বিশ্ব পরিবেশ দিবস

প্লাস্টিকের ব্যানারে প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে স্লোগান

চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুষ্ঠান। ছবি: স্টার

'প্ল্যাস্টিক দূষণ সমাধানে-সামিল হই সকলে' প্রতিপাদ্যে ও 'সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্ল্যাস্টিক দূষণ' স্লোগানে আজ সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। তবে প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে স্লোগান ও এর বিকল্পের কথা বলে নিজেদের অনুষ্ঠানে প্লাস্টিকের অধিক ব্যবহার করে সমালোচিত চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর। 

আজ সকালে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে বিশেষ আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণী সভায় গণহারে প্লাস্টিক ব্যানার ব্যবহার করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। কয়েক ঘণ্টার আলোচনা সভার জন্য পিভিসি ব্যানার দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয় পুরো একাডেমিকে। 

প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে সচেতনার কথা বলে এভাবে পিভিসি ব্যানারের ব্যবহার ও সভা শেষে এসব ব্যানারের গন্তব্য কী এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি পরিবেশের কর্মকর্তারা।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের পরিচালক নাসিম ফারহানা শিরিন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল।

কয়েক ঘণ্টার আলোচনা সভার জন্য পিভিসি ব্যানার দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয় পুরো একাডেমিকে। ছবি: স্টার

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান বলেন, 'আর দেরি নয়। আজ, এখন এবং এই মুহূর্তে এখান থেকেই শপথ নিতে হবে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে। আমাদের প্লাস্টিক দূষণ বন্ধে প্লাস্টিকের পণ্যসামগ্রী বিশেষ করে পলিথিন ব্যাগ পরিহারে উদ্যোগী হতে হবে। অন্যথায় প্লাস্টিকের মারাত্মক দূষণ পৃথিবীকে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে।'

'আমরাই পরিবেশে হাজার হাজার টন পলিথিন ছেড়েছি। অভ্যাসগতভাবে আমরা এটা করেছি। চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ড। যার মোট আয়তন ১৫৫ দশমিক ৪ বর্গকিলোমিটার। প্রতিদিন ২ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। তার মধ্যে ৮ শতাংশ প্লাস্টিক। মাত্র ৭৫ শতাংশ বর্জ্য আমরা সংগ্রহ করি। বাকি ২৫ শতাংশ প্রকৃতিতে রয়ে যায়। প্লাস্টিকের কারণে আজ হালদা নদী দূষিত হয়ে পড়েছে, প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী সচেতন হতে হবে। প্লাস্টিক বর্জনের বিপ্লবে অংশ নিতেই হবে আমাদের', বলেন তিনি।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. অলক পাল পরিবেশে পচনরোধী প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য, উপজাত, কণিকা বা প্লাস্টিকের দ্রব্য নিঃসরিত অণুর সংযোজন কীভাবে মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডল, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও মানব স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে নির্মিত 'কনটেক্সট, সিটুয়েশনস অ্যান্ড মেজারস' শিরোনামের প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠান স্থল ঘুরে দেখা গেছে, পিভিসি ব্যানারের বিভিন্ন সাইজের (১০ থেকে ২০ ফুটসহ) বড়-ছোট অর্ধশতাধিকের বেশি ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। শিল্পকলার দিকে রাস্তার ডিভাইডারেও নানা স্লোগানের পিভিসি ব্যানার লাগানো হয়েছে। সভা শেষে বড় বড় ব্যানারগুলো খুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মীরা। এক কর্মীকে এসব ব্যানারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে জানান, 'কিছু ব্যানার আমার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে দিয়ে দেব। কিছু আমরা পরে ফেলে দেই।'

সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি তার নাম বলেননি।

পুরো অনুষ্ঠানে অর্ধশতাধিকের বেশি ব্যানার সাঁটানো হয়েছে। ছবি: স্টার

পিভিসি ব্যানারের বিষয়ে ড. অলোক পালকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি বিষয়টি সেভাবে খেয়াল করিনি। তাই বলতে পারব না।'

প্লাস্টিক ব্যানারের বিষয়ে জানতে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পরে উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হককে জিজ্ঞেস করলে বলেন, 'এটা অফিসিয়াল প্রোগ্রাম ছিল। বিষয়টি পরিচালক স্যার ভালো বলতে পারবেন।'

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের পরিচালক নাসিম ফারহানা শিরিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেগুলোতে তারিখ বা সাল থাকে না, সেগুলো আমারা রেখে দেই, পুণব্যবহার করি, রিসাইকেল করি। আগেও করেছি। আমরা স্টক রেজিস্ট্রারে থাকে সেগুলো। কয়েক বছর ব্যবহারের পর সেগুলো ডিসপোস করে ফেলি।'

প্লাস্টিকের বিকল্প কিছু ব্যবহার করা যেত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কাপড় দিয়ে ব্যানার করলে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে না। আমরা চাই মানুষ সচেতন হোক। প্লাস্টিক পুরোপুরি বন্ধ করতে পারব না, কিন্তু কমাতে পারব।'

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহব্যাপী চিত্রাঙ্কন, স্লোগান প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। এ ছাড়াও, শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পরিবেশ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় প্লাস্টিক পণ্যের পরিবর্তে সুপারির খোলে তৈরি তৈজসপত্রসহ পরিবেশসম্মত বিভিন্ন প্রকল্প প্রদর্শন করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Economic expectations: Did govt fall short?

When an interim government was sworn into office following the ouster of the Awami League regime just 100 days ago, there was an air of expectation that the Prof Muhammad Yunus-led administration would take steps to salvage a scam-ridden financial sector and rescue an ailing economy.

7h ago