তামিমের আচমকা অবসর ও ফিরে আসা

চারদিনের ঘটনা প্রবাহে যত নাটকীয়তা

আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে গত মঙ্গলবার তামিম ইকবালের সংবাদ সম্মেলন দিয়ে সূত্রপাত। এরপর ঘটতে থাকল একের পর এক বিস্ফোরক ঘটনা। মঞ্চে এলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সেটার রেশের মধ্যে তামিমের তোলপাড় করা বিদায়ী ঘোষণা। এরপর সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার জড়িয়ে যাওয়া। সবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে তামিমের অবসর ভেঙে ফেরা। বাংলাদেশের ক্রিকেট দেখল ঘটনাবহুল চারদিন।

৪ জুলাই, মঙ্গলবার

আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে থেকেই চোট নিয়ে খবরে ছিলেন তামিম। চোটের কারণে খেলতে পারেননি দুই দলের একমাত্র টেস্ট। ফিটনেস নিয়ে দোলাচলের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসে তামিম জানান, 'আমি অবশ্যই কালকের জন্য এভেইলেবল। শরীর আগের চেয়ে ভালো। তবে এটা বলব না যে, শতভাগ (ঠিক আছি)। কালকে খেলার পর আরও ভালো বুঝতে পারব যে, কী অবস্থা।'

শতভাগ ফিট না থাকার পরও তার খেলতে নামার সিদ্ধান্ত তৈরি করে সমালোচনা।

৫ জুলাই, বুধবার

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে নেমে বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। দলের ব্যাটিং ধসে ব্যর্থ হন তামিমও। ২১ বলে ১৭ রান করে ফজল হক ফারুকির শিকার হন তিনি। গত বছরও একই বোলারের বিপক্ষে টানা তিনবার আউট হয়েছিলেন তামিম।

ম্যাচ শেষে হোটেলে ফিরে মধ্যরাতে সাংবাদিকদের পরদিন সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেন তামিম। নিজ উদ্যোগে তার এই সংবাদ সম্মেলনে কিছু একটা ঘোষণা দেওয়ার কথা জানা যায়।

৬ জুলাই, বৃহস্পতিবার

সকাল থেকেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে বড় একটি ঘোষণা দিতে চলেছেন তামিম। বিসিবির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তৎপর হয়ে তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে তামিম কোথায় আছেন তাও বলা যাচ্ছিল না। তামিম অবশ্য গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বার্তা পাঠান দুপুর ১২টার বদলে দেড়টায় নগরীর টাওয়ার ইন হোটেলে আসবেন তিনি। সেখানেই দিবেন ঘোষণা।

নিজের পৈত্রিক বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা হোটেলের বলরুমে ঢোকেন তিনি। গণমাধ্যমের বিপুল উপস্থিতিতে কান্নায় ভেঙে পড়ে দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা। সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন না দিয়ে জানান, অনেকদিন ধরেই এমন সিদ্ধান্তের কথা ভাবছিলেন, পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে নিয়েছেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

তার আবেগময় এই বক্তব্যের পর বিপুল সাড়া পড়ে দেশজুড়ে। কেন তামিম এভাবে অবসরে গেলেন, সেই প্রশ্ন ওঠে জোরালোভাবে। প্রাসঙ্গিকভাবেই সমালোচনায় পড়েন বিসিবি প্রধান। কয়েকটি গণমাধ্যমে তামিমের অবসর নিয়ে তার করা মন্তব্যও ভালোভাবে নেননি মানুষ।

রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে বিসিবি জরুরি সভা করে। লিটন দাসকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাকি দুই ম্যাচের অধিনায়ক করা হয়। তখন বোর্ড প্রধান তামিমের সিদ্ধান্তে বিস্ময় ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তাকে ফেরার জন্য অনুরোধ করার কথাও বলেন তিনি।

৭ জুলাই, শুক্রবার

অন্তর্বর্তীকালীন অধিনায়ক লিটন দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসে জানান, তামিম না থাকলেও এর প্রভাব পড়বে না দলে। দলের আবহও বেশ ভালো। ব্যক্তির চেয়ে দল বড় ভেবে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।

লিটনের সংবাদ সম্মেলন শেষ হতেই খবর ছড়িয়ে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে যাচ্ছেন তামিম, সঙ্গী মাশরাফি। সেই সভায় ছিলেন বিসিবি সভাপতিও। সন্ধ্যা ৬টায় গণভবন থেকে বেরিয়ে তামিম জানান, 'দুপুরবেলায় আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বাসায় দাওয়াত করেছিলেন। উনার সঙ্গে অনেকক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি। উনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন খেলায় ফিরে আসতে। আমি আমার অবসর এই মুহূর্তে তুলে নিচ্ছি। কারণ আমি সবাইকে না বলতে পারি কিন্তু দেশের যে সবচেয়ে বড় ব্যক্তি তাকে না বলা আমার পক্ষে অসম্ভব।'

তামিম জানান, তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা করিয়ে দিতে মাশরাফি ও পাপন উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Discrimination Students Movement

Students to launch a party by next Feb

Student leaders who spearheaded the July-August mass uprising are planning to launch a political party by early February 2025 and contest the next general election.

8h ago