বিশ্বের বিখ্যাত কিছু পর্যটকবাহী ডুবোযান

সমুদ্রতলে আটলান্টিস সাবমেরিন। ছবি:আটলান্টিস অ্যাডভেঞ্চার

ক্যারিবিয়ানের প্রবাল প্রাচীর থেকে হাওয়াইয়ে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ—পর্যটকদের জন্য সমুদ্রতলের এমন অদেখা জগত ঘুরে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে পর্যটকবাহী নানা ডুবোযান। সম্প্রতি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ওশেনগেটের টাইটানও ছিল এমনই একটি ডুবোযান।

এসব ডুবোযানে করে সমুদ্রের গভীরে অভিযানে যাওয়ার জন্য পাকা ডুবুরি হওয়ার প্রয়োজন নেই, শুধু প্রয়োজন একটি রোমাঞ্চপ্রিয় মন আর কিছু অর্থ। অধিকাংশ ডুবোযানেই যেকোনো দুর্ঘটনা মোকাবিলা ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে যেসব ডুবোযান সমুদ্রের ১ হাজার ফুটের বেশি গভীরে যায় সেগুলোতে ভ্রমণ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে এবং এসব ঝুঁকি সাধারণত আগে থেকেই যাত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে বেশকিছু ডুবোযান আছে, যেগুলো আরামদায়ক পরিবেশে পর্যটকদের সমুদ্রের তলদেশে ঘুরে আসার সুযোগ করে দেয়। বিখ্যাত কিছু পর্যটকবাহী ডুবোযান নিয়েই আজকের এই লেখা।

হাওয়াই এবং ক্যারিবিয়ানের আটলান্টিস সাবমেরিন

ডুবোযানের জগতে 'আটলান্টিস সাবমেরিন অ্যাডভেঞ্চার' একটি সুপরিচিত নাম। হাওয়াই এবং ক্যারিবিয়ান উভয় স্থানে ভ্রমণের জন্য রয়েছে তাদের বেশকিছু ডুবোযান। ৪৮-৬৪ জন যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই ডুবোযানগুলোতে শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ত সবাই ভ্রমণ করতে পারে। এগুলো নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবেশে বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের সবার সঙ্গে সমুদ্রতলের জীবন উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়।

ওয়াইকিকিতে অবস্থিত আটলান্টিস সাবমেরিন হাওয়াইতে বেশ জনপ্রিয়। এটি দর্শকদের ৯০ মিনিটের যাত্রায় ১০০ ফুট পর্যন্ত গভীরতায় নিয়ে যায়। এখানে সবুজ সামুদ্রিক কচ্ছপ, হাঙর, হলুদ ট্যাং, ঈল এবং পানির নিচের সামুদ্রিক অনেক প্রজাতির প্রাণীর ঘনঘন দেখা পাওয়া যায়। এ ছাড়াও দেখা যায় ডুবে যাওয়া জাহাজ, উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ।

অন্যদিকে, মাউইতে সমুদ্রতলে বসানো হয়েছে কিছু কৃত্রিম প্রবাল প্রাচীর এবং ঐতিহাসিক কিছু জাহাজের অনুকৃতি।বর্তমানে এই কৃত্রিম প্রবাল প্রাচীর আর জাহাজ ঘিরে গড়ে উঠেছে নতুন একটি বাস্তুতন্ত্র। রংবেরঙের অসংখ্য সামুদ্রিক মাছ, হাঙরসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীর বিচরণে এই অঞ্চলটি অনন্য রূপ লাভ করেছে। সাবমেরিনে করে এই সামুদ্রিক অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়।

ছবি: সংগৃহীত

হাওয়াইয়ের বিগ আইল্যান্ডে রয়েছে আরেকটি আটলান্টিস সাবমেরিন, যা দর্শনার্থীদের 'কোনা' উপকূলের সমুদ্রতল ঘুরে দেখায়। কোনা সমুদ্রতলে রয়েছে ২৫ একর জুড়ে বিস্তৃত প্রাকৃতিক প্রবাল প্রাচীর। এই ডুবোযানগুলোতে ভ্রমণের জন্য খরচ পড়বে জনপ্রতি ১৪৮ ডলার বা প্রায় ১৬ হাজার টাকা।

ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের আরুবা, বার্বাডোস, কোজুমেল, কুরাকাও, গ্র্যান্ড কেম্যান, সেন্ট মার্টিন এবং গুয়ামেতেও রয়েছে আটলান্টিস সাবমেরিন। এসব ডুবোযানে ক্যারিবিয়ান সমুদ্রতলের সমৃদ্ধ প্রবাল প্রাচীর,সামুদ্রিক জীব এবং বিভিন্ন যুগে নির্মিত জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখার সুযোগ পাওয়া যায়।

ক্যাটালিনা দ্বীপের সেমি-সাবমেরিন সফর

ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাটালিনা দ্বীপের চারপাশে সমুদ্রের পানির নিচের জগত ঘুরে দেখার একটি অনন্য উপায় হলো এখানকার সেমি-সাবমেরিন সফর। এই ডুবোযানের একটি অংশ পানির উপরে থাকে,অন্য অংশটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ ফুট গভীরে নিমজ্জিত থাকে।

ডুবোযানটির নিচের অংশে বড় জানালা দিয়ে সমুদ্রের নিচের মাছ ও প্রাণী দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। পাশাপাশি মাইক্রোফোনের সাহায্যে সমুদ্রতলের আওয়াজ সরাসরি শোনার ব্যবস্থাও রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে মাছকে খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা। যারা সমুদ্রের খুব গভীরে না নেমেই স্বল্প খরচে সমুদ্রতলের জীবন উপভোগ করতে চান, তারা এই সেমি-সাবমেরিন ভ্রমণটি বেছে নিতে পারেন। খরচ হবে জনপ্রতি ৪৫ ডলার বা প্রায় ৫ হাজার টাকা।

রোটান ইনস্টিটিউট অব ডিপ-সি এক্সপ্লোরেশন সাবমেরিন

উপরের ডুবোযান ভ্রমণগুলো তাদের জন্য, যারা তুলনামূলক নিরাপদ পরিবেশে সমুদ্রের অল্প গভীরতায় নেমেই সামুদ্রিক জীবন উপভোগ করতে ভালোবাসেন। কিন্তু যেসব অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরা সমুদ্রের বিপজ্জনক গভীরতায় ডুব দিতে ভয় পান না, তাদের জন্য আছে হন্ডুরাসের রোটান ইন্সটিটিউটের ডিপ-সি সাবমেরিন।

ছবি:ডিসকভার রোটান

১৩ ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৬ ফুট প্রস্থের এই ডুবোযানটি ২ জন যাত্রী ও একজন চালক নিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩ হাজার ফুট পর্যন্ত গভীরে যেতে পারে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত প্রাকৃতিক আলো পৌঁছায়। ডুবোযানে ভ্রমণের সময় এই অঞ্চলে দেখা মেলে সামুদ্রিক লিলি, গ্লাস স্পঞ্জ, পম-পম অ্যানিমোন এবং লেইস প্রবালের মতো নানান সামুদ্রিক প্রাণীর।

এরপর ধীরে ধীরে সাবমেরিনটি নিয়ে যাবে সমুদ্র তলদেশের সম্পূর্ণ অন্ধকারে নিমজ্জিত অঞ্চলে। কৃত্রিম আলোর সাহায্যে এখানে দেখা যেতে পারে অনেক বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক জীব।

সমুদ্রের এতটা গভীরে কোনো সূর্যের আলো পৌঁছায় না। সাধারণত পর্যটকবাহী ডুবোযানগুলো এই গভীরতায় যেতে পারে না। শুধু ডিপ-সি সাবমেরিনের মাধ্যমেই সমুদ্রের এই গভীরতায় পৌঁছানো সম্ভব। রোটান ইন্সটিটিউটের এই ডুবোযানে সফরের জন্য গুনতে হবে জনপ্রতি ১ হাজার ২০০ ডলার বা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

তথ্যসূত্র: ম্যারিটাইমপেইজ, ট্রাভেলপালস, আটলান্টিস অ্যাডভেঞ্চার, স্ট্যানলি সাবমেরিনস

Comments

The Daily Star  | English

Constitution should be updated

Dr Kamal Hossain, emeritus president of Gono Forum, yesterday recommended updating the constitution.

10m ago