৫২ বছরে প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতিকে বঙ্গভবন থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায়

বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে শপথ গ্রহণ শেষে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ছবি: পিআইডি

রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে আজ সোমবার বিদায় জানালো বঙ্গভবন। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে রাষ্ট্রীয় বিদায় জানালো বঙ্গভবন।

আবদুল হামিদ আজ নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। তিনি বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি যিনি টানা ২ মেয়াদে ১০ বছর ৪১ দিন রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

বাংলাদেশের গত ৫২ বছরের ইতিহাসে এর আগে বঙ্গভবনে এমন কোনো বিদায় অনুষ্ঠান হয়নি। কারণ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আগে এ ধরনের অনুষ্ঠান করার মতো মসৃণ পরিবেশ তৈরি হয়নি।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তখন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন।

পরে ২০১৩ সালের এপ্রিলে তিনি ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।

আজ সকাল ১১টায় বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে শপথ নেন নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে তিনি তার গুলশানের বাসায় যান।

সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল দিয়ে গুলশান থেকে রাত ৮টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে পরদিন নতুন রাষ্ট্রপতিকে 'গার্ড অব অনার' দেওয়া হবে।

এদিকে শপথ অনুষ্ঠানের পরপরই বিদায়ী রাষ্ট্রপতি হামিদ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিকুঞ্জে নিজ বাসভবনে চলে যান।

আবদুল হামিদকে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) তত্ত্বাবধানে একটি মোটর শোভাযাত্রায় তার নিকুঞ্জের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) একটি চৌকস দল বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে 'গার্ড অব অনার' প্রদান করে।

বিদায় অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি ব্যান্ড দল অংশ নেয়।

দুই দলে বিভক্ত হয়ে বঙ্গভবনের কর্মকর্তারা গাড়ির দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বঙ্গভবনের প্রধান ফটক থেকে বাহিরের গেটের ফোয়ারা পর্যন্ত খোলা জিপে ফুলের পাপড়ি ছুঁড়ে আবদুল হামিদকে বিদায় জানান তারা।

সেখান থেকে দুপুর পৌনে ২টার দিকে তাকে শেষবারের মতো মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে নিকুঞ্জের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।

মো. আবদুল হামিদ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রফ্রন্ট ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের শেষ দিকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

আবদুল হামিদ নবম জাতীয় সংসদে স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য আবদুল হামিদ এর আগে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ৭ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আজ দুপুরের পর থেকে আবদুল হামিদ ও তার পরিবার তাদের নাগরিক জীবনে ফিরে গেলেন।

এটিই হতে পারে পুরো মোটর শোভাযাত্রায় হামিদের শেষ যাত্রা এবং এর পর তাকে আবার ট্রাফিক লাইট এবং মোড়ে থামার অভ্যাস করতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

World leaders split as ICC issues arrest warrant for Netanyahu

The court also issued warrants for Israel's former defence minister as well as Hamas's military chief Mohammed Deif

1h ago