চলে গেলেন ‘কুইন অব রক এন রোল’ টিনা টার্নার
বিশ্বের সর্বকালের সেরা গায়িকাদের অন্যতম মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী টিনা টার্নার ৮৩ বছর বয়সে মারা গেছেন।
গতকাল বুধবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
টিনা টার্নারের প্রতিনিধি জানান, তিনি দীর্ঘদিন রোগে ভোগার পর সুইজারল্যান্ডে নিজ বাসভবনে শান্তিপূর্ণভাবে মারা গেছেন।
৫০ এর দশকে টিনা তার রক এন রোল ক্যারিয়ার শুরু করেন। সঙ্গীত বিষয়ক টিভি চ্যানেল এমটিভির প্রচার শুরুর পর তিনি সারা বিশ্বে তুমুল জনপ্রিয়তা পান।
৮০র দশকে তার 'হোয়াটস লাভ গট টু ডু উইথ ইট' এর ভিডিওতে নিউ ইয়র্কের সড়কে তার স্পাইক করা সোনালি চুল, ক্রপড জিন্সের জ্যাকেট, মিনি স্কার্ট ও স্টিলেটো হিল জুতা পরা গানের চিত্রায়নে নতুন যুগের সূচনা হয়।
'কুইন অব রক এন রোল' নামে পরিচিত টিনা ৮০র দশকে ৬ বার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জেতেন। পরে আরও ২ বারসহ মোট ৮ বার তিনি এই খেতাব জিতেছেন। ৮০র দশকে তার ১২টি গান শীর্ষ ৪০ গানের তালিকায় স্থান পায়, যার মধ্যে আছে 'টিপিকাল মেইল', 'দ্য বেস্ট', 'প্রাইভেট ড্যান্সার' ও 'বেটার বি গুড টু মি।' ব্রাজিলের রাজধানীতে ১৯৮৮ সালে তার কনসার্টে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষ যোগ দেন, যা ছিল নতুন একটি রেকর্ড।
টিনা টার্নার তার প্রাক্তন স্বামীর হাতে অসংখ্যবার নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন। এ বিষয়টি তার সঙ্গীত ও পরবর্তী জীবনে অনেক প্রভাব ফেলেছে। গিটারিস্ট আইকি টার্নারের কাছে নির্যাতিত হয়ে তিনি অনেকবার হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
গায়িকা জ্যানেট জ্যাকসন বলেন, 'টিনার গল্পে নির্যাতিত হওয়ার অংশটির চেয়ে তার ঘুরে দাঁড়ানোর অসামান্য গল্পটি বেশি চমকপ্রদ।'
স্বনামধন্য সঙ্গীত বিষয়ক পত্রিকা রোলিং স্টোন টিনা টার্নারকে সর্বকালের সেরা ১০০ শিল্পীর তালিকায় ৬৩তম স্থান দেয়।
১৯৮৫ সালে টিনা টার্নার ম্যাড ম্যাক্স বিয়ন্ড থান্ডারডোম সিনেমায় মেল গিবসনের বিপরীতে একজন নির্দয় নারী নেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করে সুনাম কুড়ান।
১৯৯৩ সালে টিনা টার্নারের জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা চলচ্চিত্র 'হোয়াটস লাভ গট টু ডু উইথ ইট' এ অভিনয় করে অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলা ব্যাসেট অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পান।
রোলিং স্টোন্স ব্যান্ডের গায়ক মিক জ্যাগার জানান, তিনি টিনার মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন হয়েছেন। তিনি টিনাকে 'অনুপ্রেরণাদায়ী, উষ্ণ, রসিক ও উদার' বলে অভিহিত করেন।
'আমার তরুণ বয়সে তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছে এবং আমি তাকে কখনো ভুলবো না', যোগ করেন জ্যাগার।
কানাডার গায়ক ব্রায়ান অ্যাডামস ১৯৮৫ সালে টিনার সঙ্গে 'ইটস অনলি লাভ' ডুয়েটে অংশ নেন। তিনি বলেন, 'পৃথিবী এক শক্তিমান নারীকে হারাল।'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টিনা টার্নারকে 'কালজয়ী প্রতিভা' বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, তার 'ব্যক্তিগত শক্তিমত্তা ছিল অসামান্য।'
২০১৮ সালে সঙ্গীত জগত থেকে অবসর নেন তিনি। এরপর থেকে তিনি স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগেছেন। এর মাঝে তার বড় ছেলে ক্রেইগ (৫৯) লস এঞ্জেলেসে আত্মহত্যা করেন। ২০২২ সালে তার অপর সন্তান রনি মারা যান।
Comments