প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

তালেবান সরকার প্রচলিত আফগানিস্তানের নতুন পতাকা। ছবি: এএফপি
তালেবান সরকার প্রচলিত আফগানিস্তানের নতুন পতাকা। ছবি: এএফপি

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

গতকাল বৃহস্পতিবার ক্রেমলিন জানায়, তারা রাশিয়ায় তালেবান সরকারের নিয়োগ দেওয়া রাষ্ট্রদূতের নাম-পরিচয় গ্রহণ করেছে।

এর মাধ্যমেই তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা পূরণ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এক বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, কাবুলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় মস্কো। দেশটি কাবুলকে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবিরোধী ও মাদকচক্র দমন কার্যক্রমে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

পাশাপাশি, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার সম্ভাবনা আছে উল্লেখ করে জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি ও অবকাঠামো খাতের কথা আলাদা করে উল্লেখ করে রুশ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় বলে, 'আমরা বিশ্বাস করি, আফগানিস্তানের সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের পথ সুগম করবে।'

আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এক বিবৃতিতে বলেন, 'আমরা রাশিয়ার এই সাহসী পদক্ষেপকে বিশেষ মূল্য দিচ্ছি। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় এটি অন্যদের জন্যেও দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে।'

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথ সামরিক বাহিনী হঠাত করেই আফগানিস্তান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। এর আগে প্রায় ২০ বছর ওই বাহিনী আফগানিস্তানে মোতায়েন ছিল।

তৎকালীন বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় বিনা রক্তপাতে দেশটির ক্ষমতা দখল করে নেয় তালেবান গোষ্ঠী। সে বছরের আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত কোনো দেশই তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।

কাবুলে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত দমিত্রি ঝিরনভ ও আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। ফাইল ছবি: এএফপি
কাবুলে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত দমিত্রি ঝিরনভ ও আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। ফাইল ছবি: এএফপি

অবশেষে এই ধারা ভেঙে আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া।

তবে স্বীকৃতি না দিলেও ইতোমধ্যে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও পাকিস্তান কাবুলে তাদের নিজ নিজ রাষ্ট্রদূত পাঠিয়েছে, যা স্বীকৃতি দেওয়ার অন্যতম ধাপ।

বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মহলে ব্রাত্য হয়ে পড়া আফগানিস্তানের জন্য রাশিয়ার এই উদ্যোগ মাইলফলক হয়ে থাকবে।

ধাপে ধাপে তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন গত বছর আফগানিস্তানকে 'সন্ত্রাসবাদ দমনের' মিত্র বলে আখ্যায়িত করে। ২০২২ সালের পর থেকে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল, গ্যাস ও গম আমদানি করে আসছে দেশটি।

২০০৩ সালে তালেবান গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসীর আখ্যা দিলেও এ বছরের এপ্রিলে তা প্রত্যাহার করে ক্রেমলিন।

আফগানিস্তান থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে ইসলামপন্থি জঙ্গিরা রাশিয়ার প্রতি নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে লড়তে কাবুলকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে রাশিয়া।

২০২৪ সালের মার্চে ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর বন্দুক হামলায় মস্কোর একটি কনসার্ট হলে ১৪৯ জন নিহত হন। মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেন, তাদের গোয়েন্দাদের কাছে এমন তথ্য আছে যা ইঙ্গিত করছে বন্দুকধারীরা আইএসের আফগান শাখা আইসিস-কে'র (ইসলামিক স্টেট খোরাসান) সদস্য।

তালেবানের দাবি, তারা আফগানিস্তান থেকে ইসলামিক স্টেটের নিশানা মুছে ফেলতে কাজ করছে।

পশ্চিমা কূটনীতিকদের মতে, তালেবান সরকারের আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা। ক্ষমতায় এসে তালেবান সরকার নারীদের হাইস্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি, নারীদের ওপর আরও নানা রকম বিধিনিষেধও আরোপ করা হয়েছে।

তালেবানের দাবি, তারা নারী অধিকারের প্রতি সম্মান রেখেই কঠোর ইসলামি আইন চালু করেছে। 

Comments

The Daily Star  | English

Dengue cases see sharp rise in early July

Over 1,160 hospitalised in first 3 days, total cases cross 11,000

15h ago