জিভে জল আনা মিরপুরের স্ট্রিট ফুড

ছবি: আসিয়া আফরিন চৌধুরী

ঘুরতে গেলে টুকটাক খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। অনেকে আবার খাওয়ার আগ্রহ থেকেই ঘুরে থাকেন বিভিন্ন জায়গা। কম খরচে নানা খাবারের স্বাদ পেতে স্ট্রিট ফুডের বিকল্প নেই। আপনি যদি রসনাবিলাসী হয়ে থাকেন আর স্ট্রিট ফুডে অভ্যস্ত হন, তবে মিরপুরের স্ট্রিট ফুডগুলো আপনার পেট আর মন ভরাবেই।

স্ট্রিট ফুডের জন্য মিরপুরে বেশ অনেকগুলো জনপ্রিয় স্থান রয়েছে। যারা মিরপুরের বাসিন্দা তারা তো বটেই, অনেকে দূর-দূরান্ত থেকেও চেখে দেখতে আসেন বেশকিছু জনপ্রিয় খাবার। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই জায়গাগুলো সরগরম থাকে স্ট্রিট ফুডপ্রেমীদের ভিড়ে। মিরপুরে অলিতে-গলিতে মজাদার সব স্ট্রিট ফুড থাকলেও বেশ কিছু খাবার আছে, যেগুলো অন্যগুলোর চেয়ে একটু আলাদা।

কাল্লু কাবাব ঘর

কাল্লু কাবাব ঘর এ এলাকায় বিখ্যাত। মুরগির চাপ, গরুর চাপ আর সাথে মগজ ভুনা নিতে একদমই ভুল করা যাবে না এখান থেকে। এই কাবাব ঘরে অনেক আইটেম থাকলেও এগুলো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। সঙ্গে নিন গরম গরম লুচি আর পুদিনার চাটনি মিশ্রিত সালাদ। চাপে পরতে পরতে থাকবে মসলা, যা ভাজার পর মুখে নিলে সেই স্বাদ জিভে রয়ে যাবে অনেকক্ষণ।

ছবি: আসিয়া আফরিন চৌধুরী

চাপ বানানোর সমস্ত প্রক্রিয়া একা হাতে করে থাকেন আরিফ হোসেন। তিনিই এই কাল্লু কাবাব ঘরের মালিক। অর্ডার দেওয়ার পরই চাপগুলো ভেজে দেওয়া হয়। তবে সেখানে গেলেই যে আপনি বসার জায়গা পাবেন কিংবা সঙ্গে সঙ্গে খাবার পাবেন তা নয়। ভিড়ের কারণে অপেক্ষা করতে হবে বেশ অনেকটা সময়। মিরপুর ১১ বাসস্ট্যান্ড থেকে সোজা হেঁটে গেলেই মিলবে কাল্লু কাবাব ঘর। বিকেল ৬টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই দোকান।

মিজানের চটপটি

মিরপুর ১ নাম্বারের মিজানের চটপটি ফুচকার একটু আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। ডিম, বোম্বাই মরিচের সুঘ্রাণ আর মশলার পরিমিত ব্যবহার এই চটপটিকে করে তুলেছে আরও সুস্বাদু। এই দোকানে ভিড় কিন্তু অনেক বেশি। এখানে খেতে হলে বেশ খানিকটা সময় হাতে নিয়ে যাওয়া ভালো।

চান্দু শেখের নেহারি

ভোজনরসিকদের কাছে আরেকটি প্রিয় খাবারের নাম হচ্ছে নেহারি আর সঙ্গে গরম গরম লুচি। নেহারিপ্রেমীদের জন্য আছে মিরপুর বিহারি ক্যাম্পের চান্দুর নেহারি। মহিষের এই নেহারিগুলো সাইজে বেশ বড়। চান্দু শেখ নিজেই নেহারি রান্নার তদারকি করে থাকেন। ২২ রকমের মসলা আর বাদামের কারণে নেহারির ঝোলটাও হয় বেশ ঘন আর মজার। নেহারি-লুচি ছাড়াও রমজান মাসে পাওয়া যায় স্পেশাল হালিম। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় বেচাকেনা, চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।

সিঙ্গারা

সিঙ্গারা তো সব জায়গাতেই পাওয়া যায়, তবে এর আর বিশেষত্ব কী? সেটা বুঝতে হলে খেতে হবে মিরপুরের ছোট সাইজের বিখ্যাত 'হ্যান্ডমেইড' সিঙ্গারা। মিরপুর ১২ এর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের গলির পাশে ছোট এই দোকানটায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কয়েক হাজার গরম গরম সিঙ্গারা ভাজা হতে থাকে। মাত্র ২০ টাকায় গরম ৭টি সিঙ্গারা দেবে আপনাকে, যার ভেতরে থাকবে আলু-পেঁয়াজের নরম পুর, ওপরে ছেটানো থাকবে বিট লবণ আর পেঁয়াজ।

নুরুল হোসেনের কাবাব

প্রায় ৫২ বছর ধরে একই জায়গায় নুরুল হোসেন ভ্যানের চুলায় ভেজে যাচ্ছেন গরুর চাপ আর মুরগির চাপ। এর পাশাপাশি তার কাছে মিলবে ডিম-আলুর চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ আর টিকিয়া। নুরুল হোসেনের চাপগুলো ডুবো তেলে ভাজা হয় খানিকটা ময়দা মাখিয়ে। তাই ওপরে একটু মুচমুচে ভাব আসলেও ভেতরে তুলতুলে নরম স্বাদ। চাপ পরিবেশন করা হয় সালাদের সঙ্গে। তবে কেউ যদি লুচি বা পরোটা খেতে চান তবে পাশের হোটেল থেকে আনিয়ে দেওয়া হয়।

বসে খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা সেখানে না থাকলেও ভোজনপ্রেমীদের ভিড়ের কমতি নেই। মিরপুর ১১ নাম্বার সেকশনে ভ্যানে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাওয়া যাবে এই চাপ।

ছবি: আসিয়া আফরিন চৌধুরী

রাব্বানী হোটেলের চা

রাব্বানী হোটেলে দুধ চায়ের কথা মিরপুরের সব চা প্রেমীই জানেন। এই হোটেলে 'মোবাইল চা' নামের এক ধরনের চা পাওয়া যায়, যা দুধের মালাই বা সর থেকে তৈরি। স্পেশাল চা কিংবা নরমাল চা যাই নেন না কেন, বানানো হয় গরুর দুধ দিয়ে। ৩২ বছরের পুরনো এই চায়ের স্বাদ আজও একই।

Comments

The Daily Star  | English

$14b lost to capital flight a year during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

10h ago