‘বিদেশিরা এখানে আসে কেন? কারণ এখানে গণতন্ত্র নেই’

সরকার দেশে ‘সংঘাত সৃষ্টি’র পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

সরকার দেশে 'সংঘাত সৃষ্টি'র পায়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
 
সোমবার রাতে মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে আজ মঙ্গলবার সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন।
 
মির্জা ফখরুল বলেন, 'তারা (সরকার) চেষ্টা করছে আবারও প্রোভোক করে, যেটাকে আমরা বলি যে, ইচ্ছা করেই সংঘাতের দিকে গোটা দেশকে জাতিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, দুই-একটা চ্যানেলে খবর এসেছে গতরাতে, মগবাজারের নাকি একটা ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে।'
 
'এটা অত্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ষড়যন্ত্রমূলক চক্রান্ত। এটা করা হচ্ছে যারা আপনার বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায় এবং করছে, বিরোধীদলকে যারা সবসময় ম্যালাইন করতে চায়, দোষারোপ করতে চায় যে, বিরোধীদল বিএনপি এ সমস্ত কাজ করে, তারা আজকে এই কাজগুলো করছে… মূলত সরকার তাদের যে বিভিন্ন সংস্থাগুলো আছে তাদেরকে নিয়ে এগুলো করাচ্ছে।'
 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এটার প্রমাণ কি দেখেন? আমরা প্রোগ্রাম দিচ্ছি, প্রোগ্রাম চলছে। এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ প্রোগ্রাম। তার সঙ্গে সঙ্গেই ওই প্রোগ্রামের বিরুদ্ধে তাদের তথাকথিত "শান্তি সমাবেশ" "শান্তি মিছিল" নামে কাউন্টার প্রোগ্রাম দিচ্ছে তারা, যা সংঘাতের দিতে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।'
 
'এভাবে যদি প্রভোগেশন করে, এভাবে যদি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়ে দেশকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, তা কখনই জনগণ মেনে নেবে না এবং তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে', বলেন তিনি।
 
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এখনো বলি- এই অবৈধ সরকারকে... এই ভয়াবহ একটা উদ্যোগ থেকে প্রচেষ্টা থেকে সরে আসুন। দেশে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করুন।'
 
'অর্থাৎ আমরা যে দাবিগুলো করছি- এখানে একটা নির্দলীয় সরকারের ব্যাপারে সহায়তা করুন, নির্বাচনে ব্যবস্থা করুন এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে সমস্যার সমাধান করুন', যোগ করেন তিনি।
 
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির 'প্রশিক্ষণ সেল'-এর উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা 'ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই)' সহযোগিতায় নারী প্রতিনিধিদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের এই কর্মশালা হয়। এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।
 
এই কর্মশালায় ২৫ জন নারী নেত্রী অংশ নেন।
 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেনা এল ওলস, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন ও রাশেদা বেগম হীরা উপস্থিত ছিলেন।
 
অনুষ্ঠানে শিক্ষক মাজহারুল হক, প্রশিক্ষণ সেলের সদস্য রেহানা আক্তার রানু ও নেওয়াজ হালিমা আরলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
 
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই অবৈধ সরকার বারবার করে বলছে ইদানিংকালে যে, আমরা তো কোনো বাধা দেই না, আমরা তো রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজ করতে দিচ্ছি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা, প্রতারণা।'
 
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা একনায়কতন্ত্র, তাদের ফিউডালিজম অর্থাৎ তারাই একমাত্র, আর কেউ নেই, তারা দেশের মালিক এরকম একটা মানসিকতা কাজ করছে। অতীতেও করেছে… তারা সব দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে একটিমাত্র দল বাকশাল করেছিল এবং সমস্ত গণমাধ্যম বন্ধ করে ৪টা পত্রিকা রেখেছিল, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো তারা কেড়ে নিয়েছিল।'
 
'দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আজকে এই মুহূর্তে যখন আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি তখন আমাদের দেশে গণতন্ত্র নেই… দেয়ার ইজ নো ডেমোক্রেসি। আজকে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের যে রাজনৈতিক স্পেস সেই স্পেসগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও কি আছে যে, এই গণতান্ত্রিক দলের ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দায়ের… দলের প্রধান নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মিথ্যা মামলায় বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা, আমাদের ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করে ফেলা, সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করার ঘটনা… নেই', বলেন তিনি।
 
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে কথা হচ্ছে কেন বিদেশি আসছে? আজকে আমেরিকা থেকে একটা টিম আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে একটা টিম এসেছে। কেন এসেছে? এই কথাটা বুঝা গেল- বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। তারা (বিদেশিরা) এখানে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচন সম্পর্কে জানতে এসেছে এবং তারা বুঝতে চায়। অন্য দেশে তো তারা যায় না। এখানে আসে কেন? কারণ এখানে গণতন্ত্র নেই, এখানে নির্বাচন হয়নি, এখানে নির্বাচন হয় না।'
 
তিনি বলেন, 'দেখুন কী রকম প্রতারণা? কথা বলে যাচ্ছে আপনারা তো সবাই টেলিভিশন দেখেন, শুনেন… মনে হয় যেন একজন ধর্মপুত্র জ্যোতিষ… আমরাই ভালো নির্বাচন করি, আমরাই সত্যিকারের নির্বাচন করি, আমরাই গণতন্ত্রের বিশ্বাস করি।'
 
'আর যতবার দেখেন ওই আগে (নির্বাচনের আগে) গিয়ে সবার আগে আমাদের অ্যারেস্ট করে তারপর তারা নির্বাচন করে… ফাঁকা মাঠে করে। একটা নির্বাচনের জন্য প্রথম যে জিনিসটা দরকার হয় সেটা হচ্ছে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড… সব রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই সমান সুযোগ পেতে হবে। কিন্তু এখানে সেই পরিবেশ নেই', বলেন তিনি।
 
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে গণমাধ্যম ও ভিন্নমতকে দাবিয়ে রাখা এবং বিচার বিভাগের দলীয়করণের বিষয়টি তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
 
তিনি বলেন, 'দেশে বিরোধীরা এখন যেসব চ্যালেঞ্জ ফেস করছেন, এতবড় চ্যালেঞ্জ জাতি কখনো ফেস করেনি। সামনের নির্বাচনেই নির্ধারিত হবে দেশে গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে কি থাকবে না, আর আপনারা চিরদিনের জন্য দাস হয়ে যাবেন কি না। আমি কথাগুলো আবেগে বলছি। এটা আমার অনুভূতি।'
 
'এ কেমন একটা দেশ হয়ে গেল আমাদের যে, আমাদের সমস্ত সত্ত্বাগুলোকে বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আমাদের আত্মাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে এবং উই আর কিপিং ম্যাম…। আজকে আমাদের সকলের দায়িত্ব রুখে দাঁড়াতে হবে', বলেন তিনি।
 
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে আমরা একটা অসম যুদ্ধের মধ্যে আছি। এই যুদ্ধটা হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার যুদ্ধ, এই লড়াইটা হচ্ছে আমাদের দেশটাকে রক্ষা করার লড়াই, এই লড়াইটা হচ্ছে সত্যিকার অর্থেই আমাদের অস্তিত্বের লড়াই।'
 
'এখানে নারী নেত্রীরা আছেন। আমি বলতে চাই, সময় খুব কম। এই সময়ের মধ্যে মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। মহিলারা সবসময় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এ দেশের মানুষ ত্যাগের মধ্য দিয়ে সবকিছু অর্জন করেছে। ১৯৫২ সাল বলেন, ৬৯ বলেন, ৭১ বলেন, মানুষ ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং অর্জন করেছে। ইতোমধ্যে আমাদের ১৭ জন মানুষ রাজপথে প্রাণ দিয়েছেন। তাই আসুন সবাই এই ফ্যাসিস্ট ও একনায়ক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করি', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

An economic corridor that quietly fuels growth

At the turn of the millennium, travelling by road between Sylhet and Dhaka felt akin to a trek across rugged terrain. One would have to awkwardly traverse bumps along narrow and winding paths for upwards of 10 hours to make the trip either way.

12h ago