উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

অসাধারণ পারফরম্যান্সে রিয়ালকে গুঁড়িয়ে ফাইনালে ম্যান সিটি

ছবি: এএফপি

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একক আধিপত্য দেখাল ম্যানচেস্টার সিটি। মুহুর্মুহু আক্রমণ চালিয়ে প্রতিপক্ষকে পুরোটা সময় কোণঠাসা করে রাখল তারা। এক সময় বলের দখল পেতেই ভুগতে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ প্রত্যাবর্তনের কোনো উপায় খুঁজে পেল না। রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নদের গুঁড়িয়ে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা জায়গা করে নিল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে।

বুধবার রাতে ঘরের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে ৪-০ গোলে জিতেছে সিটি। আগের লেগে রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ১-১ গোলে ড্র করেছিল দুই দল। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলের অগ্রগামিতায় আসরের শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চের টিকিট পেল গার্দিওলার দল।

পর্তুগিজ মিডফিল্ডার বার্নার্দো সিলভা প্রথমার্ধে করেন জোড়া লক্ষ্যভেদ। বিরতির পর আত্মঘাতী গোল করে বসেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার এদার মিলিতাও। দ্বিতীয়ার্ধের একদম শেষদিকে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার হুলিয়ান আলভারেজ।

তিন মৌসুমের মধ্যে দ্বিতীয়বার ইউরোপের সেরা ক্লাব প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়নরা। তবে শিরোপার স্বাদ এখনও চেখে দেখা হয়নি তাদের। ২০২০-২১ মৌসুমে খুব কাছাকাছি পৌঁছেছিল সিটিজেনরা। তবে চেলসির কাছে ১-০ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল তাদের।

প্রথম থেকেই স্প্যানিশ লা লিগার জায়ান্ট রিয়ালকে চাপে রাখা সিটি সপ্তম মিনিটে ভীতি ছড়ায়। কেভিন ডি ব্রুইনা রক্ষণচেরা পাসে খুঁজে নেন আর্লিং হালান্ডকে। বাইলাইনের কাছে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে এড়িয়ে তিনি বল ফেলেন ডি-বক্সের মাঝে। কিন্তু সেখানে ছিলেন না তার কোনো সতীর্থ। কিছুক্ষণ পর রদ্রির দূরপাল্লার শট চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে।

ত্রয়োদশ মিনিটে বড় বাঁচা বেঁচে যায় রিয়াল। বামপ্রান্ত থেকে জ্যাক গ্রিলিশের ক্রসে হেড করেন ফাঁকায় থাকা হালান্ড। অসাধারণ দক্ষতায় কর্তোয়া তা রুখে দিলেও বল ছিল গোললাইনের কাছেই। পরে তা বিপদমুক্ত করেন দাভিদ আলাবা। ছয় মিনিট পর ডি ব্রুইনার নিচু ফ্রি-কিক চলে যায় কাছের পোস্ট ঘেঁষে।

ছবি: এএফপি

২১তম মিনিটে ফের কর্তোয়া সিটির সামনে বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়ান। ডি ব্রুইনার ক্রস দূরের পোস্ট থেকে হেড করে গোলমুখে ফেলেন মানুয়েল আকাঞ্জি। এরপর হালান্ডের হেড জালের দিকেই যাচ্ছিল। তবে কর্তোয়া ঝাঁপিয়ে পড়ে অতিমানবীয় কায়দায় কোনোক্রমে ফিরিয়ে দেন বল।

দুই মিনিট পর সিটিকে আর ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। গুছিয়ে আক্রমণে ওঠার পর ডানপ্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সে বার্নার্দোকে খুঁজে নেন ডি ব্রুইনা। প্রথম ছোঁয়ায় বলের নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। এরপর বাম পায়ের জোরালো শটে কাছের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন বার্নার্দো।

২৭তম মিনিটে ফের হতাশায় পুড়তে হয় হালান্ডকে। ইল্কাই গুন্দোয়ানের কাছ থেকে বল পেয়ে তার নেওয়া হাফ ভলি অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর কয়েক মিনিটের জন্য রিয়ালের মধ্যে দেখা যায় ঘুরে দাঁড়ানোর তাড়না। ৩২তম মিনিটে নিজের গতি কাজে লাগিয়ে সিটির ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। তবে তিনি বিপদ তৈরির আগেই বল কেড়ে নেন কাইল ওয়াকার।

তিন মিনিট পর ভাগ্যের বিড়ম্বনায় সমতায় ফেরা হয়নি রিয়ালের। টনি ক্রুসের দূরপাল্লার বুলেট গতির শট সিটির গোলরক্ষক এদারসনের গ্লাভস ছুঁয়ে ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। প্রথমার্ধে গোলের উদ্দেশ্যে এটাই ছিল সফরকারীদের প্রথম ও একমাত্র শট। তবে তাদেরকে স্তব্ধ করে দিয়ে সৌভাগ্যের সহায়তায় ৩৭তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ান বার্নার্দো। গুন্দোয়ানের প্রচেষ্টা মিলিতাওয়ের গায়ে লেগে প্রতিহত হওয়ার পর বল উঠে যায় উপরে। লাফিয়ে উঠে বার্নার্দো হেড করে ফাঁকা জালে বল পাঠান।

দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে রিয়াল গোল পেতে পেতেও পায়নি। ২৫ গজ দূর থেকে আলাবার ফ্রি-কিক নিচু হয়ে জালে জড়াতে যাচ্ছিল। ঝাঁপিয়ে পড়ে কোনোক্রমে বল ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে পাঠান এদারসন। ৭৩তম মিনিটেই ম্যাচের ভাগ্য নিশ্চিত হয়ে যেতে পারত। গুন্দোয়ানের ব্যাকহিলের পর কর্তোয়াকে একা পেয়ে যান হালান্ড। তবে আবারও ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন রিয়ালের গোলরক্ষক। হালান্ডের শট তিনি পা দিয়ে ঠেকানোর পর বল ক্রসবারে বাধা পায়।

তিন মিনিট পর কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের বিদায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। ডি ব্রুইনার ফ্রি-কিকে আকাঞ্জি মাথা ছোঁয়ানোর পর মিলিতাও বল বিপদমুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তবে নিজেদের জালেই বল পাঠিয়ে দেন তিনি।

৮৩তম মিনিটে জোড়া সেভে স্বাগতিকদের জাল অক্ষত রাখেন এদারসন। প্রথম করিম বেনজেমার চিপ শট আটকান তিনি। এরপর দ্রুত নিজের পজিশনে ফিরে আটকে দেন বদলি দানি সেবায়োসের শট।

দুই বদলি খেলোয়াড়ের সমন্বয়ে রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয় সিটি। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা তিন মিনিটের প্রথমটিতে ফিল ফোডেন প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল বাড়ান। কেবল কর্তোয়াকে পরাস্ত করতে হতো আলভারেজের। কোনো ভুল করেননি তিনি। ঠাণ্ডা মাথায় ডান পায়ের আলতো ছোঁয়ায় গোলের স্বাদ নেন।

ছবি: এএফপি

শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে জয়োল্লাসে মাতে ম্যান সিটি। ইতিহাদে দুই দল শেষবার মুখোমুখি হয়েছিল গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে। সেবার ৪-৩ গোলে জিতেছিল সিটিজেনরা। তবে বার্নাব্যুতে ফিরতি লেগে নাটকীয়ভাবে ৩-১ গোলে জিতে ফাইনালের টিকিট পেয়েছিল রিয়াল।

তুরস্কের ইস্তানবুলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের মৌসুমের ফাইনাল হবে আগামী ১১ জুন। সেখানে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ইন্টার মিলানের মুখোমুখি হবে ম্যান সিটি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইতালিয়ান সিরি আর দুই পরাশক্তির লড়াইয়ে এসি মিলানকে হারিয়ে ইন্টার নিশ্চিত করেছে ফাইনাল।

Comments

The Daily Star  | English

IMF loan tranches: Agreement with IMF at last

The government has reached a staff-level agreement with the International Monetary Fund for the fourth and fifth tranche of the $4.7 billion loan programme, putting to bed months of uncertainty over their disbursement.

11h ago