রুশ জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন ভাগনার বিদ্রোহের কথা ‘আগেই জানতেন’

রুশ শীর্ষ সামরিক নেতাদের সঙ্গে সের্গেই সুরোভিকিন (মধ্যে)। ফাইল ছবি: এএফপি
রুশ শীর্ষ সামরিক নেতাদের সঙ্গে সের্গেই সুরোভিকিন (মধ্যে)। ফাইল ছবি: এএফপি

সম্প্রতি রুশ সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ভাড়াটে সেনার দল ভাগনারের বিদ্রোহ এবং অল্প সময়ের মধ্যে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতায় এর অবসান নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা হয়েছে। নতুন এক নথিতে জানা গেছে, খোদ রাশিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যেই রয়েছে ভাগনারের 'ভিআইপি' সদস্য, যাদের অন্যতম হলেন জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন।

আজ শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।

সিএনএনের হাতে কিছু নথি এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে, রুশ সামরিক কমান্ডার জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন বেসরকারি সামরিক প্রতিষ্ঠান ভাগনারের একজন 'গোপন ভিআইপি' সদস্য ছিলেন এবং তিনি এই বিদ্রোহের কথা আগে থেকেই জানতেন। 

নথি অনুযায়ী জানা গেছে, ২০১৮ সালে সুরোভিকিনকে ভাগনারের ভিআইপি নিবন্ধন নং দেওয়া হয়। রাশিয়ান ইনভেস্টিগেটিভ ডোশিয়ে সেন্টার নামক সংস্থার কাছ থেকে এই নথি পেয়েছে সিএনএন।

নথি অনুযায়ী রুশ সামরিক ও গোয়েন্দা বাহিনীর আরো অন্তত ৩০ জন শীর্ষ কর্মকর্তাও ভাগনারের ভিআইপি সদস্য। তবে অন্যান্য কর্মকর্তাদের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সুরোভিকিন ভাগনারের কাছ থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা পেতেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে নথিতে রুশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভাগনারের সুসম্পর্কের বিষয়টি এই ৩০ জন ভিআইপি সদস্যের অস্তিত্বের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে ভাগনারকে প্রশ্ন করা হলেও তারা জবাব দেয়নি।

এসব তথ্যে বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন, রুশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অনেকেই ভাগনারের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং এ কারণেই সম্ভবত তেমন কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই তারা দক্ষিণের শহর রস্তভ-অন-ডন দখল করে নিতে পারেন। এ বিষয়টি প্রমাণ হলে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই চাকরি হারাতে পারেন বলে পশ্চিমা গণমাধ্যমে মত প্রকাশ করা হয়েছে। 

শনিবারের পর থেকে সুরোভিকিনকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি। সেদিন তিনি একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে দ্বিধান্বিত কণ্ঠে তিনি ভাগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনকে এই বিদ্রোহ থামানোর অনুরোধ জানাচ্ছেন। সে সময় তার হাতে একটি মেশিনগান ছিল।

এ ভিডিও প্রকাশের পর থেকে তার গতিবিধি অজ্ঞাত রয়েছে। 

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, রুশ জেনারেলের কাছে প্রিগোঝিনের বিদ্রোহের বিষয়ে 'আগে থেকেই তথ্য' ছিল। 

শনিবার রস্তভ-অন-ডন ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে প্রিগোঝিনকেও জনসম্মুখে দেখা যায়নি। 

তিনি সোমবার এক অডিও বার্তায় বিদ্রোহ বন্ধের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেন। 

বিদ্রোহের অবসানের পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার কর্তৃত্ব প্রকাশের জন্য বেশ কয়েকবার জনসম্মুখে এসেছেন। তিনি সেনাদের জানান, তারা ভাগনার যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ না দিয়ে একটি 'গৃহযুদ্ধ থামিয়েছে'।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ভাগনারের ব্যর্থ বিদ্রোহে পুতিনের ক্ষমতা কমেছে বা তার বিরুদ্ধে হুমকি সৃষ্টি হয়েছে, এ ধরনের সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানান, প্রিগোঝিনের বিদ্রোহ থামিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে 'প্রেসিডেন্টকে ঘিরে নাগরিক সমাজের একাত্মবোধের' প্রদর্শনী হয়েছে।

যুদ্ধক্ষেত্রে নির্দয় মনোভাব ও কৌশলের জন্য 'জেনারেল আরমাগেডন' নামে পরিচিত সুরোভিকিন ক্রেমলিনের একজন বিশ্বস্ত সামরিক কমান্ডার হিসেবে বিবেচিত। তিনি সিরিয়া ও ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তবে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যের পর তার প্রতি ক্রেমলিনের ভরসা এখনো টিকে আছে কী না, তা দেখার বিষয়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Admin getting even heavier at the top

After the interim government took over, the number of officials in the upper echelon of the civil administration has become over three times the posts.

8h ago