বিএম ডিপোর বিস্ফোরণে কেউ দায়ী নয়: পুলিশ

ছবি: স্টার

সীতাকুণ্ড উপজেলার বিএম কনটেইনার ডিপোর ৮ কর্মকর্তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সীতাকুণ্ড থানায় দায়ের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। 

গত বছরের ৪ জুন এই বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনায় ৫১ জন নিহত এবং ২৫০ জন আহত হন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী বুধবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করলে আজ সকালে এসব তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে পুলিশ বলেছে, অভিযুক্তরা ঘটনার জন্য দায়ী নয় বা বিস্ফোরণটি কোনো নাশকতা নয়। এটি একটি দুর্ঘটনা ছিল।

আসামিরা হলেন, উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) নুরুল আক্তার; ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেদুর রহমান; সহকারী প্রশাসন কর্মকর্তা আব্বাস উল্লাহ; সিনিয়র নির্বাহী (প্রশাসন ও অভিযোগ) মো. নাসির উদ্দিন; সহকারী ব্যবস্থাপক (অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপো) মো. আব্দুল আজিজ; ইনচার্জ (কন্টেইনার মালবাহী স্টেশন) সাইদুল ইসলাম; কনটেইনার ও মালবাহী স্টেশনের নজরুল ইসলাম এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) নাজমুল আক্তার খান।

ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনে মামলাটি দায়ের করেছিলেন সীতকুন্ড থানা পুলিশ। দায়িত্বে সম্পূর্ণ অবহেলায় বিস্ফোরণের সূত্রপাত বলে সেখানে অভিযোগ করা হয়।

প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের এসপি এস এম শফিউল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে, এটি একটি 'মিস্টেক অব ফ্যাক্ট' বলে বলা হয়েছে। ঘটনার জন্য ৮ জন কর্মকর্তা দায়ী নয়। তাদের দায়িত্বেও কোনো অবহেলা ছিল না। এটা একটা দুর্ঘটনা।'

তিনি বলেন, 'আমরা কোনো ফৌজদারি অপরাধ বা ইল মোটিভ খুঁজে পাইনি।'

আদালতের অনুমতি নিয়ে, ডিএনএ রিপোর্ট সংরক্ষণ করে বাকি অজ্ঞাতনামাদের মরদেহগুলো আঞ্জুমান-ই মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে বলে জানান এসপি।

এর আগে সীতাকুণ্ড মডেল থানার উপপরিদর্শক আশরাফ সিদ্দিক বাদী হয়ে ২০২২ সালের ৮ জুন মামলাটি দায়ের করেন। মামলার নথি থেকে বিএম ডিপোর মালিকের নাম বাদ দেওয়া হয়। যা সে সময় সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।

মামলার বিবৃতিতে পুলিশ উল্লেখ করেছে, অভিযুক্তরা প্রয়োজনীয় এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপ না নিয়ে ডিপোতে বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ সংরক্ষণ করেছিল। এতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের কারণে মৃত্যু ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তদের অবহেলায় জানমাল ও সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে।

ঘটনার পর চট্টগ্রামের বিভাগীয় অফিসের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি ৩০০ পৃষ্ঠা সংযুক্ত করে তাদের ১৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে এ জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে ২০টি সুপারিশ করেছিল। তদন্ত কমিটি সরকারের বিভিন্ন পক্ষের অবহেলা এবং মালিকপক্ষের অবহেলাকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করেছিল।

ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৫ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়সহ আটটি বিভাগে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেন।

তদন্ত কমিটি প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে ডিসিআইও (ডিজি কার্গো ইন্সপেকশন অফিস) পুনার্গ করার প্রস্তাব করেছে এবং এনওসি ইস্যু করার আগে মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শন করতে বলেছে।

এ ছাড়া পণ্য মোড়ক ও পরিবহনের সময় রপ্তানিকারক কর্তৃক প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ, চট্টগ্রাম বন্দরের অফ-ডক অন্তর্ভুক্ত করা এবং মনিটরিং কমিটির নিয়মিত সভা করা করা ও আইএমডিজি কোড অনুসরণ করে অগ্নিনির্বাপকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করার কথা বলেছে।

বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স বাতিল করা হবে না জানতে চেয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর বিএম ডিপো কন্টেইনার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে একটি নোটিশ পাঠায়।

 

Comments

The Daily Star  | English
health reform

Priorities for Bangladesh’s health sector

Crucial steps are needed in the health sector for lasting change.

10h ago