গত বছরের তুলনায় প্রথম ৫ মাসে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৩৬০ শতাংশ

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

২০২৩ সালে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬২০ জন এবং মারা গেছেন ১৩ জন। অথচ, গত বছরের প্রথম ৫ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩৫২ জন এবং তাদের মধ্যে কেউ মারা যাননি।

সেই হিসাবে, বছরের প্রথম ৫ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৩৬০ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র দেখা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত ডেঙ্গুর তথ্য প্রকাশ করে আসছে।

২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রথম ৫ মাসে ১০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এই সময়ে কেউ ডেঙ্গুতে মারা যাননি। ২০২০ সালের প্রথম ৫ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩০৬ জন এবং ওই বছরও একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ মারা যাননি। ২০১৯ সালের প্রথম ৫ মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩২৪ জন এবং মারা গেছেন ২ জন।

২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শুধু মে মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ১৯৩ জন, ২০২০ সালে জন, ২০২১ সালে ৪৩ জন ও ২০২২ সালে ১৬৩ জন। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪ বছরের মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ মারা যায়নি।

অথচ, এ বছর মে মাসেই প্রথম ২৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩৪ জন এবং মারা গেছেন ২ জন।

এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ কি হতে পারে? জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর জানুয়ারি থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ আছে। মে মাসে বৃষ্টি হওয়ায় এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা ১২ জনের পর্যন্ত রক্ত খেতে পারে। এর ফলে জ্যামিতিক হারে ডেঙ্গু রোগী ছড়ায়। তাই মে মাসে অন্যান্য বছরের তুলনায় রোগী অনেক বেশি।'

তিনি বলেন, 'যেহেতু এ বছর ডেঙ্গুর মৌসুম অনেক আগেই শুরু হয়েছে, তাই কারো জ্বর হলে অবশ্যই ডেঙ্গু পরীক্ষার পাশাপাশি রোগীকে মশারির ভেতরে রাখতে হবে। কারণ, একজন ডেঙ্গু রোগীকে যদি সাধারণ মশা কামড় দেয়, সেই মশাও তখন ডেঙ্গুর বাহক হয়ে যায়। আর কোথাও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলে সিটি করপোরেশনের উচিত সেই বাড়ির পাশাপাশি আশেপাশের এলাকার অ্যাডাল্ট মশা মেরে ফেলতে হবে। বাড়ির ভেতরে কাজ করবে ব্যক্তি আর বাইরের কাজ করবে সিটি করপোরেশন।'

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ফ্যাকাল্টি ড. জিএম সাইফুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডেঙ্গু ভাইরাস বাহিত মশা গত বছর থেকেই আছে। আমরা সক্রিয় ক্লাস্টার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের কোনো জরিপ নেই। এডিশ মশা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ নেই। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ বছর অনেক আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় ডেঙ্গু রোগীও বেশি। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জুলাইয়ের দিকে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।'

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. ফজলে শামসুল কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দেরিতে শুরু হয়েছিল। সেই প্রভাবটিই এখনো চলমান আছে। এ কারণে এ বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে অনেক বেশি রোগী দেখা গেছে। তাছাড়া বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেছে। এর একটা প্রভাব তো আছেই। আমার কাছে মনে হয় মূলত ২টি কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। তাহলো—জলবায়ু পরিবর্তন ও দ্রুত নগরায়ন।'

জুন থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এ বছরের শুরুর থেকেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। সচেতনতামুলক কার্যক্রম পরিচালনা, মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, স্কুলে স্কুলে শিশু ও তরুণদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। থানায় অনেক বাজেয়াপ্ত মালামাল ফেলে রাখা হয়। সেসব জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। থানাগুলোর সঙ্গেও কথা আমরা বলেছি। আশা করি ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো।'

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হাসপাতালগুলো রোগী বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের আওতাধীন যেসব হাসপাতালে রোগী আছেন, তাদের অধিকাংশই ঢাকার বাইরের। পদ্মা সেতুর কারণে যোগযোগ সহজ হওয়ায় অনেকেই ঢাকায় এসে ভর্তি হচ্ছেন এবং ঢাকার আত্মীয়ের বাসার ঠিকানা দিচ্ছেন হাসপাতালে।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi migrants workers rights in Malaysia

Malaysia agrees to recruit 'large number' of Bangladeshi workers

Assurance will be given to ensure their wages, safety, and overall welfare, according to ministry officials

1h ago