নতুন নেতারা যে ৫ ভুল করে থাকেন

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

ব্যক্তিজীবনে বা কর্মজীবনে নেতৃত্ব দিতে পারা একটি অন্যতম গুণ। একজন নেতাই পারেন প্রতিষ্ঠান বা দলকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে। তবে নেতারও ভুল হতে পারে এবং নেতার ভুলে পুরো দলেরই ভুল পথে পরিচালিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে নতুন নেতাদের ভুলের আশঙ্কা বেশি।

অনভিজ্ঞতাই এ আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করলে আর সেসব ভুল হবে না এবং নিজেকে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির অবস্থানে রাখতে সুবিধা হবে। এক্ষেত্রে কী করবেন তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ– তেমনি কী করবেন না অথবা কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চললে ভালো হবে, সেটিও মাথায় রাখা দরকার।

চলুন জেনে নিই নতুন নেতারা কোন ভুলগুলো বেশি করে থাকেন-

যোগাযোগহীনতা

দলের সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না হোক, অন্তত একটা ভালো পরিচয় গড়ে না তুলে প্রথমেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার দরকার নেই। এতে করে কাজও খুব একটা ভালো হয় না। কারণ প্রথমে প্রয়োজন দলের সবার মধ্যে বোঝাপড়া।

আরেকটি বিষয়ও খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমেই অনুমান করে নেওয়া যাবে না যে সবাই সবকিছু জানে। ধরে নিতে হবে, কেউ কিছু জানে না। সবাইকে প্রাথমিক পর্যায় থেকে কাজ সম্পর্কে জানাতে হবে। এতে করে দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ কম থাকে।

দলনেতাকে কখনোই যোগাযোগে পিছপা হওয়া চলবে না। কারো সঙ্গে কথা বলতে ব্যক্তিগত সংশয়ে ভোগা বা লাজুক স্বভাব রাখা যাবে না। তাকে সবসময় প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে হবে।

সফল যোগাযোগের আরেকটি অংশ হচ্ছে নিয়মিত আলোচনায় বসা। কার কোন বিষয়টি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, কোথায় আরও ভালো করা যায়, কার কোন কাজটি আরেকটু নিখুঁত করা যেত– প্রশ্নোত্তরের এই পর্বগুলো দলগত যোগাযোগের অন্যতম সুস্থ চর্চা।

অতি আত্মবিশ্বাস

আত্মবিশ্বাস অত্যন্ত ভালো একটি গুণ হলেও অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী হওয়াকে দোষের তালিকাতেই ফেলা হয়। আসলে পরিমিত মাত্রা ছাড়ালে যেকোনো ভালো বিষয়ই তার গুরুত্ব হারায়। এক্ষেত্রেও তা-ই। একজন নেতাকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো বিষয়ে নিশ্চিত না হয়েই 'অতি নিশ্চিত' হওয়ার মাধ্যমে যাতে কোনো ভুল পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।

তাছাড়া অতি আত্মবিশ্বাস মানুষের চরিত্রে এক ধরনের রূঢ় ভাব নিয়ে আসে, যা কিনা দলের অন্যান্য সদস্যের জন্য ভালো নয়। এতে করে তারা গুটিয়ে যাবেন, নিজেদের মতামত ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারবেন না এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেও বাজে প্রভাব পড়বে। দলনেতা হিসেবে সবার খেয়াল রাখা দরকার, সেটা নিজেকে শুধরে নিয়ে হলেও।

পরিবর্তনকে ভয় পাওয়া

উন্নতির সংজ্ঞা ব্যক্তি ও পরিস্থিতিভেদে আলাদা হতে পারে। তবে ভিন্ন ও নতুন মতামত গ্রহণের মানসিকতা থাকাটাকেই উন্নত মনোভাবের নির্দেশক ধরা হয়। একটি দলের হাল যিনি ধরেন, তার উপর দায়িত্বটা সবচেয়ে বেশি হলেও সেই দলের সবরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার সবটুকু ভার তার উপর নয়। তিনি মূলত একজন দিক-নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেন। অন্যদের ধারণা ও মতামতের একটা সমন্বয় ঘটিয়ে সর্বোচ্চ ভালো বিকল্পটি বেছে নেন।

নেতা হিসেবে ইতিবাচক পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে জানতে হবে। নিজের ব্যক্তিত্বকেও দিন দিন সমৃদ্ধ করতে হবে, যাতে এই অবস্থানের জন্য নিজের যোগ্যতা ধরে রাখা যায়। এছাড়া দলগত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে সচেতনতার সঙ্গে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেক নতুন নেতাই এখানে ভুল করে থাকেন।

আবেগকে গুরুত্ব না দেওয়া

এই বিষয়টি সাধারণত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে বেশি দেখা যায়। নতুন নেতারা অনেক সময় মনে করেন, আবেগের গুরুত্ব নেই কাজের ক্ষেত্রে। কিন্তু দলের সদস্যদের আবেগকে একেবারেই দূরে সরিয়ে শুধু সংখ্যাগত উন্নতিতে মন না দিয়ে একজন ভালো নেতা সবার আবেগকে আমলে নেন। কারণ তার কাছে স্প্রেডশিটের নাম্বারের পাশাপাশি সহকর্মীর ভালো থাকাটাও জরুরি। দুটোর মধ্যে ভারসাম্য এনে তারপর এগিয়ে যাওয়াটাই যে আসল সমৃদ্ধি, এটি তিনি ভালো করেই জানেন।

কারণ দিনশেষে আমরা সবাই মানুষ আর আবেগকে বাদ দিয়ে কোনো ধরনের সাফল্য পাওয়া সম্ভব হয় না। বরং যুক্তির সঙ্গে আবেগের পরিমিত সমন্বয়ই পারে একজন ব্যক্তি, সেইসঙ্গে একটি দলকেও সফল করতে।

ব্যক্তিস্বার্থ অন্বেষণ

'দল' শব্দটির অর্থ যেন প্রকৃত অর্থেই দল হয়, তা সে কোনো শিক্ষার্থী বা সামাজিক সংগঠন হোক বা একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনার টিম। এক্ষেত্রে যাতে ব্যক্তিগত লাভের সুযোগ না খোঁজা হয় এবং দিনশেষে দলের ভালোটাকেই সবার আগে রাখা হয়– এটি একজন ভালো নেতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

সেক্ষেত্রে কিছুটা নিঃস্বার্থ হতে পারা ভালো, তবে নিজের স্বার্থকে একেবারে বলি দেয়ার কিছু নেই।বরং দলের স্বার্থে নিজের উপকারটাও খুঁজে নিতে পারাটাই বিচক্ষণের কাজ হবে। তবেই ভবিষ্যতে নিজেকে একজন ভালো দলনেতা হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।

 

Comments