ইউক্রেনের পাল্টা হামলা: শান্তির সম্ভাবনা নিয়ে যা ভাবছেন রুশ বিশেষজ্ঞরা

পাল্টা আক্রমণের পর দোনেৎস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের সেনারা। ছবি: রয়টার্স

বেশ কিছুদিন ধরে রাশিয়া দাবি করছিল, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী (এএফইউ) পরিকল্পিতভাবে পাল্টা হামলা শুরু করেছে। শুরুতে এ বিষয়টি নিয়ে মুখ না খুললেও ইউক্রেন পরে হামলার কথা স্বীকার করেছে। যদিও এ হামলায় তাদের সাফল্য কতটুকু তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।

বিভিন্ন প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি দাবি করছে, কিয়েভের সেনাবাহিনী খুব বেশি সাফল্য পায়নি। বর্তমান পরিস্থিতি ও শান্তির সম্ভাবনা নিয়ে বিশিষ্ট কয়েকজন বিশ্লেষকের মতামত তুলে ধরেছে মস্কোর এই সংবাদমাধ্যম।

সের্গেই খ্রাপাচ

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও রিজার্ভ রাশিয়ান ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস অফিসার

'এএফইউ এখনও মূল আঘাতটা হানেনি। তাই এখন অনুমানে কিছু বলা অর্থহীন। যুদ্ধ আসলে বিজ্ঞান। যদি একাধিক দিকে হামলার ফলে এএফইউ রাশিয়ান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষায় দুর্বল স্থানগুলো খুঁজে বের করে এবং সেই হিসেবে একটি হামলা চালায় তাহলে আমি সংঘাত সমাধানের কোনো দৃশ্যমান সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না।

ইউক্রেনের লক্ষ্য ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে থাকা অঞ্চলগুলো মুক্ত করা। তবে ২০২২ সালের মার্চ মাসে নির্ধারণ করা সীমানা প্রতিষ্ঠা করার পরই সম্ভবত শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। যদিও উভয় পক্ষের যে সামরিক অবস্থা, তাতে এই পর্যায়ে সংঘাত বন্ধ করা অসম্ভব।'

ওলেগ ইভানভ

মস্কো সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রের প্রধান

'ইউক্রেনীয় পাল্টা আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে— অবশ্যই তা বলার সময় এখনও হয়নি। এটি কেবল শুরু। এএফইউর কাছে পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জামের বিশাল সরবরাহ রয়েছে এবং এটি ধ্বংস করতে কিছুটা সময় লাগবে।

আমার বিশ্বাস, ১৫ জুন ন্যাটো সম্মেলনে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সম্ভবত কিয়েভকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান, আরও ট্যাঙ্ক এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে তারা। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে এএফইউ ফ্রন্ট লাইন ভেদ করার প্রচেষ্টা আর বাড়াবে বলে ধরে নিতে পারি আমরা। তা না হলে শরৎকালে 'রাশিয়াকে পিছনে ঠেলে দেওয়ার' সুযোগ শূন্যর কাছাকাছি হবে তাদের জন্য।'  

গ্রিগরি সারবায়েভ

আইনি সংস্থা জাকোনোভেডের প্রতিষ্ঠাতা

`সংঘাত কমবে না। ইউক্রেনের নিজস্ব কিছু নেই। অস্ত্রের সরবরাহ বাড়বে এবং অস্ত্র আরও আধুনিক হবে। কিয়েভের জন্য থামার অর্থ মৃত্যু। কারণ পশ্চিমারা ইউক্রেনে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করে। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্ব শৃঙ্খল পুনর্গঠিত হচ্ছে এই সংঘাতের মাধ্যমে।'

পেত্র বিশকভ

সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক

'পরিস্থিতি কঠিন। শত্রুরা কেবল ফ্রন্ট লাইনেই নয়, বিভিন্ন দিক থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। ঝাপোরিঝঝিয়ার দিকের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এএফইউর জন্য একটি অপ্রীতিকর ও বিস্ময়কর ছিল, এটা সত্যি। কিন্তু অন্যান্য দিক থেকেও এ ধরনের বড় আক্রমণ আসতে পারে। ইউক্রেনের মানব সম্পদ বা অর্থ-কোনোটারই কমতি নেই। আমার মতে, অদূর ভবিষ্যতে শান্তির সম্ভাবনা নেই।'

মিখাইল নিঝমাকভ

এজেন্সি অব পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কমিউনিকেশনসের বিশ্লেষণাত্মক প্রকল্পের পরিচালক

'সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টে অফিসের উপদেষ্টা মিখাইল পোডোলিয়াক দুজনই বলেছেন, তারা মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে আলোচনার কোনো ভিত্তি দেখতে পাচ্ছেন না।

বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, সেনাদের মনোবল যেন ভেঙে না যায় সেজন্য শত্রুতার সক্রিয় পর্যায়ে বিবাদমান পক্ষগুলো দ্রুত সংলাপ এবং সমঝোতার বিষয়ে কম কথা বলে। পশ্চিমা নেতারা চাইবেন, অন্তত আগামী বছর রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রচারণার আনুষ্ঠানিক সূচনা না হওয়া ''সক্রিয় শত্রুতা'' অব্যাহত রাখতে। ক্রেমলিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এটি চান তারা।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ''আশাবাদী মনোভাব'' এবং ইউক্রেনকে ''যতদিন লাগে'' সমর্থন করার বিষয়ে জো বাইডেনের সাম্প্রতিক বিবৃতিগুলি পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করে।'

সের্গেই বেলোকোনেভ

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের অধীন ফিন্যান্সিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ গ্লোবাল স্টাডিজের পরিচালক

'কৌশলগত উদ্যোগ শত্রুর হাতে আছে, এ বিষয়টি উদ্বেগজনক। গত কয়েক দিনে ইউক্রেন আমাদের অবস্থানের মধ্যে কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকলেও আমাদের সেনাবাহিনী বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh, Japan for concluding EPA soon to boost economic, trade ties

Japanese PM Ishiba described Bangladesh as a long-standing friend and said that Japan would stand by Bangladesh in its endeavour for a democratic transition

1h ago