‘পাথরভাঙা কাজে ঝুঁকি বেশি, মজুরি কম’
লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দরে ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক পাথরভাঙা ও পাথর লোড-আনলোড কাজে জড়িত। এ কাজে রয়েছে শ্রমিকদের মৃত্যুর ঝুঁকিও।
শ্রমিকদের দাবি, তারা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। এ অঞ্চলে তেমন কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় শ্রমিকরা কম মজুরিতেই পাথরভাঙার কাজ করেন।
শ্রমিকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাথরভাঙার কাজ করে মজুরি পান ৪০০ টাকা। মজুরির এ টাকা দিয়ে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। সন্তানদের পড়াশুনার খরচ যোগাতে পারেন না। পরিবারের লোকজনের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে পারেন না। কোনোদিন কাজ বন্ধ থাকলে সেদিন থাকতে হয় অনাহারে-অর্ধারে। সংসার চালাতে অন্যের কাছে ধার করতে হয়। পাথরভাঙার কাজে মজুরি ছাড়া বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা পান না।
সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন সূত্র জানায়, লালমনিরহাটের পাটিগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে ২৭ হাজার আর কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দরে ১৩ হাজার শ্রমিক পাথরভাঙা ও পাথর লোড-আনলোড কাজ করছেন। তাদের মধ্যে নারী শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ২০ শতাংশ।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথরভাঙা শ্রমিক সোহরাব হোসেন (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, '১০ বছরধরে পাথরভাঙা শ্রমিকের কাজ করছি। এ কাজ করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। মরণব্যাধি সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু মজুরি খুবই কম। এ অঞ্চলে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলে পাথরভাঙা শ্রমিকের কাজ করতাম না। দিনভর কঠোর পরিশ্রম করে মজুরি পাই ৪০০ টাকা। মাঝে মাঝে ওষুধ কিনতে অনেক টাকা চলে যায়।'
বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথরভাঙা শ্রমিক নজরুল ইসলাম (৪৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেশিনে পাথরভাঙার কারণে পাথরের ধূলা নাক-মুখ দিয়ে ভেতরে ঢুকে ফুসফুসে জমে যায়। এ কারণে পাথরভাঙা শ্রমিকরা সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হন। আমাদের অনেক সহকর্মী সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখনো অনেক শ্রমিক এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। মেশিন মালিকরা কখনোই আমাদেরকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেন না। কোনো শ্রমিক ন্যায্য মজুরি দাবি করলে তাকে আর কাজে নেওয়া হয় না। এই ভয়ে আমরা ন্যায্য মজুরির দাবিও করতে পারছি না।'
বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথরভাঙা মেশিন মালিক নুর ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ অঞ্চলে চাহিদার চেয়ে শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় শ্রমিকরা কম মজুরিতেই পাথরভাঙার কাজ করেন। দুই হাজারের বেশি পাথরভাঙার মেশিনে শ্রমিকরা কাজ করেন। প্রত্যেক মেশিনে ১২ থেকে ২৫ জন শ্রমিক কাজের সুযোগ পান। অন্যান্য মেশিন মালিকরা শ্রমিক মজুরি বাড়ালে আমিও শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি করবো।'
লালমনিরহাট সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাথরভাঙা শ্রমিকদের একত্রিত করতে কাজ করা হচ্ছে। তাদেরকে একটি প্লাটফর্মে এনে শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দেওয়া হবে মেশিন মালিকদের। এতে দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। পাথরভাঙা শ্রমিকদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০০ টাকা মজুরি দাবি করা হবে।'
Comments