আটলান্টিকের বুকে ১ হাজার বছরের পুরোনো ফরাসি দুর্গ

ছবি: রয়টার্স

আজ থেকে ঠিক ১ হাজার বছর আগে আটলান্টিক মহাসাগরে ফ্রান্সের উপকূলীয় এক দ্বীপে এক অ্যাবে বা ধর্মীয় উপসনালয় নির্মাণের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা এখন ফ্রান্সের জাতীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। স্থানটি এখন ফ্রান্সের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।

মঁ স্যাঁ মিশেলের ওপর মধ্যযুগীয় অ্যাবে, উঁচু দেয়াল ও অনন্য নির্মাণশৈলী শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ফরাসি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি এখন ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ফ্রান্সের নরম্যান্ডি অঞ্চলে অবস্থিত স্থানটিতে নভেম্বর মাস পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। এই সময়ে সেখানে বিভিন্ন প্রদর্শনী, নাচের অনুষ্ঠান ও কনসার্টের আয়োজন হয়। সম্প্রতি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ স্থানটিতে ভ্রমণ করেন। হাজার বছর ধরে মঁ স্যাঁ মিশেল যেভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, সেটিকে ফরাসিদের দৃঢ় মানসিকতার সঙ্গে তুলনা করেন মাখোঁ।

ইতিহাসের সাক্ষী

মঁ স্যাঁ মিশেলে যেন ফরাসিদের জৌলুসে পরিপূর্ণ ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছ্ববি। ১৯৭৯ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। 

'পশ্চিমা বিশ্বের বিস্ময়' হিসেবে ডাকা হয় এই স্থাপনাটিকে। এর ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল ৭০৯ সালে আর্চঅ্যাঞ্জেলে মাইকেলের সম্মানে একটি চার্চ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের মধ্য দিয়ে। পরে এটি একটি পবিত্র স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং একাদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত বিকশিত হতে থাকে।

ছবি: রয়টার্স

ফরাসি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর সাক্ষী এই অ্যাবে। চতুর্শ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত '১০০ বছরের যুদ্ধে' এটি দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। প্রায় ৩০ বছর এটি ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

অষ্টাদশ শতকে ফরাসি বিপ্লবের সময় এটিকে কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ১৮৬৩ সাল নাগাদ ১৪ হাজারেরও বেশি বন্দী এখানে বন্দী জীবন কাটিয়েছেন। জনবিচ্ছিন্ন থাকায় এবং সহজে বের হওয়ার রাস্তা না থাকায় বন্দীশালা হিসেবে এটি ছিল আদর্শ স্থান।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকে স্থানটি একটি পর্যটন স্থানে পরিণত হতে শুরু করে। পরে ধারাবাহিকভাবে পর্যটকদের কাছে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

অতিরিক্ত দর্শনার্থী যখন সমস্যা

মঁ স্যাঁ মিশেল সবসময়ই ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় ভ্রমণ ও তীর্থস্থান। পুরো ইতিহাস জুড়েই দেখা গেছে জায়গাটি লাখ লাখ তীর্থযাত্রীদের আকৃষ্ট করেছে।

মঁ স্যাঁ মিশেল ন্যাশনাল পাবলিক এস্টাবলিশমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থমাস ভেল্টার বলেন, 'কয়েক শতাব্দী আগে এটি ছিল পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান। সান্টিয়াগো ডি কম্পোস্টেলা থেকেও এর জনপ্রিয়তা বেশি ছিল।'

এখন প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ জায়গাটি দেখতে যান।  

সাধারণত আগস্টের দিকে দর্শনার্থীদের চাপ বেশি থাকলেও এ বছর মে মাসেই প্রচুর দর্শনার্থীর উপস্থিতি দেখা গেছে সেখানে।

ভেল্টার বলেন, 'দর্শনার্থীরাই এই অতিরিক্ত দর্শনার্থীর কারণে ভুক্তভোগী হচ্ছেন। করোনা মহামারির কারণে মানুষ এখন আর অতিরিক্ত ভিড়ের জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তারা এখন পর্যটকের ভিড় কম, এমন স্থানগুলোতে যেতে বেশি আগ্রহী।'

ফ্রান্স সরকার বলছে, তারা এখানে পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন, ডয়েচেভেলে

 

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

14h ago