পত্রিকা পুড়িয়ে সাংবাদিকের হাত ভেঙে দেওয়ার হুমকি এমপি শিমুলের সমর্থকদের

নাটোরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সমাবেশে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় আগুন দেওয়া হয়। ছবি: স্টার

অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেছেন নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের সমর্থকরা।

সমাবেশে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ নেতারা দৈনিক যুগান্তরের নাটোর প্রতিনিধি শহিদুল হক সরকারের হাত ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন এবং তাকে প্রেসক্লাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে শহরের কানাইখালী পুরাতন বাসস্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন এমপি শিমুলের অনুসারী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তারা পত্রিকায় আগুন দেন।

'কানাডায় স্ত্রীর নামে বাড়ি ব্যাংকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা' শিরোনামে আজ একটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক যুগান্তর। প্রতিবেদনে এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও তা বিদেশে পাচারের অভিযোগের কথা তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম, নলডাঙ্গা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান লিটন, নাটোর সদর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান আলমগীর, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ডাবলু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তারুল ইসলাম আলম এবং জেলা যুবলীগের সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুলী এহিয়া।

বক্তারা প্রকাশিত সংবাদটি মিথ্যা এবং বানোয়াট বলে দাবি করে বলেন, প্রতিপক্ষরে কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

সমাবেশে নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান লিটন বলেন, 'সাংবাদিক শহিদুল যে হাত দিয়ে নোংরা কথা লিখেছে তার সেই হাত ভেঙে দিতে হবে।'

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তারুল ইসলাম আলম মোস্তারুল ইসলাম আলম বলেন, 'সাংবাদিক শহিদুল হক জামায়াত কর্মী। তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছেন।'

মোস্তারুল ইসলাম আলম হুমকি দিয়ে বলেন সাংবাদিক শহিদুল হক প্রেসক্লাবে আসতে পারবে না। ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাব পাহারা দেবে। প্রেসক্লাবে আসা মাত্র তার হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে। প্রেসক্লাবে শহিদুল হক সরকারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ অথবা বহিষ্কার করার দাবি জানান তিনি।

পরে নাটোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খান চুন্নুর নেতৃত্বে যুগান্তর পত্রিকা পোড়ানো হয়।

যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির টাকায় এমপি শিমুল নাটোরে ও কানাডায় স্ত্রীর নামে বিলাসবহুল দুটি বাড়ি করেছেন। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংকে স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিনিধির নামে তিনি কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রেখেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রকাশ্যে সাংবাদিকের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকির ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারাজি আহমেদ রফিক বাবন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শহিদুল হককে প্রেসক্লাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাংবাদিক শহিদুল হক বলেন, 'পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিরোপেক্ষতা বজায় রেখেই সংবাদটি করা হয়েছে। কোনো পক্ষপাতিত্ব বা মিথ্যা সংবাদ যুগান্তরে প্রকাশের সুযোগ নেই।'

হুমকি-ধামকির কারণে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, সংবাদের জেরে এমন প্রতিক্রিয়া তিনি প্রত্যাশা করেননি।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এমপি শিমুল বলেন, নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। বিষয়টি আমি আগে থেকে জানতাম না।

তবে তিনি দৈনিক যুগান্তর কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রতিনিধি শহিদুল হক সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করবেন বলেও জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

14m ago