৩ হাজার পান গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ, ‘আতঙ্কে’ ‍পুঞ্জিবাসী

ঘটনাস্থলে গিয়েছেন বড়লেখার সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসাইন। ছবি: স্টার

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বেরেঙ্গা পানপুঞ্জির ৪টি পানজুমের ৩ হাজার পান গাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে আল্লাদাত চা-বাগান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল সোমবার রাতে পুঞ্জির বাসিন্দারা এই অভিযোগ করেছেন। আজ তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

পুঞ্জিবাসীর অভিযোগ, এই ঘটনার পর থেকে তারা আতঙ্কে আছেন।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী অলমি প:তাম গতকাল আল্লাদাত চা-বাগানের ম্যানেজার সিরাজ উদ্দিন, পাহারাদার নূর উদ্দিন ও আব্দুস সামাদের নাম ও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত উল্লেখ করে বড়লেখা থানায় লিখিত একটি অভিযোগ করেছেন।

বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান।

লিখিত অভিযোগে বেরেঙ্গা পানপুঞ্জির হেডম্যান অলমি প:তাম বলেন, উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বেরেঙ্গা পানপুঞ্জিতে ব্রিটিশ আমল থেকে ৬০টি খাসিয়া পরিবারের প্রায় ৫০০ জন মানুষ বসবাস করছেন। বংশ পরম্পরায় তারা পানজুম ও সুপারি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত সোমবার সকাল আনুমানিক ৬টার দিকে আল্লাদাত চা-বাগানের ম্যানেজার সিরাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে বাগানের পাহারাদার নূর উদ্দিন ও আব্দুস সামাদসহ কয়েকজন লোক বেরেঙ্গা পানপুঞ্জির দক্ষিণ পাশের খাসিয়াদের লাগানো ৪টি পানজুমের ৩ হাজার পান গাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলে। বিষয়টি দেখে খাসিয়ারা বাগানের লোকজনকে বাধা দিতে গেলে তারা তাদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়।

তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় বাধা দিতে গেলে বাগানের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করেছে। যে কারণে ভয়ে তারা প্রতিবাদ করেননি। পরে পুঞ্জির লোকজন ছুটে এলে বাগানের লোকজন চলে যায়। সে সময় তারা খসিয়াদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে তাদের বেরেঙ্গা পানপুঞ্জি থেকে উচ্ছেদ করবে বলেও হুমকি দিয়েছে। এতে তারা আতঙ্কে রয়েছেন।

ডেইলি স্টারকে অলমি বলেন, 'আমাদের গাছ কেটে ফেলায় ও অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলার চেষ্টা করায় আমরা এখন আতঙ্কে আছি।'

অভিযোগ বিষয়ে আল্লাদাত চা-বাগানের ম্যানেজার সিরাজ উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের চা-বাগানের ৪০-৫০টি গাছ চুরি হয়েছে, সেই বিষয়টি নিয়েই আমরা ব্যস্ত। অন্যদিকে আমাদের চা-বাগানের পরিচালক এসেছেন। তাই আমরা গত ২-৩ দিন ধরে খুবই ব্যস্ত। আর পুঞ্জি থেকে আমাদের চা-বাগান অনেক দূরে। কে বা কারা তাদের গাছ কেটেছে, এটা আমরা জানি না।'

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জজকোর্টের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সুবিমল লিন্ডকিরি বলেন, 'পুঞ্জির খাসি ও মান্দি জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক আছে। তাদের ঐতিহ্যগত থাকার অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। রাষ্ট্র একক কোনো জাতি, ধর্ম ও গোষ্ঠীর না। বহুত্ববাদী যে ঐতিহ্য আছে, সেটাকে ধরে রাখতে হবে। বারবার গাছ কেটে, মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বিপদে ফেলে কোনো উন্নয়ন হতে পারে না। যারা পান গাছ কেটেছে, তাদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নিরাপদে যেন পানজুম করা যায়, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।'

বড়লেখা থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেরেঙ্গা পানপুঞ্জিতে পান গাছ ও সুপারি গাছ কাটার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য আজ স্পটে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।'

বড়লেখার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর হোসাইন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বেরেঙ্গা পানপুঞ্জির ৪টি পানজুমের বেশ কিছু পান গাছ ও কয়েকটি সুপারি গাছ কে বা কারা কেটে ফেলেছে। ঘটনার সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা মিলবে, তাদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

4h ago