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, 'নিয়মিত গ্রাহকদের জন্য ১ দশমিক ২ লিটার থেকে ১ দশমিক ৬ লিটার ধারণ ক্ষমতার মিতসুবিশি সেডান সংযোজন করার পরিকল্পনা আছে।'

তিনি জানান, প্রগতির প্রাথমিক ক্রেতা শুধুমাত্র উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা। তবে ক্রমবিকাশমান অর্থনীতি ও সমাজের বিত্তশালী মানুষদের কথা বিবেচনা নিয়ে সেডান সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

'আমরা জাপানের মিতসুবিশি মোটরস করপোরেশনের (এমএমসি) কারিগরি সহায়তায় সেডান সংযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা দেব। গত মে মাসে সিকেডি স্থাপনের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছি,' যাগ করেন আবুল কালাম আজাদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন নিয়ে এটি বাস্তবায়নের জন্য গত সপ্তাহে বিস্তারিত পরিকল্পনা এমএমসিতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

অদূর ভবিষ্যতে ক্রেতারা ন্যায্য দামে 'মেইড ইন বাংলাদেশ' সেডান পাবেন বলে তার বিশ্বাস।

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

13h ago