ইউক্রেনে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা পাঠানোর মার্কিন সিদ্ধান্তে মিত্রদের উদ্বেগ ও নিন্দা

১৫৫ মিলিমিটার বেস বার্ন ডুয়াল পার্পাস ইমপ্রুভড কনভেনশনাল মিউনিশন (ডিপিআইসিএম) ক্লাস্টার বোমা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
১৫৫ মিলিমিটার বেস বার্ন ডুয়াল পার্পাস ইমপ্রুভড কনভেনশনাল মিউনিশন (ডিপিআইসিএম) ক্লাস্টার বোমা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক মিত্র, বিশেষত সামরিক জোট ন্যাটোর দেশগুলো ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা পাঠানোর সিদ্ধান্তে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

আজ রোববার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করে, তারা এই বিতর্কিত অস্ত্রটি ইউক্রেনকে দেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একে 'অত্যন্ত কঠিন সিদ্ধান্ত' হিসেবে অভিহিত করেন।

প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও স্পেন জানিয়েছে, তারা এ অস্ত্রের ব্যবহারের বিরোধী।

জার্মানি সরাসরি বিরোধিতা না করলেও জানিয়েছে, তারা কখনো এ ধরনের অস্ত্র ইউক্রেনকে দেবে না। 

বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ের ঝুঁকির কারণে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে এই অস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ ধরনের বোমাগুলো থেকে ছররার মতো অসংখ্য ছোট ছোট বোমা বের হয়ে আসে, যা একটি বড় এলাকা জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে।

এ অস্ত্র বিতর্কিত হওয়ার আরেকটি কারণ হল, প্রায়ই এটি বিস্ফোরিত হয় না। বিস্ফোরণ হয়নি এরকম ছোট ছোট বোমাগুলো বছরের পর বছর মাটিতে পড়ে থাকতে পারে। পরবর্তীতে এগুলো মাইনের মতো যথেচ্ছা বিস্ফোরিত হয়ে হতাহতের কারণ হয়।

৮০০ মিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তা প্যাকেজের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে এ অস্ত্র দিচ্ছে। বাইডেন শুক্রবার সিএনএনকে দেওয়ে এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি এ বিষয়টি নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে আলাপ করেছেন।

প্রেসিডেন্ট জানান, 'আমাকে এ বিষয়ে রাজি করাতে অনেক সময় লেগেছে', কিন্তু তাকে উদ্যোগটি নিতে হয়েছে, কারণ, 'ইউক্রেনীয়দের গোলাবারুদ দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।'

বাইডেনের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় ফেটে পড়ে মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ক্লাস্টার বোমা 'বেসামরিক ব্যক্তিদের জীবনের ওপর ভয়াবহ ঝুঁকির কারণ। এমন কী, সংঘাত নিরসনের বহু বছর পরেও এই ঝুঁকি থাকবে।'

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি মিত্র এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানাতে অস্বীকার জানায়।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাক বলেন, যুক্তরাজ্য ১২৩ দেশের অন্যতম, যারা ক্লাস্টার বোমা উৎপাদন ও ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার চুক্তিতে সাক্ষর করেছে। 

'ক্লাস্টার বোমা সনদ' উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে ও অন্য দেশের সাক্ষর সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নিউজিল্যান্ড। 

বিতর্কিত ক্লাস্টার বোমা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
বিতর্কিত ক্লাস্টার বোমা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিনস বলেন, এসব অস্ত্র 'বাছবিচারহীন, এগুলো নিরপরাধ মানুষের বড় ক্ষতি করে বা করার সম্ভাবনা রাখে, এবং এর প্রভাব সুদূরপ্রসারীও হতে পারে।' তিনি জানান, ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার সম্পর্কে তাদের বিরোধিতার বিষয়টি হোয়াইট হাউজকে জানান হয়েছে।

স্পেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মারগারিতা রোবলস বলেন, 'ক্লাস্টার বোমাকে না বলুন আর ইউক্রেনের জন্য যথোপযুক্ত প্রতিরক্ষাকে হ্যাঁ বলুন। আমাদের জানা মতে, ক্লাস্টার বোমা দিয়ে এটা সম্ভব নয়।'

কানাডার সরকার এই বোমা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও রাশিয়া ক্লাস্টার বোমার ব্যবহার কমানোর সনদে এখনো সাক্ষর করেনি। চলমান যুদ্ধে মস্কো ও কিয়েভ, উভয়ের বিরুদ্ধেই এই বোমা ব্যবহারের অভিযোগ আছে।

জার্মান সরকার এই সনদের অন্যতম স্বাক্ষরকারী। জার্মানি জানিয়েছে, তারা নিজেরা কখনো এ ধরনের অস্ত্র ইউক্রেনকে দেবে না। তবে তারা মার্কিনদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত আছে।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ক্লাস্টার বোমা শুধু শত্রুদের প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করতে ব্যবহার করা হবে। এটি শহর অঞ্চলে ব্যবহার হবে না।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এই উদ্যোগকে 'মরিয়া প্রচেষ্টা' এবং 'ইউক্রেনের পাল্টা হামলার ব্যর্থতার প্রমাণ' হিসেবে অভিহিত করেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ইউক্রেনের আশ্বাসের 'কোনো মূল্য নেই।'

আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেওয়ার সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রে পাশে নেই তাদের কোনো ন্যাটো-মিত্র। ইউক্রেন যদি এই অস্ত্র দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যবহার না করে, তবে অসংখ্য বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হতে পারেন।

 

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

3h ago