ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ

বেরিয়ে না গিয়ে সেঞ্চুরি করলেও অপরাধবোধে ভুগতেন প্রান্তিক

Prantik Nawrose Nabil
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

কট বিহাইন্ডে বোলার-ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি না আম্পায়ার। সবার মনোযোগ যখন আম্পায়ারের দিকে তখন দেখা গেল আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করেই ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা ধরেছেন সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগানো প্রান্তিক নওরোজ নাবিল। ব্যাটারকে নিজেই বেরিয়ে যেতে দেখে আম্পায়ারও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। তরুণ এই ব্যাটারের কাছে ব্যাটে লাগার পর বেরিয়ে যাওয়াটাই মনে করছেন নৈতিক অবস্থান। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের সুবিধা নিয়ে সেঞ্চুরি করলেও নাকি অপরাধবোধে ভুগতেন তিনি।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগ রাউন্ডে রোববার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি আর প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। শেষ ওভারে গিয়ে তাতে ১৩ রানে জিতেছে শেখ জামাল।

দারুণ ব্যাট করা প্রান্তিক নিজে বেরিয়ে না গেলে ম্যাচের ফল ভিন্ন হতে পারত। ২৭৭ রান রান তাড়ায় তখন ৩০তম ওভারের ঘটনা। প্রাইমের আশা ভরসার প্রতীক হয়ে ৮৯ বলে ৭৫ রানে ক্রিজে ছিলেন প্রান্তিক। অফ স্পিনার সাইফ হাসানের একটা বল এই বাঁহাতি কাট করতে গিয়ে পরাস্ত হন। আবেদন হয় জোরালো, আম্পায়ার তা নাকচ করে দেন। কিন্তু অন্য দিকে চোখ ফেরাতেই দেখা হনহন করে বেরিয়ে যাচ্ছেন প্রান্তিক নিজেই!

মোড় ঘুরে যাওয়া ম্যাচে পরে নাটাই এরপর আর নিজের দিকে রাখতে পারেনি প্রাইম। ম্যাচ শেষে প্রান্তিক জানান, বল তার ব্যাটে লাগার পর আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করতে চাননি তিনি, আর এটাই তার চারিত্রিক ধরণ, 'আমি আসলে (ব্যাটে) লাগার পরে তাকাইনি আম্পায়ার কি করছে। আমি যখন হাঁটা ধরেছি তখন টের পেয়েছি যে আউট দেয়নি এবং আমি জানতাম যে আমি কোনভাবেই ফিরব না।'

Prantik Nawrose Nabil
৭৫ রানের ইনিংসের পথে প্রান্তিক নওরোজ নাবিল। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ার আউট না দিলেও ব্যাটারের বেরিয়ে যাওয়ার বিখ্যাত কিছু ঘটনা আছে। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট একাধিকবার করেছেন তা। তবে প্রান্তিক কাউকে অনুসরণ করে নয়, নিজের মনের ভেতরের নৈতিক অবস্থান তাকে এমনটা করতে তাড়িত করে, 'কে করেছে এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত করছি না। জিনিসটা হচ্ছে এটা যার যার নৈতিকতার ব্যাপার। আমার কাছে মনে হয় কঠোর পরিশ্রমগুলো পরিপূর্ণ মনে হয় এভাবে হলে (সৎ থাকলে)। হয়ত এই সেঞ্চুরিটা করার পর মনে হতো আমি আদর্শ পথে এটা করিনি,  গিলটি ফিলিং হতো।'

বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক হরহামেশা ব্যাপার। ভুল আম্পায়ারিংয়ের সুবিধা নিতে কার্পণ্য করে না দলগুলো। এই বাস্তবতায় প্রান্তিক একদম ব্যতিক্রম। ভুল কাজকে বৈধতা দিতে চান না তিনি,  'আমার কাছে মনে হয় আমরা যদি পুরোটা নিয়ে ভাবি। যদি কোন কিছু ভুল হয়, সেটা বৈধ হওয়া উচিত না। তাহলে এটা আমাদের সঙ্গে না, যেকোনো দলের জন্যই প্রযোজ্য। আমাদের অবশ্য চিন্তা করা উচিত কোনটা ভুল, কোনটা ভুল না।'

ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে তার উইকেট ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আম্পায়ার আউট না দিলেও নিজেই বেরিয়ে আসায় টিম ম্যানেজমেন্ট তার উপর নাখোশ হয়নি,  'এটার ব্যাপারে কেউ কিছু বলেনি। আমি যে কোচ (মোহাম্মদ সালাউদ্দিন) অধীনে খেলেছি তিনি আমাকে চিনেন।'

বাংলাদেশ ক্রিকেটে প্রান্তিকের নাম ছড়ায় ২০২০ সালে। সেবার যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য তিনি। ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলেও ছিলেন প্রতিশ্রুতিশীল। বাকপটু হওয়ায় তার ক্রিকেটীয় চিন্তার ভিডিও অনেকের নজর কাড়ে।

তার সঙ্গে খেলা অনেকে পরে ঘরোয়া ক্রিকেট পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পা রাখলেও প্রান্তিক থেকে গেছেন অনেকটা আড়ালে। এবার প্রিমিয়ার লিগে অবশ্য কয়েকটি ইনিংসে নিজেকে চেনাতে পেরেছেন তিনি। সবার শেষে নিজেকে আলোয় আনতে পারলেও তা নিয়ে আক্ষেপ নেই। এক্ষেত্রেও তার দর্শন একটু ভিন্ন।  তিনি মনে করেন  পরে হোক কিন্তু লম্বা হোক পথচলা, 'আমি সব সময় প্রক্রিয়ার উপর ফোকাস করছি। কারো আগে হলো, কারো পরে। এটা লম্বা দৌড়। আমার লক্ষ্যগুলো আমি পূরণ করতে চাই। কারো আগে হবে, আমি তাদের শুভকামনা জানাই। কারণ আমরা একটা পতাকাই প্রতিনিধিত্ব করি। আমার মনে হয় কত দ্রুত করতে পারলাম সেটা না, কতদিন ধরে করতে পারলাম সেটা গুরুত্বপূর্ণ।' 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

2h ago