সিটি নির্বাচন

সিলেটে ভোটার উপস্থিতি ও দলীয় ঐক্যই আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (ডান থেকে দ্বিতীয়) গতকাল মঙ্গলবার সিলেটে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

আসন্ন সিলেট সিটি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার দিন গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় ভোটের ভাগ্য আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষেই থাকবে বলে মনে করছেন অনেক ভোটার।

ভোটারদের ধারণা, এটি একটি নিরস নির্বাচন হতে চলেছে।

তবে এর মাঝেও আনোয়ারুজ্জামানের সামনে থাকছে ২টি বড় চ্যালেঞ্জ—নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং নির্বাচন পর্যন্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা।

আগামী ২১ জুনের নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামানের সামনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন এমন একমাত্র সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন সিলেট সিটির বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

বিএনপি নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দিলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন তিনি। অবশেষে গত ২০ মে দলীয় নির্দেশে নিজেকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেন আরিফুল।

আরিফুল নির্বাচনে না আসলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক বদরুজ্জামান জামান ও সিলেট মহানগর শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা ছিল।

এছাড়া সিলেট পৌরসভার (মহানগর হিসেবে ঘোষণার আগে) দুবারের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবরুল হোসেন এবং আওয়ামী লীগের সিলেট মহানগর শাখার সহ-সভাপতি ফয়জুর আনোয়ার আলাওরের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি আলোচনায় ছিল।

তবে এই ৪ জনের কেউই শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচনে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান, জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম ও ৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কোনো রাজনৈতিক কিংবা বড় পরিসরে সামাজিক সম্পৃক্ততা না থাকায় তাদেরকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর উপযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করছেন না ভোটাররা।

তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনে করেন, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী।

আনোয়ারুজ্জামান বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি না যে তার (আরিফুল) প্রস্থানের ফলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না। জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী যথেষ্ট শক্তিশালী। আর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচার ও প্রচারণা চালিয়ে যাবো।'

পর্যাপ্ত ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আনার চ্যালেঞ্জ

শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় সিলেট সিটি নির্বাচনে কম ভোটারের উপস্থিতিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে ধারণা সচেতন নাগরিকদের।

নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের উদাসীনতার কারণে ২০২০ সাল থেকে সাম্প্রতিক নির্বাচনে খুব কম ভোটারের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন।

বিএনপির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকার পরও ২০২০ সালের ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ২৯ শতাংশ এবং উত্তর সিটি নির্বাচনে মাত্র ২৫ দশমিক ৩২ শতাংশ।

২০২১ সালে সিলেট-৩ আসনের উপ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল এবং এ নির্বাচনেও ভোটার উপস্থিতি ছিলো মাত্র ৩৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, বগুড়া-৪ ও-৬ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও-৩ আসনের উপনির্বাচনও খুবই কম ভোটার ছিল। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ১৬ শতাংশ।

তবে ভোটারদের এই উদাসীনতাকে কাটিয়ে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ নিতে চান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, 'সিলেট সিটি নির্বাচনে পর্যাপ্ত ভোটার উপস্থিতি থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। নির্বাচনী প্রচারণার জন্য আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করেছি। কমিটিগুলো নির্বাচনের দিন ভোটারদের ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করতেও কাজ করবে।'

আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চ্যালেঞ্জ

২০১৮ সালের সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ের পিছনে স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতাকে দায়ী করেন দলের নেতৃবৃন্দ।

গত ৪ মে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের সমর্থনে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজিত কর্মী সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকও প্রসঙ্গটি আলোচনায় আনেন।

তিনি বলেছিলেন, 'দলে খন্দকার মোশতাকের অনুসারী যেমন রয়েছে, তেমনি মুজিব আদর্শের লড়াকু এবং ত্যাগী কর্মীরাও রয়েছেন। মোস্তাক বাহিনীর কারণেই বিগত দিনে এই নগরের অভিভাবক বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে হারতে হয়েছে। এবার তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না আওয়ামী লীগ।'

এই নির্বাচনে অন্তত আওয়ামী লীগের ৮জন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ দলের যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়।

যদিও সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে আনোয়ারুজ্জামানকে সমর্থন জানিয়েছেন, তবুও দলের নেতাকর্মীদের ধারণা কিছু নেতা ও তাদের অনুসারীরা নিরবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন।

আনোয়ারুজ্জামান সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল এবং সে কারণে অনেক প্রার্থী ছিলেন। তারা সবাই আমার সঙ্গে আছেন এবং আমি তাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে চাই।'

Comments

The Daily Star  | English

BNP proposes term limit for PM, reinstating caretaker government

The party presented 62 proposals to the Constitution Reform Commission

2h ago