রুশ আত্মঘাতী ড্রোন ল্যানসেট ইউক্রেনের বড় মাথাব্যথার কারণ

রুশ ল্যানসেট ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ। ছবি: রয়টার্স
রুশ ল্যানসেট ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার ল্যানসেট কামিকাযে (আত্মঘাতী) ড্রোন ইউক্রেনের সেনাদের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি টেলিগ্রাফকে জানান, এই ড্রোনের মোকাবিলা করতে কিয়েভের আরো অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র প্রয়োজন, যা পশ্চিমা দেশগুলোর হাতে আছে।

গতকাল রোববার রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আরটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। 

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর উপদেষ্টা ইউরি সাক আরও জানান, কিয়েভের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ধারণা করছেন, রাশিয়া 'এসব ড্রোন উৎপাদনের পেছনে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।'

'উপকরণের ক্ষতি করতে সক্ষম বা সেনাদের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে, এরকম যেকোনো কিছুই আমাদের উদ্বেগের কারণ', যোগ করেন ইউরি।

ইউরি বলেন, 'রুশদের খুব বেশি প্রশংসা করতে না চাইলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, এটা (অস্ত্র হিসেবে) খুব একটা খারাপ নয়'

গুলি করে ল্যানসেট ড্রোন ভূপাতিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। ছবি: রয়টার্স
গুলি করে ল্যানসেট ড্রোন ভূপাতিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। ছবি: রয়টার্স

স্বল্প খরচের রুশ ল্যানসেট ড্রোন সর্বোচ্চ ৩ কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক উপকরণ বহন করতে পারে। রাডারকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য এটি খুব কম উচ্চতা দিয়ে উড়ে যেতে পারে এবং বহুদূরে বসে থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী এর গতিপথ বদলানো যায়। লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত না করা পর্যন্ত এটি আকাশে উড়ে বেড়াতে পারে। এসব কারণে এই ড্রোনগুলো ইউক্রেনের কামান বাহিনীর জন্য বড় হুমকির সৃষ্টি করেছে।

ইউক্রেনের ৪টি ভিন্ন কামান পরিচালনা দলের সদস্যরা রয়টার্সকে জানান, ল্যানসেট ড্রোন এ মুহূর্তে যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ।

এসব অপেক্ষাকৃত স্বল্প মূল্যের রুশ ড্রোনের মোকাবিলায় ইউক্রেন তাদের মূল্যবান ও স্বল্প মজুদের আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে চায় না, যা আরো সমস্যা সৃষ্টি করছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, একটি ল্যানসেট ড্রোনের পেছনে খরচ প্রায় ৩০ লাখ রুবল (৩৫ হাজার মার্কিন ডলার)। অপরদিকে রাশিয়ার ব্যবহৃত এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্রের পেছনে খরচ কয়েক লাখ ডলারের কম নয়। লেপার্ড-২ ট্যাংকের দাম ২০-৩০ লাখ ডলার। 

ইউরি টেলিগ্রাফকে আরো জানান, পশ্চিম ইউক্রেনকে বাড়তি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠিয়ে এসব ড্রোনের মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে। তিনি জার্মানিতে নির্মিত গেপার্ড প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, 'এগুলোকে সহজে বহন ও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা যায়। এতে রয়েছে ভালো রাডার ব্যবস্থা যা সহজেই অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা যায়।'

জার্মান ড্রোন বিধ্বংসী গেপার্ড যানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ। ফাইল ছবি: রয়টার্স
জার্মান ড্রোন বিধ্বংসী গেপার্ড যানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

জার্মানি ইতোমধ্যে ইউক্রেনকে ৩৪টি গেপার্ড পাঠিয়েছে। আরও ১৮টি শিগগির পাঠানো হবে। জার্মান কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের শেষ নাগাদ মোট ৪৫টি বাড়তি গেপার্ড পাঠানো হবে।

ইউরি আরো জানান, ল্যানসেট ড্রোনকে অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে মোকাবিলা করা সম্ভব।

'ড্রোন-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিক জ্যামিং সরঞ্জাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ', যোগ করেন তিনি।

ইউরি বলেন, 'কিন্তু আমাদের হাতে এ ধরনের প্রযুক্তি নেই এবং আমরা এর জন্য মিত্রদের কাছে সহায়তা চাইছি। আশা করি আমরা এক সময় আরো বেশি পরিমাণে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করবো।'

ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অ্যান্টন গেরাশচেঙ্কো এপ্রিলে এক সাক্ষাৎকারে দ্য ইকোনমিস্টকে জানান, 'ল্যানসেট হচ্ছে আমাদের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক ড্রোন। এটি কামান ধ্বংস করতে অত্যন্ত পারদর্শী।'

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রুশ সামরিক বাহিনী সফল ভাবে এই ড্রোন ব্যবহারের কথা জানিয়েছে। এগুলো মূলত মর্টার দল, কামান, ট্যাংক ও অন্যান্য ভারী পরিবহন ধ্বংসে ব্যবহার করা হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh asks India not to interfere in internal affairs

Dhaka asks New Delhi not to interfere in Bangladesh's internal affairs

Foreign Secretary Jashim Uddin briefed journalists following the Foreign Office Consultation between Bangladesh and India

10h ago