অলসতা কাটাবে জাপানি কৌশল ‘কাইজেন’

কাইজেন, জাপান, অলসতা,
ছবি: অর্কিড চাকমা/স্টার

জাপানিদের একটি নিজস্ব সাংস্কৃতিক ধারণা আছে, যার নাম হলো 'কাইজেন'। এটি অলসতা কাটিয়ে ওঠার খুবই কার্যকর উপায়। 'কাইজেন' এমন একটি উপায়, যার মাধ্যমে ছোট ছোট উন্নতি ও পরিবর্তনকে ফোকাস করা হয়। যা ধীরে ধীরে একজন ব্যক্তির জীবনে বড় পরিবর্তন আনে।

কাইজেন অনুসরণ করে যে কেউ অলসতার চক্র থেকে মুক্ত হতে পারে। শুধু তাই নয় সুশৃঙ্খল মানসিক বিকাশে সহায়তা করতে পারে কাইজেন। এজন্য অবশ্য কয়েকটি ধাপ মেনে চলতে হবে।

অলসতার অভ্যাস চিহ্নিত করা

কাইজেন অনুযায়ী অলসতা কাটিয়ে ওঠার প্রথম ধাপ হলো আপনি অলস এটি স্বীকার করা এবং অভ্যাস শনাক্ত করা। এজন্য আপনার আচরণ, রুটিন ও চিন্তার ধরণগুলো নিয়ে ভাবুন। তাহলে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন, ঠিক যেখান থেকে আপনার অলসতা শুরু হয়।

ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

কাইজেন বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়। আপনি বড় বড় কাজগুলো ছোট ছোট ধাপে বিভক্ত করুন। এরপর ছোট লক্ষ্যগুলোতে মনোনিবেশ করুন। তাহলে অলসতাকে কাটিয়ে কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন। কারণ, লক্ষ্য ছোট থাকলে সহজে অলসতা আসবে না।

এক মিনিট নীতি

এই নীতিটি একটি শক্তিশালী কৌশল। সাধারণত আপনি যে কাজটি এড়িয়ে যান, কাইজেন অনুযায়ী তার জন্য মাত্র ১ মিনিট ব্যয় করুন। প্রতিটি কাজের সবচেয়ে কঠিন অংশটি হলো কীভাবে শুরু করবেন। কিন্তু, একবার যদি শুরু করেন, মানে ১ মিনিট সময় দেন তাহলে ওই কাজটি চালিয়ে যাওয়া ও শেষ করার সহজ উপায় খুঁজে পেতে পারেন। এজন্য যেকোনো কাজে উদ্বুদ্ধ করতে কাইজেনের এই ১ মিনিট নীতি।

একটি রুটিন তৈরি 

আপনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রুটিন তৈরি করুন। কারণ এটি অলসতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে। রুটিনে কাজ, ব্যায়াম, বিশ্রামসহ অন্যান্য ক্রিয়াকলাপের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। একটি কাঠামোগত সময়সূচী আপনার মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ তৈরি করবে এবং দেরি করার প্রবণতা কমাতে সহায়তা করবে।

পোমোডোরো কৌশল

পোমোডোরো কৌশল একটি সময়-ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। এটি যে কারো কাজের গতি বাড়াতে পারে। এই কৌশল অনুযায়ী টানা ২৫ মিনিট কাজের পর বিরতি রাখুন। আর একে 'পোমোডোরোস বলা হয়। মানে সংক্ষিপ্ত বিরতি নেওয়া। এই বিরতি হতে পারে ৫ মিনিট। এভাবে ৪ বার বিরতি নেওয়ার পর একটি লম্বা বা ৩০ মিনিটের বিরতি নিতে পারেন। প্রতিবার বিরতি নেওয়ার সময় কতটুকু কাজ করলেন তা টুকে রাখুন। এই কৌশলটি কাজে ফোকাস বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং বার্নআউট প্রতিরোধ করে।

ভিজুয়াল সংকেত ব্যবহার

আপনার লক্ষ্য ও জমে থাকা কাজগুলো ভিজুয়াল সংকেত দিয়ে নিজেকে ঘিরে রাখুন। যেমন, স্টিকি নোটস, ভিশন বোর্ড বা অন্যান্য ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো আপনাকে অনুপ্রাণিত ও কর্মঠ থাকতে প্রেরণা যোগাবে।

শৃঙ্খলা অনুশীলন

জীবনে শৃঙ্খলার অভাব থেকেও অলসতার স্বভাব তৈরি হতে পারে। তাই প্রতিদিনের জীবনে শৃঙ্খলার মধ্যে থাকার অনুশীলন করুন। সময়সীমা নির্ধারণ করুন, নিজের কাজকে অগ্রাধিকার দিন এবং কাজে মনোনিবেশ করুন। তাহলে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনে আবদ্ধ হতে পারবেন।

ছোট ছোট অর্জন উদযাপন করুন

আপনার ছোট ছোট অর্জনগুলো উদযাপন করুন। জীবনের ছোট ছোট অর্জনকে স্বীকৃতি দিন এবং নিজেকে পুরস্কৃত করুন। ছোট ছোট অর্জন উদযাপন করলে আমাদের মধ্যে ইতিবাচক আচরণ বাড়ে। আর জীবনে ইতিবাচক মানসিকতা অলসতা কাটিয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করে।

উন্নতির মানসিকতা গড়ে তোলা

কাইজেন অনুযায়ী নিজের মধ্যে উন্নতির মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। যতদিন বেঁচে থাকব উন্নতির চেষ্টা করব এই ধারণা নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে। জীবনে উন্নতির মানসিকতা গড়ে তুলতে পারলে প্রতিনিয়ত শেখার মানসিকতাও তৈরি হবে। আর একজন ব্যক্তি যত শিখবেন ততই তিনি উন্নতি করতে পারবেন। হ্যাঁ ব্যর্থতাও আসতে পারে। কিন্তু ব্যর্থতায় নিরুৎসাহিত না হয়ে, ব্যর্থতাকে শেখার ও বড় হওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখুন।

Comments